বিজেপি নেতাদের নয় কর্মীদের দল, মহারাষ্ট্রে বুথ কার্যকর্তাদের সম্মেলনে বললেন অমিত শাহ

পুণে, ৯ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : বিজেপি নেতাদের দল নয়, কর্মীদের দল | কোনও নেতার জন্য নয়, বুথস্তরে কর্মরত কর্মীদের জন্যই নির্বাচনে জয়লাভ হয় | শনিবার মহারাষ্ট্রের পুণের শক্তি কেন্দ্রে বিজেপির বুথ কার্যকর্তাদের সম্মেলনে একথা বলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ |শনিবার মহারাষ্ট্রের পুণের শক্তি কেন্দ্রে বিজেপির বুথ কার্যকর্তাদের সম্মেলন করলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ | ওই সম্মেলনে তিনি বলেন, “দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি সবথেকে আলাদা| বিজেপি নেতাদের দল নয়, কর্মীদের দল| কোনও নেতার জন্য নয়, বুথস্তরে কর্মরত কর্মীদের জন্যই নির্বাচনে জয়লাভ হয়| এই কারণেই অসম, মণিপুর এবং ত্রিপুরায় এখন বিজেপির সরকার|”


বিজেপি জাতপাতের রাজনীতি করে না বলে তিনি বলেন, “ ২০১৯ সালে দেশ একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে| বিগত কয়েক বছরে আমরা পরিবার চালিত দলগুলিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছি| যাঁরা জাতপাতের রাজনীতি করতো সেই সমস্ত দলগুলি এখন দূরে সরে গিয়েছে| তুষ্টিকরণের রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে আমরা এখন বিকাশের নতুন রাজনীতি শুরু করেছি| ২০১৯ সালের নির্বাচন এই উন্নয়নের রাজনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য | উন্নয়নের রাজনীতিতেই দেশ এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বে শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হবে | জোট অথবা ঠগেদের জোটের সরকারের ফলে দেশে আবারও জাতপাত, পরিবারতন্ত্র এবং তুষ্টিকরণের দিকে এগিয়ে যাবে| রাহুল বাবার পরিবার ৫৫ বছর ধরে দেশে শাসন করেছিল| কিন্তু, কোনও পরিবর্তন হয়নি দেশের| মোদী জী ৫৫ মাসের শাসনে যা করে দেখিয়েছেন, ৫৫ বছরেও তা করতে পারেনি কংগ্রেস|”এদিনের সম্মেলেন বাজেট প্রসঙ্গ তুলে অমিত শাহ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করার বাজেট এনেছেন৷ এই সরকার বাজেটে দেশের ১৩ কোটি কৃষককে প্রতি বছর ৬ হাজার টাকা করে দিতে পেরেছে৷ রাহুল বাবা বলছেন, এই ৬ হাজার টাকায় কি হবে? উনি নিজেই বলুন, গত দশ বছরে ওনার সরকার কি দিতে পেরেছে? কংগ্রেস সরকার দশ বছরে একবার ৫৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ মুকুব করেছিল৷ কিন্তু মোদীজি একবছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পৌঁছে দিয়েছেন ৷ দশ বছরে তা ৭৫ লক্ষ কোটি হয়ে যাবে৷ দেশের মধ্যবিত্তদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত করা হয়েছে৷ ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে না৷ দেশের ৭৫ শতাংশ ব্যবসায়ীকে আয়কর থেকে মুক্ত করার কাজ এই বিজেপি সরকার করেছে৷ দেশের ১২ কোটি অসংগঠিত শ্রমিকদের ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার এই কাজ করেছে৷”


এদিন প্রতিরক্ষা খাতের বরাদ্দ তুলে বিজেপি সভাপতি বলেন, “বাজেটে দেশের প্রতিরক্ষা খাতে তিন লক্ষ কোটি টাকার রেকর্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা দায়িত্বে থাকা জওয়ানদের বিজেপি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিগত ৭০ বছর ধরে আমাদের জওয়ানরা এক পদ এক পেনশনের দাবি জানিয়ে আসছিল। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে ওয়ান ব়্যাঙ্ক ওয়ান পেনশনের (ওআরওপি) দাবি পূরণ করেছে। কংগ্রেসের কাছে ওআরওপি মানে ওনলি রাহুল ওনলি প্রিয়াঙ্কা। ২০১৪ সালের পর থেকে বর্তমান সরকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ২০১৪ সালের এমন এক পরিস্থিতি নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার করেছিলেন যখন পাকিস্তানি জঙ্গিরা ভারতের মাটিতে ঢুকে নাশকতা করছিল। এই সকল জঙ্গিরা আমাদের জওয়ানদের হত্যা করে যাচ্ছিল। এর ঠিক দশদিন পরে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে বদলা নেয় সেনাবাহিনী। গোটা বিশ্ব তখন বুঝতে পারল যে দেশে আর মৌনি বাবার সরকার চলছে না। গোটা দুনিয়ান কেবল আমেরিকা এবং ইজরায়েল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল। সেই তালিকায় এবার ঢুকে পড়ল ভারত।”তিনি আরও বলেন, “তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের সংরক্ষণে কোন বিঘ্ন না করে দেশের উচ্চবর্ণ সমাজের চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ এমনকি মেধাবিদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে৷”


এদিনের সম্মেলনে তিনি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরব হন | বলেন, “বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা। অনুপ্রবেশকারী মুক্ত দেশ গড়াই আমাদের সঙ্কল্প। অসমে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এনসিআর কার্যকর করা হয়। এর ফলে প্রায় ৪০ লক্ষ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাহুল গান্ধী এবং তাঁর অনুগামীরা এই সকল অনুপ্রবেশকারীদের মানবাধিকার নিয়ে চিন্তিত। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই দেশের লোকেদের মানবাধিকার নিয়ে আপনারা চিন্তিত নন কেন? মহারাষ্ট্রে যদি ৪৫টি আসন যদি বিজেপি পায় তবে পুরো দেশে প্রত্যেকটি অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমাদের কাছে মা ভারতীর সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে ভোটব্যাঙ্ক দেখছে কংগ্রেস। আর আমরা এদের দেশের উন্নয়নে অন্তরায় হিসেবে দেখছি।”এদিন বর্তমান কেন্দ্র সরকারের উন্নয়ন প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রাথমিক সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে বিজেপি বড় কাজ করেছে। রাহুল বাবা জিজ্ঞেস করেন, পাঁচ বছর কি হয়েছে? পাঁচ বছরে ৬ কোটি লোকের বাড়ি থেকে ধোঁয়া শেষ হয়ে গেছে। ২.৫ কোটি পরিবারে সৌভাগ্য যোজনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে । ১৩ কোটি মানুষ মুদ্রা ঋণ পেয়েছেন । ৮ কোটি মানুষের বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে ৫০ কোটি মানুষকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।এপর্যন্ত ১২ লাখ পরিবার এর সুবিধা পেয়েছেন |”


সেই সঙ্গে তাঁর এদিনের ভাষণে উঠে আসে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন প্রসঙ্গ | এবিষয়ে পূর্বতন সরকারকে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, “মহারাষ্ট্রে এনসিপি এবং কংগ্রেসের দুর্নীতির শাসন শেষ করেছেন ফড়ণবিশ সরকার। আগের সরকার ক্ষমতার নেশায় এতটাই বুদ হয়েছিল যে, জনসমক্ষে কোনও সভায় সঠিক ভাবে ভাষার সঠিক প্রয়োগ করতে ভুলে গিয়েছিল | কিন্তু ফড়ণবিশ সরকার- সংস্কার হোক, সমবায় হোক বা পরিকাঠামো, প্রত্যেক ক্ষেত্রে তার কাজের দ্বারা উদাহরণ উপস্থাপন করেছে । রাজ্যের বিজেপি সরকার মাত্র ৬হাজার কোটি টাকায় ১৬ হাজার গ্রামে জল সরবরাহের কাজ করেছে। আগের সরকার ৭১ হাজার কোটি টাকা খরচ করেও এটা করে দেখাতে পারেনি ।এদিন তিনি দাবি করেন, “২০১৯ সালে বিজেপির জয় নিশ্চিত। এই জয়ের জন্য ১২ থেকে ২৬ এর মধ্যে প্রত্যেক বিজেপি কর্মীকে নিজের ঘরে দলীয় পতাকা লাগাতে হবে। এছাড়া বাইক ব়্যালিরও আয়োজন করতে হবে। বিজেপি শুধুমাত্র ভোটর জন্যই রাজনীতি করে না, নিজেদের মতাদর্শ প্রচারের জন্যও সম্পর্ক তৈরি করে। ”
তিনি বলেন, বর্তমানে বিরোধী দল যে জোটবদ্ধ হয়েছে সেটা কিছুই নয়। এই সব নেতারাদেরই নিজের রাজ্য ২০১৪ সালে আমাদের বুথ কর্মীরা হারিয়েছিল। উত্তর প্রদেশে একটি জোট তৈরি হয়েছে। উত্তর প্রদেশে বিজেপি ৭৩ থেকে ৭৪ টি আসন অর্জন করবে এর একটা আসনও কম হবে না।পুণের ওই সম্মেলনেও তিনি পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণ্ডাবাহিনী ৮০-এরও বেশি বিজেপি কর্মীদের হত্যা করেছে| হিংসার জবাব হিংসায় নয়, এ জন্য আমাদের নির্বাচনী লড়াইয়ে হারাতে হবে| পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে বিজেপিকে জনসভা করতে দেওয়া হচ্ছে না| অথচ একটি টিভি চ্যানেলের স্ট্রিং অপারেশন প্রকাশ্যে আসার পর দেখা গিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা কোনও কারণই নয়| আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পাচ্ছেন| এ সব করেও তিনি নিষ্কৃটি পাবেন না| পশ্চিমবঙ্গের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা নির্বাচনে বিজেপির পাশেই আছেন| যদি মহারাষ্ট্রে ৪৫টি আসন পায় বিজেপি, তাহলে কেরলেও বিজেপির পতাকা উড়তে দেখা যাবে|


তাঁর এদিনের ভাষণে উঠে আসে রামমন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গ | এবিষয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “অযোধ্যায় ওই একই স্থান বৃহদ রামমন্দির নির্মাণের জন্য বিজেপি অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। উত্তরপ্রদেশের আগের সরকার সুপ্রিম কোর্টের জন্য অনুবাদকের কাজ করেনি। রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে ৬ মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ করা হয়। মামলায় শুনানিও দ্রুত হয়। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল সুপ্রিম কোর্টকে ২০১৯ সালের পর মামলার শুনানি করার জন্য আর্জি জানায়। রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে কংগ্রেসের উচিত স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া। তারা কি অযোধ্যায় মন্দির চায়? কেন্দ্র রাম জন্মভূমি ন্যাসকে কেন্দ্র সরকার ৪২ একর অবিতর্কিত জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানিয়েছে। সেই জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিজেপি কাজ করে চলেছে।”সবশেষে তিনি বলেন, “দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং দেশে যে জোট হয়েছে তাতে যেমন কোনও নেতা নেই, তেমন নেই কোনও নীতিও । মায়াবতী বলেছিলেন যে, দেশে শক্তিশালী নয় বাধ্যবাধকতার সরকার চাই । যদিও দেশ চায় শক্তিশালী সরকার | যা বিজেপি আর শ্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়া কেউই দিতে পারে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *