BRAKING NEWS

নীতি যেখানে লুন্ঠিত

কংগ্রেসের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্বে ছেদ টানিতে কি সিপিআই(এম) তৎপর হইয়াছে? রাজনীতির সঙ্গে যুক্তদের খুব স্বাভাবিক কারণে এই বিষয়ে আগ্রহ থাকিবেই৷ পশ্চিমবঙ্গের সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র স্পষ্ট বলিয়া দিয়াছেন গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করা ভুল হইয়াছিল৷ আগামী দিনে কংগ্রেসকে নিয়া আর জোট করা হইবে না৷ বঙ্গের দুটি উপ নির্বাচনেও কংগ্রেসকে ছাড়াই সিপিএম ভোটে লড়িবে৷ পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ঘর শূণ্য হইয়া যাইতেছে৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রভাবিত এলাকায় কংগ্রেস সাইনবোর্ড সর্বস্ব হইয়া পড়িয়াছে৷ অধীরবাবু এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখিতেছেন৷ কংগ্রেস ছাড়িয়া দলে দলে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগদানের ফলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিই এখন নতুন খাতে বহিতেছে৷ একথা আবারও প্রমাণ হইয়া গেল কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাত করিয়া সিপিএমের জাতও গেল পেটও ভরিল না৷ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই আঁতাতকে মানিয়া নিতে পারে নাই৷ স্বাধীনতার পরবর্তী কাল হইতেই বঙ্গে কংগ্রেস সিপিএম একে অপরের মুন্ডুপাত করিয়াই আসিয়াছে৷ কংগ্রেসের হাজার হাজার কর্মী খুনের অভিযোগ তো রহিয়াছে সিপিএমের বিরুদ্ধে৷ একই অভিযোগ সিপিএমেরও আছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷ ইন্দিরা গান্ধীকে রাক্ষুসে, ডাইনী ইত্যাদি অপবাদ দিয়াছে সিপিএম৷ গলি গলি মে সোর হ্যায় রাজীব গান্ধী চোর হ্যায় বলিয়া সুরও চড়াইয়াছিল সিপিএম৷
পরবর্তী সময়ে, নরসীমা রাওয়ের আমল হইতেই কংগ্রেস সিপিএম নির্ভর হইয়া পড়ে৷ সিপিএমও এই সুযোগে ষোল আনা ফায়দা তুলিয়া নেয়৷ বিজেপিকে রুখিতে কংগ্রেসের নরসীমা রাওয়ের সরকারকে সমর্থন দেওয়া হইতেছে বলিয়া সিপিএম প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয়৷ আর এই সমর্থন জারী রখিয়া সিপিএম যাবতীয় সুযোগ সুবিধা আদায় করিতে সক্ষম হয়৷ অভিযোগ আছে যে, ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে ত্রিপুরায় সিপিএম সরকার প্রত্যাবর্তনের পিছনে নরসীমা রাও’র গোপন হাত ছিল৷ বিজেপিকে রুখিতে যে কংগ্রেস বা নরসীমা রাওকে সরকার টিকাইতে সাহায্য করা হইয়াছে সেই বিজেপিক রোখা সম্ভব হইয়াছে? কেন্দ্রে তো বিশাল সমর্থন নিয়া আসিয়াছে৷ ত্রিপুরায় দিনে দিনেই বিজেপির উত্থান হইতেছে৷ সিপিএম কংগ্রেস সরকারকে বাঁচাইয়া নিজে শেষ পর্য্যন্ত বাঁচিতে পরিল না৷ পশ্চিমবঙ্গ হারাইলেও ত্রিপুরা কতখানি ধরিয়া রাখিতে পারিবে সেই প্রশ্ণ আছে৷ ত্রিপুরায় ইতিমধ্যেই বিজেপি ও তৃণমূল শক্তি বৃদ্ধি করিয়া চলিয়াছে৷ রাজনীতিতে নীতি আদর্শের তেমন বালাই নাই৷ রাজনীতির সুবিধাই হইল বড় কথা৷ এই সুবিধা যে দিকে সেই দিকেই আগাইয়া যাওয়া বা আঁকড়াইয়া ধরা৷ কংগ্রেস সিপিএমের মধ্যে তো নীতির জোট হয় নাই৷ প্রশ্ণ উঠিতে পারে দেশে রাজনীতিতেই যেখানে কোনও নীতি নাই সেখানে জোট গঠনে নীতি থাকিবে কি করিয়া? ত্রিপুরায় যে সব উঠতি দল একে অপরের বিরুদ্ধে আওয়াজ ছাড়িতেছেন তাহারাই যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে নির্বাচনী সমঝোতায় নামিয়া পড়েন তাহা হইলেই তো দুর্দান্ত প্রতাপ সিপিএম দলকে অনেক ধাক্কা খাইবার সম্ভাবনা থাকিয়া যাইতেছে৷
রাজনীতিতে নীতি নাই৷ যেসব দল নীতির কথা বলিতেছেন৷ তাহা জনগণকে ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যেই৷ দেশের মানুষের সামনে এখন সবচাইতে বেশী ‘নীতির’ সংকট৷ যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা দখলই যেখানে মূল লক্ষ্য সেখানে ‘নীতি’ তো অবলীলায় দূরে থাকিবে? একথা ভুলিলে চলিবে না, সাধারণ মানুষও এখন নতুন করিয়া ভাবিতেছে৷ এই পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশের প্রধানমন্ত্রী সত্যিই কি নতুন করিয়া ভাবিবেন? যে অবস্থা চলিতেছে তাহা তো বিভ্রান্ত বিষন্ন হইতেছে প্রচার মাধ্যম৷ সাধারণ মানুষের বিস্ময়ের ঘোর তো লাগিয়াই আছে, তাহা নতুন ভোরের আলোয় উদ্ভাসিত হইবার সম্ভাবনা আছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *