BRAKING NEWS

পালিত হচ্ছে জনজাতিদের প্রধান উৎসব গড়িয়া পূজা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ এপ্রিল৷৷ প্রতি বছরের মতো এ বছরও ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে হিন্দু জনজাতিভুক্তদের অন্যতম প্রধান উৎসব গড়িয়া পূজা৷ এ-বার পূজার দিন রবিবার পড়ে যাওয়ায় ত্রিপুরা সরকার গড়িয়া উপলক্ষে সোমবার (২২ এপ্রিল) রাজ্যে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে৷


সর্বশক্তিমান বাবা গড়িয়া দেবতার পুজো কঠোর নিয়ম নিষ্ঠা ও সংযমের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়৷ এই পূজার রীতিনীতি অন্য সকল পূজা থেকে আলাদা বলে দাবি জনজাতি অংশের মানুষের৷ বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় এ পূজার স্থান৷ এমন-কি মূর্তিও তৈরি হয় সরু সরু বাঁশ, হস্ত-তাঁতে তৈরি কাপড় ও জুমের চাল দিয়ে৷ পূজার পুরোহিতকে বলা হয় চন্তাই৷ সাধারণত প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৭ তারিখ হয় গড়িয়া পূজা৷ পূজায় মোরগ, হাঁস, কবুতর ও পাঁঠা বলি দেওয়ার বিধান রয়েছে৷ আবার গরিয়া পূজায় প্রয়োজন হয় বাড়িতে তৈরি বিশুদ্ধ মদ ও হাঁস-মুরগির ডিম৷ মানুষের মঙ্গল কামনা করে এবং জুমে অধিক ফসল ফলনের প্রার্থনা করা হয় গড়িয়া দেবতার কাছে৷ গরিয়া দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে যুগ যুগ ধরে ত্রিপুরার হিন্দু আদিবাসীরা এই পূজার আয়োজন করে আসছেন৷


আগরতলার বিভিন্ন পাড়ার লোকজন, এমন-কি ক্লাবের উদ্যোগেও গড়িয়া পূজার আয়োজন করা হয়৷ আগরতলার সবচেয়ে বড় গড়িয়া পূজার আয়োজন করা হয় অভয়নগর পাকা সেতুর পাশে৷ এ উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী মেলাও চলে এখানে৷ পুজো উপলক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি পিঠেপুলি-সহ পরম্পরাগত খাবার তৈরির প্রচলন রয়েছে আদিবাসী সমাজের কাছে৷ আগরতলার পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি জনজাতি বাড়িতে এই পূজার আয়োজন করা হয়৷


বাবা গড়িয়া দেবতার পুজো কঠোর নিয়ম নিষ্ঠা ও সংযমের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উদয়পুর মহকুমার কিল্লা আরডি ব্লকের অধীনে নোয়াবাড়িতে৷ এই পুজো ত্রিপুরার জনজাতিদের হলেও এখন এটি সকল অংশের মানুষের মধ্যে মিলনের সেতুবন্ধন রচনা করে৷ সাতদিন ধরে চলে এই পুজো৷ বাবা গড়িয়া মানে দেবাদিদেব মহাদেব৷


হাজারো বছর আগে ত্রিপুরায় জনজাতিদের মধ্যে যে ধর্ম ও সংসৃকতি চেতনার উন্মেষ হয়েছিল বর্তমানে আজও তা নিজস্ব মহিমায় বিরাজিত৷ কথিত আছে, মানুষের অভাব-অনটন, রোগ, শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য থেকে অব্যাহতি পেতে যুগ যুগ ধরে গড়িয়া পুজো করে আসছেন ত্রিপুরার জনজাতিরা৷ গড়িয়া পুজো ত্রিপুরার জনজাতিদের লৌকিক দেবতার পুজো হিসাবে চিহ্ণিত হয়ে আজ তা সর্বজনীনতা লাভ করেছে৷ গড়িয়া পুজো এখন সমগ্র ত্রিপুরাবাসীর৷ ত্রিপুরায় উনিশটি জনজাতি সম্প্রদায় রয়েছে৷ এরা সকলেই বিশ্বাস করেন, গড়িয়া দেবতা এমন এক অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন দেবতা যাঁর কৃপাতেই মানুষ সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারেন৷ তার ইচ্ছাতেই দেশের সমৃদ্ধি ঘটে৷

খুব জাঁকজমকভাবে ত্রিপুরার জনজাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা এই পুজো পালন করে থাকেন৷ পুজোকে কেন্দ্র করে নানান ধরনের খাবার তৈরি করা হয়৷ ভোগে থাকে বিভিন্ন প্রকারের পিঠে৷ তাছাড়া পাঁঠা, হাঁস-মোরগ, পায়রা বলি দেওয়া হয়৷ এই পূজায় হাঁসের ডিমও ব্যবহৃত হয়৷ ভোগেও মাংসের আয়োজন করা হয়৷ জনজাতিদের বিশ্বাস, গড়িয়া পুজোর সাতদিনের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয় কিংবা কোনও বিপদে পড়ে তা হলে গড়িয়া দেবতার মানত করলে সেই ব্যক্তি সুস্থ উঠবেন৷ এই পূজা অনেকটা শাক্ত মতে শিবের রাজসিক পূজা৷ জনজাতিরা এই পুজার পূজারীদের অচাই এবং প্রধান পূজারীকে চন্তাই বলে বিশেষ মর্যাদা দেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *