BRAKING NEWS

আগরতলা প্রেসক্লাবে মিট দ্য প্রেসে সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে তোপ বিজন ধরের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ মার্চ৷৷ এবারের লোকসভা নির্বাচন স্বাধীনতার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বামফ্রন্ট ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক বিজন ধর৷ রবিবার আগরতলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজন বাবু এই অভিমত ব্যক্ত করেন৷ কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার থাকার সুবাদে গণতন্ত্র ভুলুন্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ জনগণ এর যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত৷ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দিলে দুটি লোকসভা আসনেই বামফ্রন্ট প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে দাবি করেন বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধর৷ এদিন তিনি সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে রীতিমতো তোপ দেগেছেন৷ অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম শাসক দলের কেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷ শুরু হয় বাদানুবাদ৷


আগরতলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটির আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ মিট দ্য প্রেস এর শুরুতেই বিজন বাবু আগরতলা প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটির বৈধতা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ণ ছুড়ে দেন৷ পূর্বতন কমিটিকে জোর করে তাড়িয়ে দিয়ে বর্তমান পরিচালন কমিটি দায়িত্বভার কেড়ে নিয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন৷ তিনি বলেন, যদিও বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে৷ শুধু আগরতলা প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেননি বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন বাবু, তিনি তোপ দেগেছেন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেও৷ অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম শাসক দলের কেনা বলে তিনি মন্তব্য ছুড়ে দেন৷ এ নিয়ে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে রীতিমতো বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ চলে বাদানুবাদ৷ সৌজন্যতাবোধ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ণ৷ আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সুবল কুমার দে অবশ্য মিট দ্য প্রেসে বিজনবাবুর অভিযোগ খন্ডন করার চেষ্টা করেন৷ তিনি বলেন, পূর্বতন কমিটিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়নি৷ নিয়ম মেনেই নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে৷


মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বিজন বাবু বলেন, বিজেপির শাসনাধীনকালে গোটা দেশ ও রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে৷ সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রভাব আমাদের রাজ্যেও আছড়ে পড়েছে৷ সংবিধানের মৌলিক ভিত গুলি, যেমন গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক দিক থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো, সামাজিক সাম্য ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন৷ এগুলি টিকে থাকবে কিনা তা নির্ধারণ করতেই এবারের লোকসভা নির্বাচন৷ বিজেপি সরকারের আমলে এই চারটি বুনিয়াদ স্তব্ধ ও আক্রমণের মুখে বলে মন্তব্য করেন বিজন বাবু৷ কেন্দ্রে সরকার গড়তে নরেন্দ্র মোদি আবার জয়ী হলে হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা নিয়ে হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ এর ফলে দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে না, হিন্দুত্ববাদী চিন্তাধারা নিয়ে হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করা হবে৷ দেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে৷ ভারতবর্ষ ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত হবে৷ সে কারণেই বামপন্থীরা বিজেপি সরকারকে হঠাতে চাইছে৷ বামপন্থীরা চায় সংসদে শক্তি বাড়াতে এবং বিকল্প ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে৷


স্বাধীনতার পর এই প্রথম ভারতের সবচেয়ে কঠিন লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে৷ কারণ বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের রাজত্বে ভারতের সংবিধানের মূল চারটি স্তম্ভ সচল থাকবে কিনা, সারা দেশের কাছে এ মুহূর্তে তা লক্ষ টাকার প্রশ্ণ৷ এবারের নির্বাচন-যুদ্ধের পর বিজেপি তথা মোদী যদি ক্ষমতায় আসেন তা-হলে ভারতকে এক বিশেষ ধর্মাবলম্বী রাষ্ট্রে পরিবর্তন করা হবে৷ এর প্রক্রিয়া বর্তমানে শুরু হয়ে গেছে৷ণ্ড্র’ রবিবার লোকসভা নির্বাচন বিষয়ে কথা বলতে আগরতলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই মতামত ব্যক্ত করেন ত্রিপুরা রাজ্য বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজন ধর৷


বিজুনবাবু বলেন, তাঁরা নাকি এমনও শুনছেন, ২০২৪ সালের পর ভারতে আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না৷ এক দেশ এক ধর্ম, অর্থাৎ হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করা হবে ভারতকে৷ এর চেষ্টাও শুরু করেছে বিজেপি৷ তাই সর্বাবস্থায় আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-কে মসনদ থেকে দূরে রাখতে দেশ তথা ত্রিপুরার জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি৷ তিনি বলেন, মোদী সরকারকে এবারের নির্বাচনে ক্ষমতা থেকে হটাতেই হবে৷ এজন্য বিকল্প ধর্মনিরপেক্ষ জোট গঠনের আহ্বান জানাচ্ছে বামফ্রন্ট৷
কংগ্রসের মতো তিনিও বলেন, মোদী সরকার যে-সকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তা তারা পূরণ করতে পারেনি৷ একইভাবে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে-সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তারাও সে-সবের কিছুই পূরণ করা হয়নি৷ রাজ্যের জনতা তাদের ধাপ্পাবাজি বুঝে গিয়েছেন৷ কিন্তু মানুষ যাতে এ-সবের প্রতিবাদ না করতে পারেন, রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ যাতে করতে না পারেন সেজন্য জনসাধারণকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে৷ বিরোধীদের ওপর আক্রমণের ঘটনাও এরা ঘটাচ্ছে, অভিযোগ করেন বিজন ধর৷


তিনি বলেন, সে যা-ই হোক, ত্রিপুরায় এখনও বামফ্রন্টই বিকল্প শক্তি৷ বিজেপি এবং কংগ্রেস, দুই দলই বুজর্োয়া শক্তিকে সমর্থন করে৷ তবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ণে কংগ্রেসকে বিজেপি-র মতো দূরে রাখে না বামফ্রন্ট৷ তাই কংগ্রেস সমর্থকদের প্রতি বামেরা আহ্বান রাখছে, তাঁরাও বিজেপিকে হটাতে অবিজেপি প্রার্থীদের যেন ভোট দেন৷
সারা দেশে এ মুহূর্তে বামফ্রন্টের মোট ১৯ জন সাংসদ রয়েছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁদের সাংসদ সংখ্যা বাড়বে না কমবে, সাংবাদিকদের এই প্রশ্ণের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান বাম নেতা বিজন ধর৷ তাঁর পালটা অভিযোগ, বিজেপি ত্রিপুরার ক্ষমতায় আসার পর আগরতলা প্রেস ক্লাব জোর করে জবরদখল করেছে৷ তাঁর এই অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেন প্রেস ক্লাবের বর্তমান পরিচালন কমিটির সদস্যরা৷ তাঁরা তাঁকে জানিয়ে দেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ আগের কমিটি দীর্ঘ বছর দায়িত্বে ছিল৷ কিন্তু সঠিক হিসাব দিতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *