BRAKING NEWS

কানপুরের কাছে লাইনচ্যুত পূর্বা এক্সপ্রেসের ১২টি কামরা : আহত ১৫ জন যাত্রী, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা রেলের

কানপুর (উত্তর প্রদেশ), ২০ এপ্রিল (হি.স.): গভীর রাতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ ডিভিশনের এলাহাবাদ-কানপুর শাখায় কানপুরের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে গেল ১২৩০৩ হাওড়া-নিউদিল্লি পূর্বা এক্সপ্রেসের ১২টি কামরা। লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া ১২টি কামরার মধ্যে ৪টি বগি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া বগি গুলি হল-দু’টি স্লিপার ক্লাস কামরা (এস-৮ ও এস-৯), একটি এসি ২-টিয়ের কাম প্রথম এসি কামরা (এইচএ১), এছাড়াও বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৪, বি-৫, এ-১, এ-২, একটি প্যান্ট্রি কামরা এবং একটি লাগেজ ভ্যান (এসএলআর)। সৌভাগ্যবশত ভয়াবহ এই রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির কোনও খবর নেই। তবে, মোট ১৪ জন যাত্রী কমবেশি আহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৩ জন গুরুতর আহত অবস্থায় কানপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার গভীর রাত ১২.৫০ মিনিট নাগাদ ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনাটি ঘটেছে কানপুর নগর জেলায় কানপুর স্টেশন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার শুরে রুমা গ্রামের সন্নিকটে। গভীর রাতে পূর্বা এক্সপ্রেসের ১২টি কামরা লাইনচ্যুত হওয়ার খবর পাওয়া মাত্রই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, জেলা মেজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার এবং রেলের ইঞ্জিনিয়াররা। পরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরঅফ)-র একটি টিম। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরই উদ্ধারকাজ চালান এনডিআরঅফ টিমের ৪৫ জন সদস্য। রেল কর্তৃপক্ষ ও কানপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের কানপুর সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে পৌঁছনোর জন্য চারটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি অন্যান্য যাত্রীদের কানপুর থেকে দিল্লি পৌঁছে দেওয়ার জন্যও একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। রেল সূত্রের খবর, শনিবার সকাল ৫.৪৫ মিনিট নাগাদ বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে যাত্রীদের কানপুর থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

নর্থ সেন্ট্রাল রেলের জনসংযোগ আধিকারিক অমিত মালব্য জানিয়েছেন, আহত ১৫ জনের মধ্যে সামান্য আহত হয়েছেন সন্তোষ (৩৪), বাসন্তী (৭৫) এবং সাধনা (৪৫) নামে তিনজন যাত্রী। তাঁদের অবিলম্বে ৫,০০০ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন সুমিত কুমার (৩৫) নামে একজন যাত্রী। তাঁকে ২৫,০০০ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। রেল দুর্ঘটনার পরই আহতদের সম্ভাব্য সাহায্যের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। উত্তর প্রদেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিবৃতি মারফত জানানো হয়েছে, গুরুতর ৩ জন যাত্রীর চিকিৎসা চলছে হ্যালেট হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারে, বাকি ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় ৫২ জনের।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাওড়া থেকে দিল্লি যাওয়ার সময় শুক্রবার গভীর রাত ১২.৫০ মিনিট নাগাদ কানপুরের রুমা গ্রামের সন্নিকটে লাইনচ্যুত হয়ে যায় হাওড়া-নিউদিল্লি পূর্বা এক্সপ্রেসের ১২টি কামরা। লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া ১২টি কামরার মধ্যে ৪টি বগি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। তবে, এই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির কোনও খবর নেই। এই রেল দুর্ঘটনায় মোট ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন (৩ জন গুরুতর আহত এবং ১২ জন সামান্য আহত)। দুর্ঘটনার পরই রেলের পক্ষ থেকে বিশেষ হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। হেল্পলাইন নম্বরগুলি হল-(০৩৩) ২৬৪০২২৪১, ২৬৪০২২৪২, ২৬৪০২২৪৩ এবং ২৬৪১৩৬৬০।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ‘গভীর রাত তখন ১২.৫০ মিনিট হবে, আমরা তখন ঘুমিয়েছিলাম। আচমকাই বিকট শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। তৎক্ষণাৎ রেললাইনের দিকে আমরা সবাই ছুটে আসি। রেললাইনের কাছে যাওয়ার পর দেখি পূর্বা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে রেললাইনের ধারে উল্টে রয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়াররা। পরে দুর্ঘটনাস্থলে আসে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।’ ভারতীয় রেলের এডিজি পিআর স্মিতা ভি শর্মা জানিয়েছেন, ‘প্রাণহানির কোনও খবর নেই। যাত্রীদের মধ্যে কেউই মারাত্মকভাবে জখম হননি। সমস্ত যাত্রীকেই নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। এই রেল দুর্ঘটনার জেরে মেইন রুটে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে।’ কানপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় বিশ্বাস পন্ত জানিয়েছেন, ‘দুর্ঘটনার পরই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত প্রাণহানির কোনও খবর নেই। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের কানপুর সেন্ট্রাল রেল স্টেশনে পৌঁছনোর জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য যাত্রীদের কানপুর থেকে দিল্লি পৌঁছে দেওয়ার জন্যও একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।’ কি কারণে লাইনচ্যুত হল হাওড়া-নিউদিল্লি পূর্বা এক্সপ্রেস, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। নর্থ সেন্ট্রাল রেলের জেনারেল ম্যানেজার রাজীব চৌধুরী জানিয়েছেন, রেল নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কমিশনার এ কে জৈন-এর নেতৃত্বে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নর্থ সেন্ট্রাল রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক (সিপিআরও) জানিয়েছেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রেললাইন মেরামতির কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে শনিবার বিকেল চারটের মধ্যেই স্বাভাবিক ছন্দে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *