BRAKING NEWS

কক্সবাজারে আত্মসমর্পণ সাবেক সাংসদের ১৬ আত্মীয় সহ ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী

বাসুদেব ধর (ঢাকা), ১৬ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : কক্সবাজারের টেকনাফে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন। তারা এসময় ৩ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা ও ৩০টি দেশীয় পিস্তল জমা দেন। আত্মসমর্পণ করা ১০২ জনের মধ্যে কক্সবাজারের সদ্য সাবেক সাংসদ আওয়ামি লিগ নেতা আবদুর রহমান বদির চার ভাই ও ১২ আত্মীয় আছেন। বদিকে গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দিয়ে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বদির স্ত্রী স্বামীর আসনে সাংসদ হয়েছেন।


পুলিশ সূত্র জানায়, কক্সবাজারে সরকারের তালিকাভুক্ত বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন ৭৩ জন। তাঁদের ২৪ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। এই ২৪ জনের মধ্যে আছেন সাবেক সাংসদ বদির চার ভাই আবদুল শুক্কুর, আবদুল আমিন, মোহাম্মদ শফিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল, বদির ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল, ভাগনে সাহেদুর রহমান নিপুসহ ১৬ জন। এ ছাড়া আছেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নুরুল হুদা ও জামাল হোসেন, টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, নারী কাউন্সিলর কহিনুর বেগমের স্বামী শাহ আলম, টেকনাফ সদর ইউপি সদস্য এনামুল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দুই ভাই জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান প্রমুখ।

তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ২ থেকে ১৬টি মামলা আছে। ৭৩ বড় ব্যবসায়ীর বাকি ৪৯ জনের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ছয়জন। বাদবাকি ৪৩ জনের কেউই আত্মসমর্পণ করেননি। এর মধ্যে তালিকার এক নম্বরে থাকা সাবেক সাংসদ বদি নিজেও আত্মসমর্পণ করেননি। তালিকার দুই নম্বরে থাকা সাইফুল করিম বিদেশে অবস্থান করছেন। উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সব কটি তালিকায় ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে আবদুর রহমান বদি ও বদির ৫ ভাই, এক বোনসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয়ের নাম আছে।সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘সেফহোম’ থেকে শীর্ষ ইয়াবাব্যবসায়ীদের কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণ মঞ্চে আনা হয়। মঞ্চের কাছে একটি দোতলা ভবনে তাদের রাখা হয়। আত্মসমর্পণকারীদের দেখতে তাদের স্বজন ও এলাকার হাজারো মানুষ ভিড় জমান।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মাদকের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আগে দেশ বাঁচাতে হবে। আত্মগোপনে থাকা কোনও ইয়াবা ব্যবসায়ী রেহাই পাবে না। বাংলাদেশকে ইয়াবামুক্ত করা হবে। যদি কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সীমান্ত দিয়ে কোনও প্রকার মাদক ও অবৈধ নাগরিক যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। আত্মসমর্পণকারীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আপনারা আল্লাহর কাছে মাফ চান। আপনারা ভালো হয়ে যান।

দেশ ও জাতির ভবিষ্যত গঠনে এগিয়ে আসুন। আর যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেন নাই, তারা দ্রুত আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করুন।বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জেলার তিন সংসদ সদস্যও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।


পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্তত ৩৫ জন গডফাদার রয়েছেন। আত্মসমর্পণকৃতদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের মামলা হবে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *