একই দিনে রাজ্যের পৃথক স্থানে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/ উদয়পুর/বিলোনীয়,২৫ মার্চ৷৷  একই দিনে রাজ্যের পৃথক স্থানে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ তিনটি ঘটনাকেই পুলিশ প্রাথমিক ভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নিয়েছে৷ তবে শান্তিরবাজারে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে দাগ কেটেছে৷ লোকমুখে শোনা গেছে রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই নাকি ঐ বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন৷ অন্যদিকে রাজধানীর রামনগরে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ পাশাপাশি উদয়পুরেও কাকড়াবন গঙ্গাছড়ায় জলে ভাসমান অবস্থায় একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ প্রতিটি ঘটনার ব্যপারে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে মামলা নিয়ে৷

রাজধানী আগরতলা শহরের রামনগর ২ নম্বর রোডে  মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ সোমবার দুপুর নাগাদ রামনগর আউট পোষ্টের পুলিশ রামনগর ২ নম্বর রোডের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে একটি পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার করেছে৷ মৃতের নাম কৌশল ঘোষ ওরফে বাবুয়া৷ ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতো বলে স্থানীয় জনগণ জানিয়েছেন৷ অতিরিক্ত মদ্যপান করতে করতে ওই ব্যক্তি ভবঘুরে পরিণত হয়েছে৷ বাড়িতে ওই ব্যক্তি একাই থাকতো৷ আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে তার তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না বলে স্থানীয় মানুষের অভিমত৷ স্বাভাবিক কারণেই কবে তার মৃত্যু হয়েছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে কেউ কিছু বলতে পারছেন না৷ পচা গলা মৃতদেহ দেখে আশঙ্কা করা হচ্ছে বেশ কয়েকদিন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ এলাকায় পচা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজন গন্ধের উৎস সন্ধান করতে গিয়েই পচা গলা মৃতদেহ দেখতে পান বলে জানা যায়৷ তারপরে খবর পাঠানো হয় পুলিশ ফাঁড়িতে৷

ত্রিপুরার উদয়পুর মহকুমায় ছড়ার জলে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷ তাঁর নাম উদয়মানিক ঠাকুর৷ উদয়পুরের কাকড়াবন থানাধীন ক্যাম্পেরটিলা এলাকায় তাঁর বাড়ি৷

জানা গেছে, সোমবার বেলা আনুমানিক একটা নাগাদ উদয়পুর কাকড়াবন ফায়ার সার্ভিসে খবর আসে, গঙ্গাছড়া দুর্গা চৌমুহনি এলাকায় ছড়ার জলে একটি লাশ ভাসছে৷ খবর পেয়ে কাকড়াবনের দমকল বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় জনগনের সহযোগিতায় ছড়ার জল থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান৷ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুকান্ত সাহা উদয়মানিক ঠাকুরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷

এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে কাকরাবন থানার পুলিশও৷

জানা গেছে, উদয়মানিক মাছ ধরতে ছড়ায় গিয়েছিলেন৷ স্থানীয় জনগণের বক্তব্য, তাঁর মৃগী রোগও ছিল৷ এদিকে তাঁর পা থেকে রক্ত বের হতেও দেখা গেছে৷ পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এক মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷ মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, নাকি তাঁর মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়৷

রোগের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বছর ৬০-এর নরেন্দ্র পাল (৬০ ) নামের ব্যক্তি৷ এমনটাই মনে করছেন মৃতের পরিবার এবং এলাকার বাসিন্দারা৷

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, শান্তিরবাজার মহকুমার অন্তর্গত কাঞ্চননগর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা নরেন্দ্র পাল দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক রোগে ভুগছিলেন৷ সোমবার সকালে এলাকার লোকজন একটি সেতুর বিমে গলায় ফাঁস জড়িয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান নরেন্দ্র পালকে৷ নরেন্দ্রবাবুর দেহ ঝুলছে দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রথমে তাঁর পরিবার এবং পরে শান্তিরবাজার থানায় খবর দেন৷

ঘটনার খবর পেয়ে নরেন্দ্র পালের বাড়ি থেকে লোকজন ছুটে যান৷ আসে থানার এক দল পুলিশ৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ মৃতদেহ নামিয়ে ময়না তদন্তের জন্য শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন৷

এদিকে নরেন্দ্র পালের ছেলে জানিয়েছেন, তাঁরা বাবা বিলোনিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হেল্পারের কাজ করতেন৷ গত দু বছর ধরে তিনি নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন৷ কর্মক্ষমতা একেবারেই ছিল না৷ এতে তাঁর বাবা বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন৷ তিনি আর বাঁচতে চান না বলে সবসময় বলতেন৷ আজ সকালে বাবার মৃতদেহ দেহ তিনি হতবাক হয়ে যান, জানান ছেলে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *