কুমুদিনীতে স্মৃতিকাতর শেখ হাসিনা, বাবা এখানে ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন

ঢাকা, ১৪ মার্চ (হি.স.): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলে মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠানে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রদান করেন। জেলার ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন।শেখ হাসিনা কুমুদিনীতে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক তুলে দেওয়ার পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এখানে একবার এসেছিলাম, সেটা ৫৬ বা ৫৭ সালে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমার মা, আরও কয়েকজন ছিলেন। আমরা দীর্ঘ সময় এখানে ছিলেন। এই স্কুল, হাসপাতাল সব ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তারা। খুব ছায়ার মতো আমার এইটুকু স্মৃতি মনে আছে।

তবে মনে আছে এই জায়গা এতো সুন্দর দেখে বাবা বলেছিলেন আমাকে এই কুমুদিনী স্কুলে ভর্তি করে দেবেন। তবে হোস্টেলে রেখে পড়ানো আমার মায়ের খুব একটা মনোপুত ছিল না। তাছাড়া এরপর ৫৮ সালে মার্শাল ’ল হয়। আমার বাবাকে জেলে নিয়ে যায়। আমাদের পড়াশোনা এমনিতেই বন্ধ। পরে আর আসা হয়নি। তবে ৮১ সালে ভারত থেকে দেশে ফেরার পর আমি অনেকবারই এসেছি।এবছর যে চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণ পদক দেওয়া হল তারা হলেন- পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শাহবুদ্দীন আহমেদ। সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এবং জাতীয় কবির পক্ষে কবির নাতনি খিলখিল কাজী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, হোসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দী পুরস্কার নিতে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেন। তাই শেখ রেহানা তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। কুমুদিনী পরিবার ২০১৫ সালে রণদা প্রসাদ স্বর্ণপদক প্রবর্তন করে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আসতে পেরে আজ সত্যি নিজেকে ধন্য মনে করছি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, মা বোনদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেই একাত্তরেই ৭ মে হানাদাররা নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাকে ধরে নিয়ে হত্যা কওে, তাদেও লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবার আর কখনোই তাদের ফিরে পায়নি। স্বজন হারানোর বেদনা যে কত কঠিন, এই বেদনা যে কত যন্ত্রণাদায়ক সেটা আমরা বুঝতে পারি। দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এক হাতে অর্থ উপার্জন করেতেন, আরেক হাতে বিলিয়ে দিতেন। মেয়েদের শিক্ষায়, চিকিৎসায় তিনি অর্থদান করেছেন। মানুষকে মানুষের মতো বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। কুমুদিনী ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে অনেক কাজ করা হচ্ছে। জনগণের সেবায় সবসময় আমাদের সহযোগিতা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েই আমার যাত্রা শুরু। একটাই আলো ছিল, জনগণের ভালোবাসা। সেটা নিয়েই কাজ করেছি। মনে রেখেছি বাবা কী করতে চেয়েছিলেন। মনে রেখেছি তার কাজের একটুকুও যদি আমি করতে পারি সেটাই হবে আমার বড় সাফল্য। বাংলাদেশকে এখন বিশ্ব উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে দেখে। আমরা আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *