BRAKING NEWS

বিএনপি এখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে উদ্যোগী

ঢাকা ১৮ ফেব্রুয়ারি (হি. স.) : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান নেতা করায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, সম্ভবত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর তাগিদ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএনপিতে আমির খসরু ভারতপন্থী হিসেবে চিহ্নিত। প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি বিএনপি-জামায়াত সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে ঢাকায় তাইওয়ানের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অফিস চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে চিনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। যদিও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের নতুন সম্পর্কের সূচনা হয়।

উল্লেখ্য, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় চিন পাকিস্তানকে সক্রিয় সমর্থন দেয়, অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চিন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। চিনের স্বীকৃতি আসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার অব্যবহিত পর। এখন চিনের সঙ্গে আওয়ামি লিগের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ট। বিএনপি ১৫ বছর আগের সেই ‘ভুল’ শোধরানোর চেষ্টা করছে কয়েক বছর ধরে। তাদের ভাষায় অনেকটাই এগিয়েছে। কিন্তু আমির খসরুকে দলের বিদেশ কমিটির প্রধান করার পর দলে আলোচনা হচ্ছে, তারেক ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন আঙ্গিকে তৈরি করতে চান। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভারত নিয়ে ভাবছে দলের শীর্ষ পর্যায়।

বিএনপির ভারতবিরোধী অংশটি মনে করছে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতেই আমির খসরুকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ মাসের গোড়ার দিকে তারেক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন লন্ডন থেকে। আমির খসরুকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিদেশ কমিটিকে পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে। গতকাল এই কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খসরু বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর অর্থ চিনের সঙ্গে সম্পর্ক গৌণ করা হয়। সব দেশের সঙ্গেই বিএনপি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলবে। কিন্তু ভারতবিরোধী অংশ মনে করছে, দলের নতুন বিদেশনীতিতে চিনের গুরুত্ব কমতে পারে। ভারতকে পাশে পেতে সদ্য প্রণীত এই কৌশলের কারণে চিনকে ১৫ বছর আগের সেই বিরোধ মনে করিয়ে দেওয়া হলো, তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রীকে বিদেশ কমিটির প্রধান করে। বিএনপির জ্যেষ্ঠনেতাদের মধ্যেও এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

বিএনপিতে প্রচার আছে, আমীর খসরু মাহমুদই বাংলাদেশে তাইওয়ানের কনসাল অফিস খোলার জন্য দায়ী। আর এ জন্যই তাকে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। বিএনপির বিদেশবিষয়ক কমিটির একাধিক সদস্যও মনে করছেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান করায় চিনের কানে বিষয়টি নতুন করে তুলে দিতে পারে শাসক দলের কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে আবারও সহযোগিতা না করার পথে যেতে পারে চিন।

তবে বিএনপির ভারতপন্থী অংশের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশে তাইওয়ানের কনসাল অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড। এই বোর্ডের আইনের অধীনে নিবন্ধিত নতুন বাণিজ্য প্রতিনিধিত্বমূলক অফিসের মাধ্যমে জনশক্তি আমদানি করার সুযোগ পায় তাইওয়ান। ২০০৯ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় এসে এই কনসাল বন্ধ করে দেয়। ওই সময় পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, তাইওয়ানে কনসাল চালুর পেছনে বিনিয়োগ বোর্ডের ভূমিকা ছিল। এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিনিয়োগ বোর্ড। মাহমুদুর রহমান ছিলেন বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান। মাহমুদুর রহমান বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া তাইওয়ানের কনসাল অফিস হয়নি। সেই মাহমুদুর রহমান তখন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এটা বাণিজ্য সুযোগ সুবিধা ত্বরান্বিত করার অফিস, কূটনীতির সঙ্গে এর কোনও যোগসূত্র নেই। এক-চিন নীতি থেকে বাংলাদেশের সরে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত এটা নয়। আমি মনে করি না চিনের উদ্বেগের কোনও কারণ রয়েছে যে বাংলাদেশ নিজেদের পররাষ্ট্র নীতি পাল্টে ফেলেছে । ভারতপন্থী নেতারা আরও বলেছেন, এ নিয়ে এখন জল ঘোলা করার কোনো অর্থ হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *