BRAKING NEWS

কর্মনাশা দিন

‘রথযাত্রা লোকারণ্য, মহা ধুমধাম৷ ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম৷ পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি৷ মূর্ত্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী৷’ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি বীরজিৎ বাবুরও এমনই দশা হইয়াছে৷ বুধবার প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্যজুড়ে বারো ঘন্টা বন্ধ আহ্বান করিয়াছিল৷ শান্তিপূর্ণভাবে বন্ধ পালিতও হইলো৷ রাস্তাঘাটে কংগ্রেসের তেমন কোন পিকেটিং পরিলক্ষিত হইলো না৷ শাসক দলের ক্যাডারদেরও বন্ধ বিরোধী কোনও পিকেটিং ছিল না৷ ইহা ছাড়াও মঙ্গলবার কংগ্রেসের বন্ধের প্রতিবাদে কোনও মিটিং মিছিল শাসক দল কিংবা তার অঙ্গ সংগঠনগুলিও করিল না৷ ফলশ্রুতিতে কংগ্রেসের বন্ধ মোটামুটি ভাবে সফল হইস৷ তাহা দেখিয়া প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব খুশিতে আটখানা হইতে পারেন৷ হয়তোবা নেতৃত্বরা ভাবিতে পারেন যে, রাজ্য হইতে কংগ্রেস এখনো নিঃশেষ হইয়া যায় নাই৷ কংগ্রেসের বন্ধে এখনো রাজ্যবাসী স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাড়া দিতেছে৷ কিন্তু, গোটা বিষয়টি যে রথযাত্রার মত তাহা কংগ্রেসের নেতাদের বোধগম্য হইতেছে না৷ জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামকে নিয়ে রথযাত্রায় মানুষের ঢল নামে৷ রথ যেসব রাস্তা দিয়া যায় সেইসব রাস্তায় ভক্তরা লুটাইয়া প্রাণম করে৷ ভক্তদের এমন প্রণামের বহর দেখিয়া রাস্তা ভাবিয়া থাকে যে, ভক্তরা তাহাকে প্রণাম করিতেছে৷ অন্যদিকে রথও নিজেকে প্রণম্য বলিয়া ভাবিয়া থাকে৷ আবার রথের উপর থাকা কাঠের তিনমুর্ত্তিও ভাবিয়া থাকে যে, তাহাদেরকে সকলেই প্রণাম করিতেছে৷ তাহাদের এমনতরো ভাবাভাবি দেখিয়া অলক্ষ্যে অন্তর্যামীও হাসিয়া উঠেন৷ কেননা, তিনি ভালো করিয়া জানেন যে, রথযাত্রা উপলক্ষে রাস্তায় মানুষের ঢল এবং প্রণামের একমাত্র কারণ হইলেন তিনি৷ এই ক্ষেত্রে রাস্তা, রথ ও মূর্ত্তির কোন ভূমিকা নাই৷ কংগ্রেসের বন্ধের ক্ষেত্রেও এমন ধারণা প্রযোজ্য৷ কেননা, বন্ধ মোটামুটি সফলের পর কংগ্রেসের নেতারা আপ্লুত হইলেও এই সফল বন্ধের পিছনে রহিয়াছে নাশকতার ভয়৷ তাই এই ক্ষেত্রে কংগ্রেসের কোনও কৃতিত্ব নাই৷ কৃতিত্ব রহিয়াছে নাশকতার সেই অশুভ শক্তির৷ কেননা, রাজ্য জুড়িয়া কংগ্রেসের অস্তিত্ব তলানিতে আসিয়া ঠেকিয়াছে৷ কংগ্রেসের নয় বিধায়কের মধ্যে বর্তমানে রহিয়াছে তিন বিধায়ক৷ তাহাদের মধ্যে তাদের একজন বিধায়কের আচরণ রহস্যজনক৷ বাকি রইল পিসিসির সভাপতি বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা ও বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়৷ ইহা ছাড়াও রাজ্য জুড়িয়া কংগ্রেস ভাঙনের মুখে পড়িয়া অস্তিত্বের সংকটে পড়িয়াছে৷ তাহার পরও কংগ্রেসের এমন সফল বন্ধ কি করিয়া হইল তাহা বিশ্লেষণ করিলে উঠিয়া আসিতেছে নাশকতার ভয়৷ এই ভয়ের কারণে দোকান পাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল৷ এই ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফুর্ততার কোনও প্রশ্ণ আসিতেছে না৷ আসিতেছে জান মাল রক্ষার তাগিদ৷
বন্ধের পর বীরজিৎ বাবুরা সাংবাদিক সম্মেলন করিয়া ডুগডুগি বাজাইবেন৷ সফল বন্ধের জন্য রাজ্যবাসীকে ধন্যবাদ জানাইবেন৷ কিন্তু, একটি কর্মনাশা দিনের বিষয়ে তাহারা যেই যুক্তি খাড়া করিয়াছেন তাহা যে ধোপে টিকিবে না৷ কেননা, একটা অবরোধের প্রতিবাদে আর একটা বন্ধ কোনও অবস্থায় তা কাম্য নহে৷ আইপিএফটি তথা এন সি গোষ্ঠী আলাদা রাজ্যের দাবিতে দশ জুলাই হইতে জাতীয় সড়ক ও রেল পথ অবরোধে বসিয়াছে৷ এই অবরোধের প্রেক্ষিতে জনজীবন যে বিপর্যস্ত তাহা বলিবার অবকাশ নাই৷ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠিয়াছে৷ ইহার মাঝে কংগ্রেসের বন্ধ হইল গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত৷ কংগ্রেস দাবি করিয়াছে যে, আইপিএফটির অবরোধ এবং রাজ্য সরকারের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে তাহারা এমন বন্ধ ডাকিতে বাধ্য হইয়াছে৷ কিন্তু, একদিকে কর্মনাশা বন্ধে খেটে খাওয়া মানুষেরা যে আর্থিক সংকটে পড়িয়াছিল তাহার দায় দায়িত্ব কে গ্রহণ করিবে? এই ক্ষেত্রে এন সি দেববর্মার অবরোধ আর কংগ্রেসের বন্ধের পার্থক্য কোথায়? তাই আবার বলিতে হইতেছে যে, কংগ্রেসের এমন সফল বন্ধের পিছনে কাজ করিয়াছে নাশকতার ভয়৷ ইহাতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের ডুগডুগি বাজাইবার আদৌ কোনও কারণ রহিয়াছে বলিয়া মনে হইতেছে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *