BRAKING NEWS

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে, আমন্ত্রণ পাবে আওয়ামি লিগ ও জাতীয় পার্টিও

ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি (হি.স.): জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ জন সাংসদ (বিএনপি ৬, গণফোরাম ২) এখনও শপথ নেননি। তাদের শপথ-সহ একাদশ সংসদ নির্বাচন পরিস্থিতি এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মতামত জানতে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার আয়োজন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনার তারিখ ও স্থান চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, এই আলোচনায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি সরকারি দল আওয়ামি লিগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলি এবং বর্তমান সংসদের বিরোধী দল এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে, জামায়াতে ইসলামিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

আলোচনায় আমন্ত্রণ জানাতে তালিকা তৈরি করছে ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশকে আলোচনায় ডাকা হতে পারে। এই দলগুলির নেতাদের উপস্থিতি আলোচনাকে কার্যকর করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তবে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামি যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিতর্কিত হওয়ায় তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও আলোচনায় আশা করছে ঐক্যফ্রন্ট।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মতামত জানতেই আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ দলগুলিকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে। ঐক্যফ্রন্টের অপর একজন নেতা জানান, দেশে ভয়ের সংস্কৃতি চলছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধও বলা হয়েছে। নাগরিক সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তি নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। তাই আলোচনায় তাদের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় আছে। আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেকে হয়তো এড়িয়ে যেতে পারেন। তাই প্রতিবাদী রাজনৈতিক দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে চান তারা। আলোচনায় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও নির্বাচনী অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, তারা তাদের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছেন। ঐক্যফ্রন্টের আলোচনার বিষয়ে এখনও কিছু জানেন না। আলোচনার বিষয় ও অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে জানতে হবে। আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের পর বিবেচনা করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

বাম জোটের আরেক শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জাতীয় আলোচনার উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। আমন্ত্রণ পেলে দল ও জোটে আলোচনা করে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া-সহ দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী কারাগারে। গ্রেফতারের ভয়ে অনেক নেতা আত্মগোপনে। এই অবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়, আলোচনা সভার মতো কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায় বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন নিয়ে বিজয়ী আট প্রার্থীর শপথ নেওয়ার বিষয়টি আসতে পারে আলোচনায়। জামায়াতে ইসলামিকে নিয়ে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে টানাপোড়েন এবং অভিন্ন জোট তৈরি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সরকার বিরোধী আন্দোলন, কর্মসূচি, জোট সম্প্রসারণ নিয়েও মতামত পাওয়া যেতে পারে আলোচনায়।

ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন বলেন, সরকারি দল-সহ সব দলকেই আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে সৃষ্ট সংকট সমাধানে সবার সঙ্গেই আলোচনা করতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের অক্টোবরে ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে বিএনপি, গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়। পরে এ জোটে যোগ দেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লিগ। নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা আটটি আসনে বিজয়ী হন। এর মধ্যে ছয়টি আসনে বিএনপি এবং দুটি আসনে গণফোরামের প্রার্থীরা জিতেছেন। তবে সাংসদ হিসেবে এখনো তাঁরা শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *