মাধববাড়িতে পুলিশের গুলিতে ছয় উপজাতি যুবক আহত

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ জানুয়ারী৷৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ডাকা বন্ধে রক্তাক্ত হয় জিরানিয়া মহকুমা৷ এই বন্ধে সামিল হয়েছিল আইএনপিটি, আইপিএফটি ও আইপিএফটি তিপ্রাহা গোষ্ঠি৷ এদিন উৎশৃঙ্খল বন্ধ সমর্থকদের গাড়ি ভাঙচুর, দোকানে আগুন লাগানোর ঘটনায় তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শুধু শূণ্যে গুলি চালিয়ে থেমে থাকেনি৷ বন্ধ সমর্থকদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলিও ছুঁড়েছে৷ তাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ছয় জন৷ গুলিবিদ্ধ ছয়জনের মধ্যে সকলেই উপজাতি অংশের৷ তাঁদের রাজনীতিক পরিচিতি স্পষ্ট হয়নি৷ তাছাড়া, লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ার ফলে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন৷ বন্ধ সমর্থকদের ছুড়া ঢিলে একজন টিএসআর জওয়ানও আহত হয়েছেন৷ গুলিবিদ্ধ ছয়জন ও আহত টিএসআর জওয়ানকে জি বি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ হাসপাতাল সূত্রে খবর, গুলিবিদ্ধ ছয়জনের মধ্যে একজনকে বর্হিরাজ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া আরও দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে৷ এই ঘটনায় বিরোধীরা রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন৷ আইএনপিটি সাধারণ সম্পাদক জগদীশ দেববর্মা ক্ষোভে ফেটে বলেন, বন্ধ পালন করতে গিয়ে এভাবে গুলি চালানোর ঘটনা রাজ্যের ইতিহাসে বিরল৷

অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার জি বি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ খবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, জটিল পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবিলা করা উচিৎ ছিল৷ এদিকে, উত্তেজিত বন্ধ সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাদের উপর পুলিশ কেন গুলি চালালো, সেই প্রশ্ণ উঠেছে৷ এই ঘটনাকে নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে সরকারীভাবে কোন বিবৃতি দেওয়া হয়নি৷ এমনকি, পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার এবং রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের কাছ থেকেও কোন বক্তব্য জানা যায়নি৷ তবে, এদিন জিরানীয়া থেকে শুরু করে খয়েরপুর পর্যন্ত তেমন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বলে স্থানীয় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন৷
মাধববাড়ির ঘটনায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে উপজাতি ভিত্তিক আঞ্চলিক দলগুলি৷ আইএনপিটি এবং আইপিএফটি আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে৷ সূত্রের খবর এদিন রাত এগারটা নাগাদ মুঙ্গিয়াকামী থানার অধীন আঠারোমুড়া এডিসি ভিলেজে জাতীয় সড়কের পাশে জড়ো হয়েছেন বেশ কয়েকজন আইপিএফটি কর্মী৷ বুধবার জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধের পরিকল্পনা করছে তারা৷ ফলে, এই ঘটনায় আবারও হিংসার বিস্তৃতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহারের দাবিতে নেসো পূর্বোত্তর বন্ধের ডাক দেয়৷ এই ডাকে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই জিরানীয়া মহকুমায় আইএনপিটি, আইপিএফটি এবং আইপিএফটি তিপ্রাহা গোষ্ঠি বন্ধ পালনে রাস্তায় নামে৷ শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবেই বন্ধ পালিত হচ্ছিল৷ কিন্তু, সকাল সোয়া দশটা নাগাদ জিরানীয়া মহকুমার দশরামবাড়ী এলাকায় জাতীয় সড়কে পিকেটাররা একটি ম্যাজিক গাড়িকে যাতায়াতে বাধা দেন৷ শুধু তাই নয়, ওই গাড়ির চালককে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ তার কিছুক্ষনের মধ্যে একটি গাড়ি ভাঙচুর চালান পিকেটাররা৷ একই সময়ে জাতীয় সড়কে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পিকেটাররা৷ মুহুর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠে৷ উত্তেজিত বন্ধ সমর্থকরা মাধববাড়ি বাস টার্মিনাল সংলগ্ণ এলাকায় প্রায় ১৭টি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও অধিকাংশ দোকান পুড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে৷
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিরানীয়া এবং রাণীরবাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়৷ কিন্তু, পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল যে টিএসআর বাহিনীকে নামানো হয়৷ জানা গেছে, টিএসআর জওয়ানরা উত্তেজিত বন্ধ সমর্থকদের ব্যারিকেড করে রাখেন৷ কিন্তু, কোনভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না৷ ফলে, জিরানীয়া থানায় এসডিপিও, এসডিএম সহ পুলিশ আধিকারীকরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বৈঠকে বসেন৷
এদিকে, অফিস যাত্রী সহ অন্যান্য যাত্রীরা ওই ঘটনায় ভিতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন৷ ভয়ে যাত্রীরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন৷ পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের নিরাপদে গন্ডব্যে পৌছানোর আশ্বাস দেওয়া হয়৷ এরই মধ্যে খবর দেওয়া সিআরপিএফকে৷ জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন গাড়ি সিআরপিএফ জওয়ান ঘটনাস্থলে পৌছায়৷ উত্তেজিত বন্ধ সমর্থকদের ছত্রখান করার জন্য জল কামান আনার ব্যবস্থা করা হয়৷ কিন্তু, পথে জল কামানের গাড়িটি নষ্ট হয়ে পড়ে৷ এরই মধ্যে পরিস্থিতি আরো উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ বন্ধ সমর্থকদের উপর লাঠি চার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে৷ পাশাপাশি শূণ্যে গুলিও ছুড়ে পুলিশ৷ তাতেও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পুলিশ বন্ধ সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে৷ পুলিশের ছোড়া গুলিতে ছয়জন উপজাতি যুবক আহত হন৷ ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত জনৈক পুলিশ আধিকারীকের দাবি, বন্ধ সমর্থকরা বোমা বিস্ফোরণ করতে পারে এমন গুজব রটেছিল, তাই তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল৷ জিরানীয়া মহকুমার দশরামবাড়ি এলাকায় পুলিশের গুলিতে ছয়জন উপজাতি যুবক আহত হন৷ জানা গেছে, সমেন দেববর্মা, প্রহর দেববর্মা, শঙ্কর দেববর্মা, রবি কুমার দেববর্মা, সুমিত দেববর্মা এবং ললিত মোহন দেববর্মা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে সুমিত দেববর্মার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তাকে বর্হিরাজ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ এছাড়া টিএসআর জওয়ান দীনেশ কুমার আহত অবস্থায় জি বি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, বন্ধ সমর্থকরা গুলটি, তীর, টাক্কাল ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *