BRAKING NEWS

কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ

আমাদের সেই দস্যি ছেলের মাথায় কত না প্রশ্ণ ঘুরে৷ তার কৌতুহলের শেষ নেই৷ ডানপিটে এ ছেলের বিচরণ সর্বত্র৷ সে হাট বাজার মাঠে ময়দানে ঘূরে৷ ঘুরে রাজপথ এবং অলি গলিতে৷ এ বয়সে সে কম দেখছে না৷ সে যেন জগতের পাঠশালার ছাত্র৷ তাইতো সে গর্বের সাথে বলে- বিশ্বজুড়ে পাঠশালা মোর৷ সবার আমি ছাত্র৷ এবং এ পাঠশালায় যে অনেক কিছু শিখছে, অনেক কিছু জানছে৷ এ অল্প বয়সেই সে বুঝতে পেরেছে যে- জানার কোন শেষ নেই৷ এমন জানতে গিয়ে ইদানিং তার মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে৷ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ এবং আমাদের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত৷ তা দস্যি ছেলে মাথা থেকে বিষয়টি ঝেড়ে ফেলতে পারছে না৷

সে দেখছে সমাজের সর্বস্তরে একটা শ্রেণীর মানুষের দাপট বেশি৷ তারা নিজেরা নিজেদেরকে ভারিক্কি করে তুলেছে৷ তাদের চাল চালন অন্য দশজন মানুষ থেকে যেন আলাদা৷ সমাজের দুটি ধারায় এসব লোককে দেখা যায়৷ একটি হল যারা আইন পেশায় রয়েছেন সেই সব আইনজীবী৷ অন্যটি হল শিল্প সাহিত্য সংসৃকতির সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা৷ দুই ধারার লোকদের পেশাকেও পার্থক্য রয়েছে৷ একটা অংশের মানুষের পরিধানে থাকে কালো পেল্ট, কালো কোট এবং কোট ট্রাই৷ তাদের মুখে আইনের  কচকচানি থাকে বেশি৷ আর একটা ধারার মানুষের পরিধানে থাকে পায়জামা পাঞ্জাবী কাঁধে ঝোলা৷ তারা নিজেদেরকে সমাজের কেউ কেটা ভাবতে বেশি ভালবাসেন৷ তাদের অধিকাংশের ভাবখানা এমন যে, তারা জ্ঞানের ভারে ন্যুব্জ৷ দেশ বিদেশের রাজনীতি ও শিল্প সংসৃকতি তাদের হাতের মুঠোয়৷ তারা সমাজকে পথ দেখাচ্ছে৷ সমাজে তারা ক্রিম হিসাবে নিজেদেরকে ভাবেন৷

সমাজের এ দুধারায় মানুষদেরকে নিয়ে দস্যি ছেলের ভাবনার শেষ নেই৷ কেন না, সে তার বুদ্ধি দিয়ে বুঝছে যে, এ দুই ধারার লোকে নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী বলে  ভাবে৷ তাদের প্রতি দস্যি ছেলের যেমন শ্রদ্ধা রয়েছে তেমনই বুদ্ধিজীবী বিষয়ে তার ঘোর আপত্তি ও রয়েছে৷ তার মতে, সমাজে কে বুদ্ধিজীবী নয়? সকলেইতো বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ কারে৷ যে চাষি সেও বুদ্ধি খাটিয়ে জমি চাষ করে৷ বুদ্ধি খাটিয়ে সে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক ফসল ফলাতে চায়৷ যে গৃহ পরিচারিকা সেও বুদ্ধি খাটিয়ে ঘরের প্রতিটি কাজ করে৷ মোটের উপর সকলে তাদের কাজে বুদ্ধি প্রয়োগ করছে৷ যে কামার কুমার তারাও কিন্তু বুদ্ধিতে কম নয়৷ সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ বুদ্ধি ব্যবহার করে কাজ করছে৷ অথচ তারা বুদ্ধিজীবী হতে পারলো না৷ অথচ বুদ্ধিজীবী হলেন আইনজীবী আর শিল্প সাহিত্য জগতের মানুষরা৷ আসলে এ দুই শ্রেণীর মানুষ নিজেদেরকে জাতে তোলার জন্য বুদ্ধিজীবী শব্দটি ব্যবহার করছেন বলে দস্যি ছেলের অভিমত৷ এনিয়ে দস্যি ছেলের ভাবনা হল- বাংলা অভিধান থেকে এ বুদ্ধিজীবী শব্দটি বাদ দিলে কি এমন ক্ষতি হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *