BRAKING NEWS

আত্মবলিদানের ইতিহাস

bir-saheedদেশাত্মবোধের প্রেরণায় এই পার্বতী রাজ্যের মানুষ কতখানি সজাগ ও সতর্ক, কতখানি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তাহা অনুভব করা সত্যিই কঠিন ছিল৷ কিন্তু বীর সন্তান শম্ভু সাতমুড়ার আত্মবলিদান ত্রিপুরার মানুষের দেশপ্রেমের গভীরতা কতখানি, বীর যোদ্ধাদের প্রতি কতখানি শ্রদ্ধাবোধ তাহা নতুন করিয়া অনুভবে আনিয়া দিয়াছে৷ ত্রিপুরার বিশেষ করিয়া এই রাজধানী শহর আগরতলার মানুষ প্রমাণ করিয়া দিয়াছে দেশের জন্য তাঁহারাও নিজেদের প্রাণ নিবেদিত করিতে পারে৷ গত বাইশে নভেম্বর জম্মুর পুঞ্চ জেলার অধীন ভারত পাকিস্তান সীমান্তের জামিয়া ওয়ালিগলি সেক্টরে টহল দেওয়ার সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পাতিয়া রাখা মাইন বিস্ফোরণে শহীদের মৃত্যু বরণ করেন রাজ্যের যুবক তথা বিএসএফ ১০৭ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান শম্ভু সাতমুড়া৷ আগরতলার সুভাষনগরের এই যুবকের আত্মবলিদানের ইতিহাস রচনা করিয়াছে ত্রিপুরার মানুষের শ্রদ্ধা ও অভিবাদনের ঢল ও শোকার্ত মানুষের বন্যায়৷ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাতে কর্তব্যরত বীর সন্তানরা অকাতরে প্রাণ দিয়া যাইতেছেন৷ বিএসএফ জওয়ান যেহেতু আগরতলা বা ত্রিপুরার যুবক তাই এরাজ্যের মানুষের আবেগ উচ্ছাস লক্ষ্য করা গিয়াছে৷ তিন দিকে বাংলাদেশ পরিবেষ্টিত এই ছোট্ট পার্বতী রাজ্যের মানুষও যে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ তাহা স্পষ্ট হইয়াছে৷ এরাজ্যের মানুষ বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ দেখিয়াছে৷ বহু রক্তের, প্রাণের বিনিময়ে এই যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস তো আজও এরাজ্যের মানুষ গর্বোন্নত করে৷ ভারতের বীর জওয়ানরা তখনও পাক বাহিনীর হাতে জঙ্গীদের আত্মবলিদান করেন৷ শুধু একাত্তর নহে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত যুদ্ধ করিয়াছে ১৯৬৫ সালেও৷ তখনও বহু বীর জওয়ান শহীদের যে ইতিহাস রাখিয়া গিয়াছেন, সেই স্মরণীয় ঘটনা দেশবাসী গভীর শ্রদ্ধায় কতখানি স্মরণ করেন তাহাও আজ ভাবিবার সময় আসিয়াছে৷
দ্বিখন্ডিত স্বাধীনতার অভিশাপই যে আমাদেরকে চরম বিপাকে ঠেলিয়া দিয়াছে সে বিষয়ে দ্বিমত থাকিবার কথা নহে৷ ইংরেজের কূটচাল ও জওহরলাল নেহেরুর ক্ষমতা লিপ্সার কারণে দেশ দ্বিখন্ডিত হয়৷ আর স্বাধীনতা প্রাপ্তির যে সুখ তাহা অনেকটা কাড়িয়া নিয়াছে জম্মু কাশ্মীর সমস্যা৷ পাকিস্তানে যে সরকারই ক্ষমতায় বসে সেই শাসকরাই এই কাশ্মীর রাজনীতিকে পঁুজি করিয়া ক্ষমতায় টিকিয়া থাকিতে চেষ্টা চালায়৷ পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়াছে৷ বার বার তাহা প্রমাণিত হইয়াছে৷ স্বাধীনতার পর বেশীরভাগ সময়ই সেখানে সামরিক শাসন কায়েম ছিল৷ পাকিস্তানীরা সেনা শাসনেই যেন স্বস্তি পায়৷ গণতন্ত্রের প্রতি যেন ভরসা করিতে পারে না৷ দূর্বল গণতন্ত্র সেখানে সাবলীলতা পায় না৷ গণনির্বাচিতরা সেখানে সেনা আধিপত্যে চালিত হয়৷ সেনা প্রধানরা তো দেশের মঙ্গল অমঙ্গল নিয়া তেমন দায়বদ্ধ নহেন৷ ফলে, একশ্রেণীর দেশবাসীর সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাইয়া ক্ষমতায় টিকিয়া থাকার চেষ্টা চলে পাকিস্তানে৷ নওয়াজ শরিফ আসলে পুতুল প্রধানমন্ত্রী৷
সেই পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর আক্রমণে, পোঁতা মাইনে অকাতরে প্রাণ দিতেছেন ভারতীয় জওয়ানরা৷ আত্মবলিদানের তালিকায় সংযোজিত হইলেন ত্রিপুরার বীর সন্তান শম্ভু৷ ত্রিপুরা ভারতের একটি অঙ্গ রাজ্য৷ ত্রিপুরার ছেলে দেশ রক্ষায় প্রাণ দিয়াছে বলিয়া রাজ্যের মানুষ গব’ করিবার মতো পরিস্থিতির সামনে দাঁড়াইয়াছে৷ এত বড় দেশের সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষায় ত্রিপুরার মতো ক্ষুদ্র রাজ্যও আত্মবলিদানে কত বেশী প্রস্তুত রাজ্যের যুবক বীর শহীদ প্রমাণ করিয়া দিলেন৷ দেশ রক্ষার এই প্রতিজ্ঞায় রাজ্যের মানুষও যে পিছাইয়া নাই, অনেক বেশী অগ্রসর শম্ভুর শহীদ হওয়ার ঘটনা তাহাও প্রমাণ করিয়া দিল৷ প্রমাণ করিয়া দিল দেশ রক্ষায় দেশের বীর জওয়ানদের প্রতি ক্ষুদ্র ত্রিপুরার বিশাল হৃদয় প্রসারিত হইয়া আছে৷ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতের বীর জওয়ান শহীদের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘতর হইতেছে৷ এই ইতিহাস আগামী দিনের প্রেরণা, দেশের প্রতিরক্ষার ইতিহাসে ত্রিপুরার একাত্মতার ঘটনা সারা দেশের নজর কাড়িবে৷ দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ জানিতে পারিয়াছে ত্রিপুরা ক্ষুদ্র হইলেও তাহার হৃদয় অনেক বেশী প্রসারিত৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *