BRAKING NEWS

সিপিএম দেশদ্রোহী এবং বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতি ইস্যুতে বিরোধীরা ধরাশায়ী বিধানসভায়, নিয়ম মনে করালেন আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ জুন৷৷ নিয়মের ব্যাখ্যা দিয়ে বিধানসভায় বিরোধীদের কার্য্যত ধরাশায়ী করলেন আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ ফলে, সিপিএমকে দেশদ্রোহী বলা এবং বিরোধী দলনেতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণের জন্য বিরোধীরা বৃহস্পতিবার কোন আওয়াজ করতে পারেননি৷ অধ্যক্ষেরও এবিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানাতে হয়নি৷ আইনমন্ত্রীর সাফ কথা, বিরোধী দলনেতা অনুপস্থিত থাকলে নিয়ম অনুসারে তিনি অধ্যক্ষকে তা জানাতে বাধ্য৷ তেমনি, বিধানসভার সদস্যরাও কোন কোন শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না তাও স্পষ্টভাবে গাইডবুকে লেখা রয়েছে৷ দেশদ্রোহী শব্দ প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত সমীর দেব সরকার বহুবার ব্যবহার করেছেন৷ এই শব্দ ব্যবহার করা যাবে না এমন কোথাও উল্লেখ নেই৷

এদিন আইনমন্ত্রী বলেন, সুস্থভাবে বিধানসভা অধিবেশন পরিচালনা হোক আমরা সবাই তা চাইছি৷ বুধবার বিধায়ক দীলিপ দাস বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতি নিয়ে অধ্যক্ষকে তা জানানো হয়েছিল কিনা সেবিষয়ে প্রশ্ণ তুলেছিলেন৷ তখন প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বিধায়ক রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ বিরোধী দলনেতার পক্ষে সওয়াল করে বলেছিলেন অনুপস্থিতি নিয়ে অধ্যক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক নয়৷ এনিয়ে বুধবার বিধানসভায় বিরোধীরা প্রচন্ড হৈ হট্টগোল করেছিলেন৷ কারণ, ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা বিরোধী দলনেতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন৷ পাশাপাশি সিপিএমকে দেশদ্রোহী বলেও মন্তব্য করেছিলেন৷ ফলে, গতকাল বিরোধীরা বিধানসভায় প্রথমার্ধে ওয়াকআউট করেছিলেন৷ দ্বিতীয়ার্ধেও তাঁরা এই ইস্যুতে অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন এবং দেশদ্রোহী শব্দটি রুলস অব প্রসিডিংস থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন৷

এদিন আইনমন্ত্রী এবিষয়ে বিধানসভার নিয়মের ব্যাখ্যা তুলে ধরে বিরোধীদের মোক্ষম জবাব দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, তিনি বিরোধীদের বিধানসভার নিয়মগুলিও মনে করিয়ে দিয়েছেন৷ আইনমন্ত্রীর কথায়, বিরোধী দলনেতার পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গরীমাপূর্ণ৷ এই পদের দায়িত্বও অনেক৷ মুখ্যমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রিসভার কোন সদস্য বিধানসভায় অনুপস্থিত থাকলে অধ্যক্ষ কিংবা মুখ্যমন্ত্রীকে তা জানানো বাধ্যতামূলক৷ কারণ, তাঁর অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে হয়৷ তেমনি বিরোধী দলনেতাও অনুপস্থিত থাকলে তা অধ্যক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক৷ এমনকি তাঁর অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলনেতার পদ কে সামলাবেন তাও বিধানসভাকে জানানো বাধ্যতামূলক৷

অতীতের উদাহরণ তুলে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে ২৫ আগষ্ট বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন বিধানসভায় অনুপস্থিত ছিলাম৷ সেই সময় অধ্যক্ষকে অনুপস্থিতির বিষয়ে জানিয়েছিলাম এবং দীপক রায় বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব সামলাবেন তাও অধ্যক্ষকে বলেছিলাম৷ ঠিক তেমনি ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সালে বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন সময়ে সুদীপ রায় বর্মণও অধ্যক্ষকে তাঁর অনুপস্থিতির আগাম খবর দিয়েছিলেন৷

এদিন আইনমন্ত্রী প্রাক্তন অধ্যক্ষকে নিশানা করে বলেন, বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী অনুপস্থিত থাকার ক্ষেত্রে আবেদন জানানো বাধ্যতামূলক৷ তাঁর কটাক্ষ, নিয়ম মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই বিধানসভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছি৷ তাঁর কথায়, নিয়ম অনুযায়ী বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতিতে কে দায়িত্ব সামলাবেন তা জানানোও বাধ্যতামূলক৷

এদিন আইনমন্ত্রী বিধানসভায় কোন কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে তাও গাইডবুকের উদ্বৃতি দিয়ে বিধানসভায় তুলে ধরেছেন৷ তিনি জানান, দেশদ্রোহী শব্দ ব্যবহার করা যাবে না এমন কোথাও উল্লেখ নেই৷ তবে, কোন কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে৷ তিনি বিরোধীদের মনে করিয়ে দেন, ১ মার্চ ২০০৪ সালে বিধানসভা অধিবেশনে প্রাক্তন মুখ্য সচেতক প্রয়াত সমীর দেব সরকার একাধিকবার দেশদ্রোহী শব্দ ব্যবহার করেছেন৷ শুধু তাই নয়, পুরনো রেকর্ড ঘাটলে এমন বহু প্রমাণ মিলবে যেখানে দেশদ্রোহী শব্দ বিধানসভায় সদস্যরা ব্যবহার করেছেন৷ আইনমন্ত্রীর সাফ কথা, দেশদ্রোহী শব্দটি বিতর্কিত, কিন্তু তা ব্যবহার করা যাবে না নিয়মে কোথাও উল্লেখ নেই৷

বিরোধী দলনেতার অনুপস্থিতি এবং সিপিএমকে দেশদ্রোহী বলা নিয়ে বিধানসভায় বিরোধীরা যেভাবে  বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন এবং ট্রেজারি বেঞ্চকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন, আইনমন্ত্রী কৌশলী জবাব তাঁদের মুখে রীতিমতো তালা লাগিয়ে দিয়েছে৷ ফলে, আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এদিন বিধানসভায় বিরোধীরা এনিয়ে সুর তুলেননি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *