কলকাতা, ২৩ নভেম্বর, ( হি.স.) : সময় যত গড়াচ্ছে কলকাতা থেকে ধৃত জঙ্গিদের সম্পর্কে সামনে আসছে আরও বিস্ফোরক তথ্য । আর তা দেখেই হয়রান হয়ে পড়ছেন লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দারাও । ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে জানা গিয়েছে, দমদম ও কামারহাটির চার ঠিকানায় নানা নামে একাধিক বাড়িভাড়া নিয়েছিল তারা । এছাড়া তাদের কাছে ছিল কলকাতার একের পর এক নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নকশা । মিলেছে বাংলাদেশ সীমান্তের রাস্তা ও গুরুত্বপূর্ণ নদীপথের মানচিত্র, হায়দরাবাদের চারমিনার চত্বরের সমস্ত ছবি, হাতে আধার কার্ড-সহ একাধিক পরিচয়পত্র । আবার বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার ফারুক সাদিককে খুনের ছক। সবমিলিয়ে ধৃত আল কায়দা জঙ্গিদের ঘিরে রহস্য এখন চরমে ।
ইতিমধ্যে এই মামলার কিনারা করতে কলকাতার স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের পাশাপাশি নামছে হায়দরাবাদের পুলিশ । সেখান থেকে একটি দল জেরা করতে চায় ধৃতদের। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করছে । তবে তার আগেই জেরা করে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে । নাম ও ধাম বদলে তাদের গতিবিধি পুরোপুরি ডায়েরি-বন্দি করেছেন তদন্তকারীরা । এবং জেরা করলেই একের পর এক নয়া তথ্য উঠে আসছে । দেখা গিয়েছে, কামারহাটি, দমদমে চারটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল তারা । এই সব স্থানে বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে আসা জঙ্গিরা আশ্রয় নেবে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছিল । এদিকে ধৃত মনোতোষ দে ওরফে রিয়াজের সঙ্গে যে মহিলাদের সম্পর্কের খোঁজ মিলেছে, তাঁদের সবাইকে জেরা করা হবে । তবে ঘটনা হল, কলকাতায় আল কায়দার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের রিয়াজ, সামশাদ এবং মনোতোষ দে ওরফে জিয়ারুলকে গ্রেফতার পরবর্তী তদন্তের অভিমুখের অনেকটা জুড়েই রয়েছে বসিরহাট ।
উত্তর ২৪ পরগনার এই সীমান্ত শহর আগেও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে একের পর এক জঙ্গি গ্রেপ্তারে । এবার দেখা যাচ্ছে, সেখানে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে এমন কয়েকজনের হাতে নকল আধার কার্ড বানিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে । ধৃতদেরও আধার কার্ড রয়েছে । যা বানানো হয়েছিল কর্নাটক থেকে । সেখানে টাকার বিনিময়ে সেই পরিচিতি পত্র বানানো হয় । ঠিক কতগুলি এবং কাদের জন্য তা বানানো হয় তা জানতে জেরা চলছে ।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মনতোষের আসল বাড়ি ঘিরে বিভ্রান্তির মধ্যে তার স্ত্রীর সংখ্যা নিয়েও নানা মত রয়েছে । বৃহস্পতিবার সে জেরায় জানিয়েছে, আদতে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরে তার বাড়ি ছিল । সেখানে একজনকে বিয়ে করেছিল সে । আবার শাশুড়িকে সাজিয়েছিল বউদি । তার পর বেপাত্তা হয়ে যায় । মোটা টাকার টোপ দিয়ে তাকে স্লিপার সেলের সদ্স্য করা হয়েছিল । গিয়েছিল খুলনা । সেখানেও তার পরিবার আছে । সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে ঘোজাডাঙা সীমান্ত হয়ে এপারে আসে সে । বাংলাদেশ থেকে ফোনে তার কাছে নির্দেশ এসেছিল সেখান থেকে কয়েকজন আসবে তাদের এখানে থাকার নিরাপদ আস্তানা জোগাড় করে দেওয়ার জন্য । সেই নির্দেশ পালনের পর তাকে বলা হয়, সামশাদ ও রিয়াজের সঙ্গে ভিড়ে যেতে । তার জন্য বসিরহাট যে নিরাপদ তা-ও বলে দেওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই একটি জঙ্গি মডিউল রয়েছে । আছে একাধিক বেসরকারি ধর্মীয় স্কুল যার শিক্ষকদের কয়েকজন তাদের সাহায্য করতে পারে। সেই শিক্ষকদের খোঁজ চলছে । আবার ইংরেজি মাধ্যমের কয়েকজন ছাত্রকে নিজেদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে মডিউলে নিয়ে আসার জন্যও বিশেষ পরিকল্পনা ছিল তাদের। সেজন্য পার্কসার্কাসে একটি সংগঠনকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। ঠিক ছিল, তাদের অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু টাকা ঢুকবে । যা পরিকল্পনা রূপায়ণে কাজে আসবে । সেখানে এক শিক্ষকের সঙ্গেও কথা হয়েছিল তাদের যার সঙ্গে হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি ধর্মীয় স্কুলের যোগাযোগ নিবিড় । হায়দরাবাদ থেকেই সেই তথ্য তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ।
এদিকে, ধৃত মনোতোষ ওরফে রিয়াজের পাসপোর্টটি অন্য একজনের পাসপোর্ট হ্যাক করে বানানো বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ । বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করত সে। সেই পাসপোর্টের নম্বর জেনে তদন্তে এগোতে চায় এস টি এফ । উল্লেখ্য, ধৃতরা জানিয়েছে, তাদের পাসপোর্ট নিজেদের কাছে রাখার অনুমতি ছিল না । তা দিয়ে দিত হত ফোনে আসা নির্দেশ মেনে কোনও ব্যক্তির কাছে । তবে বসিরহাটের সঙ্গে দেওবন্দের ফইজানের যে একসময় নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তা এখন স্পষ্ট তদন্তকারীদের কাছে । সে-ও তো বাংলাদেশ থেকে বসিরহাট, কলকাতা হয়ে পৌঁছেছিল দেওবন্দে । তার পর শুরু করে অপারেশন । সেই সহজ পথের নাগাল পেতে বসিরহাট পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে তদনন্তকারীরা। তাঁরা যেতে পারেন সেখানে । এই গ্রেপ্তারির খবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছেও গিয়েছে । পাঠানো হচ্ছে বিস্তারিত রিপোর্ট। খোঁজ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা । তেমন হলে এ বিষয়ে কথা বলা হতে পারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ।