কলকাতা, ২১ সেপ্টেম্বর (হি.স.): প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল অধীর চৌধুরীকে। পরিবর্তে নতুন সভাপতি হচ্ছেন সোমেন মিত্র। শুক্রবার আচমকা এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির তরফে প্রেস বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন কংগ্রেস জেনারেল সেক্রেটারি অশোক গেহলট। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও,প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করা হল অধীর চৌধুরীকে। অন্যদিকে, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে সমন্বয় কমিটির সভাপতি হলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। এআইসিসি-র তরফে ৪ কার্যকরী সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তালিকায় আছেন শঙ্কর মালাকার, নেপাল মাহাতো, আবু হাসেম খান, দীপা দাশমুন্সি। ম্যানিফেস্টো কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়৷ দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সম্মতিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেস ক্রমশ ক্ষমতা হারাচ্ছিল বলে বার বার অভিযোগ পৌঁছচ্ছিল হাইকমান্ডের কাছে। অধীর জমানায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা। একার সিদ্ধান্তে তীব্র তৃণমূল বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছেন অধীর চৌধুরী। দলীয় নেতা, কর্মী, বিধায়কদের দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানও এড়াতে পারছিলেন না অধীর। এমনকী মৌসম নুরের মতো সাংসদও কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তার সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে বিজেপিতে যাওয়ার হিড়িক। সব মিলিয়ে অধীরকে নিয়ে বেশ অস্বস্তিতেই ছিলেন রাহুল গান্ধী। তাই মেয়াদ শেষের আগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল।
এদিকে, দীর্ঘ রাজনৈতিক নির্বাসনের পর ফের প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসলেন সোমেন মিত্র। সোমেন মিত্র এর আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত। তিনি সভাপতি থাকাকালীনই তার সঙ্গে বিরোধের জেরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে সোমেন কংগ্রেস ছেড়ে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস বলে নতুন দল গড়েন। ২০০৯ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এই বছর ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এই বছর সোমেনের ছেড়ে যাওয়া শিয়ালদহ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন সোমেনেরই স্ত্রী শিখা। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলের হয়ে জেতেন তিনি। তবে কিছু দিনের মধ্যেই প্রকাশ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন শিখা। এই পর্বে সোমেন মূলত নীরব থাকার লাইন নেন।
২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হন সোমেনের স্ত্রী শিখা। তবে তৃণমূলের সঙ্গে সোমেনের সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফের কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। এবার তাঁর কাঁধে এল ধুঁকতে থাকা প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব। শেষ পর্যন্ত শিয়ালদহর ‘ছোড়দা’কতটা সফল হন সেদিকে নজর এখন রাজনৈতিক মহলের।