BRAKING NEWS

ড. কামালের বক্তব্যে ঐক্যফ্রন্টে বিভক্তির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে

বাসুদেব ধর (ঢাকা), ১৩ জানুয়ারি (হি. স.) : জামায়াত নিয়ে বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন-উত্তর রাজনীতি এক নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। শনিবার গণফোরামের নির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, আমরা অতীতেও করিনি, জামায়াতকে নিয়ে আমরা ভবিষ্যতেও রাজনীতি করবো না। বিএনপির ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, জামায়াতকে ছাড়ার জন্য বিএনপিকে বলা যেতে পারে।
রবিবার এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ড. কামাল হোসেন সাহেব জানেন বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আছে, আর জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি আছে। তাদের সঙ্গে তারা আগে থেকেই আছে।

এটা নতুন কোনও বিষয় নয়, নতুন কোনও খবর নয়। কামাল হোসেন সাহেব বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট করেছেন, কাজেই তিনি এখন আবার জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আছে শুনে, মনে হয় যেন তিনি অবাক হচ্ছেন। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আছে এটা জানলে তিনি নির্বাচন করতেন না এমন কথা তো তিনি কোনও সময় বলেননি। ‘জেনেশুনে বিষ করেছি পান’ বিষয়টি এমন। যদি কামাল হোসেন সাহেব বলেন, জামায়াত-বিএনপি সঙ্গে ছিল, এ ধরনের নির্বাচন ঐক্যফ্রন্টের করা ভুল হয়েছে, এই ভুল স্বীকার করে নিলে চলবে। আমাদের দেশের নেতারা একেক সময় একেক কথা বলেন। কামাল হোসেনের বক্তব্য এখানে আমরা স্ববিরোধী বলে মনে করছি। কেননা, তিনি জেনেশুনেই তো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছেন। জামায়াত ছাড়া তো বিএনপি’র কোনও অস্তিত্ব নেই। বিএনপি মানেই জামায়াত, আর জামায়াত মানে বিএনপি। এ অবস্থায় কামাল হোসেন সাহেব জেনেশুনে কেন এত বড় ভুল করলেন। তাকেই সেই ভুলের খেসারত দিতে হবে।ড. কামালের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া যাই হোক, এর মধ্য দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট-এর মধ্যে বিভক্তির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে যে জামায়াতে ইসলাম রয়েছে এটা জেনেশুনেই গণফোরাম বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছে। এখন তারা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে সংসদে যাওয়ার একটি পথ খুঁজছে। সংসদে যোগ দেয়ার প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের শরিক হিসেবে গণফোরামের ড. কামাল হোসেন এখন এক ধরণের চাপের মধ্যে রয়েছেন। বলতে গেলে, রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিকোণ থেকে গণফোরাম এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। কেননা এবার তারা প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসন লাভ করেছে।

তার মধ্যে একটি গণফোরামের নিজস্ব প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়ে। গণফোরাম নামে একটি রাজনৈতিক দল আছে এ কথাটিই মানুষ ভুলে যেতে বসেছিল। সেখানে বিজয়ী দুটি আসন থেকে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের সংসদে পাঠাতে দলের ভেতরেই এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে গণফোরাম যে আসনটিতে ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছে সে আসনে যদি বিএনপি সমর্থন না দিতো, গণফোরামের পক্ষে সেখানে জয়লাভ করা সম্ভব হতো না। গণফোরামের তাগিদ থাকলেও বিএনপি এখনো সংসদে না যাওয়ার প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। এখন জামায়াত নিয়ে ড. কামালের বক্তব্য বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের শিক্ষক ও গবেষক ড. সাঈদ ইফতেখার আহমেদ জানান, পুরো বাংলাদেশের কোথাও গণফোরামের জয়লাভের কোন সম্ভাবনা ছিল না। সেজন্য এবারের জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে গণফোরাম এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল হচ্ছে বিএনপি। গণফোরামের লাভবান হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে গণফোরাম যে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে, সেটাকে তারা ব্যবহার করতে পেরেছে। এবং এটাই ড. কামাল হোসেনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সাফল্য। সুতরাং এখান থেকে ধারণা করা যায় যে গণফোরাম সংসদ বর্জন করবে না। আর তাই সংসদে যাওয়ার জন্য প্রশ্নের উত্তরে ড. সাঈদ ইফতেখার বলেন, বিএনপির মধ্যে যে সংকটটি দেখা যাচ্ছে সেটি হল তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামির প্রতি এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রেও, বিএনপি একটি পথ তৈরির কৌশল হিসেবে জামায়াত প্রসঙ্গটিকে তারা সামনে নিয়ে এসেছে।
এদিকে, বিএনপির সামনে যদি এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, হয় ঐক্যফ্রন্ট না হলে জামায়াতে ইসলামকে বেছে নিতে হবে, তাহলে তাদের সামনে কোন পথটি বাস্তবসম্মত বা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হবে ? এমন গত ১০ বছর ধরে জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল। মতাদর্শের দিক থেকেও জামায়াত ও বিএনপি খুব কাছাকাছি। তারা ঐক্যফ্রন্টের চাইতে জামায়াতকে প্রাধান্য দেবে এবং জামায়াতের সাথে তাদের যে ঐক্য সেটা তারা ধরে রাখতে চেষ্টা করবে। জামায়াতে ইসলামির যে ভোটার গোষ্ঠী বাংলাদেশে রয়েছে, সেটা হারাতে চায় না বিএনপি। এমনকি জামায়াতের পাঁচ থেকে সাত শতাংশ ভোটারের গোষ্ঠী ধরে রাখতে গিয়ে বিএনপি, অমুসলিম সম্প্রদায়ের ১০ বা ১২ শতাংশ ভোটব্যাংক থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *