BRAKING NEWS

কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপির তোপের মুখে নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ এপ্রিল৷৷ লোকসভা ভোটকে ঘিরে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএমের তোপের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন৷ কংগ্রেস ও সিপিএমের অভিযোগ স্ক্রুটিনিতে তাঁদের ডাকা হয়নি৷ নয়তো ভোটে ব্যাপক কারচুপি তখনই ধরা পড়ে যেত৷ বিজেপির কথায়, নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো সত্বেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷ উল্টো, ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে ঘন ঘন ভোল বদল হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের৷ তাতে মনে হচ্ছে, ভোট নিয়ে শাসক-বিরোধী উভয়ের সম্মিলিত তোপের মুখে কার্য্যত দিশেহারা নির্বাচন কমিশন৷

ভোট প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পর স্ক্রুটিনিতে ডাকা হয়নি বিরোধীদের৷ শনিবার এই অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট৷ কংগ্রেসের দাবি, স্ক্রুটিনিতে উপস্থিত থাকার জন্য পশ্চিম আসনের রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে কোন আমন্ত্রণ পাইনি৷ একইভাবে বামেদের দাবি, সময়মতো তাঁদের খবর দেননি রিটার্নিং অফিসার৷ ফলে, তাঁরা স্ক্রুটিনিতে অংশ নিতে পারেননি৷ তবে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক ও পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসার৷

শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি তাপস দে জানিয়েছেন, পশ্চিম আসনে নির্বাচনের পর স্ক্রুটিনির জন্য তাঁদের ডাকা হয়নি৷ ১২ ও ১৩ এপ্রিল স্ক্রুটিনি হবে তা জানা থাকলে কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা তাতে অবশ্যই অংশ নিতেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলছেন৷ প্রথমে তিনি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু, এখন তিনি নিজের অবস্থান বদল করেছেন৷ ভোটে কারচুপির অভিযোগ তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন৷ শ্রীদে’র কথায়, স্ক্রুটিনিতে বিরোধীদের ডাকা হলে ভোটে কারচুপির বিষয়টি তখনই ধরা পড়ে যেত৷ তিনি বলেন, দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে এবিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল নালিশ জানিয়েছে৷

এদিকে, একই অভিযোগ এনেছে সিপিএম৷ পশ্চিম আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী সাংসদ শঙ্কর প্রসাদ দত্ত আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সময় মতো স্ক্রুটিনির খবর দেওয়া হয়নি৷ তাই, বামফ্রন্টের তরফে কেউ স্ক্রুটিনিতে যেতে পারেননি৷ তাঁরও দাবি, স্ক্রুটিনিতে সময় মতো ডাকা হলে ভোট কারচুপির সমস্ত বিষয় ধরা পড়ে যেত৷

কিন্তু, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের এই অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরনিকান্তি এবং পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসার ড সন্দীপ এন মাহাত্মে৷ শ্রীরাম তরনিকান্তি বলেন, পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসার সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে স্ক্রুটিনির সময় উপস্থিত থাকার জন্য খবর পাঠিয়েছিলেন৷ পশ্চিম আসনে রিটার্নিং অফিসার বলেন, কংগ্রেস ও সিপিএমের প্রতিনিধিরা স্ক্রুটিনিতে উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁদের সময় মতোই নোটিশ পাঠানো হয়েছিল৷ এমনকি তাঁরা নোটিশ পেয়েছেন তার প্রমাণও আমাদের কাছে রয়েছে৷ তাই, রাজনৈতিক দলগুলি যেমন খুশী দাবি করলেই তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ ভোট প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি রাখা হচ্ছে না, দাবি করেন তিনি৷

এদিকে, পশ্চিম আসনে ভোট প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে এখন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক ঘন ঘন বয়ান পাল্টাচ্ছেন৷ তাতে স্পষ্ট, তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন৷ আক্ষেপের সুরে একথা বলেন ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য৷ তাঁর কথায়, মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের জন্যই বিরোধীরা ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছেন৷ তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে নানা ফন্দি এঁটেছেন৷

নবেন্দু বলেন, ভোট প্রক্রিয়ায় ঘন ঘন পরিস্থিতি বদল হচ্ছে৷ নির্বাচন নিয়ে বিরোধীরা বহু অভিযোগ তুলেছেন৷ নির্বাচন কমিশন তা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন৷ কিন্তু, থানায় ঢুকে পুলিশের সামনে এক যুবককে মারধোরের ঘটনায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে কমিশন এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷ সাথে তিনি যোগ করেন, ওইদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সাথে এটিটিএফ সুপ্রিমো রঞ্জিৎ দেববর্মাও ছিলেন৷ তাঁর কথায়, নির্বাচন কমিশনে ভিডিও ফুটেজ সহ অভিযোগ জমা দেওয়া সত্বেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং রঞ্জিৎ দেববর্মার বিরুদ্ধে এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি কমিশন৷ শুধু তাই নয়, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হওয়ার পেছনে বিরোধীদের চক্রান্ত রয়েছে, তাও কমিশনে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে জানানো হয়েছে৷ কিন্তু, কমিশন এসমস্ত বিষয় আমল দিচ্ছে না, অভিযোগ করেন নবেন্দু৷

তিনি বলেন, পশ্চিম আসনে ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে তা খোদ মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকই ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু, এখন তিনি ঘন ঘন বয়ান পাল্টাচ্ছেন৷ তাঁর কটাক্ষ, ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন৷ তাই, তিনি ক্রমাগত বয়ান পাল্টাচ্ছেন৷ সাথে নবেন্দু যোগ করেন, মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের জন্যই বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধে নানা ফন্দি এঁটে চলেছেন৷

নবেন্দু দাবি জানান, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণ এবং এটিটিএফ বৈরী দলের সুপ্রিমো রঞ্জিৎ দেববর্মার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে৷ পাশাপাশি, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার মধ্য দিয়ে ত্রিপুরা পূর্ব আসনে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *