BRAKING NEWS

চাকলা রোশনাবাদের প্রশ্ণ

ইতিহাস কি ঘুরিয়া দাঁড়ায়? বিদেশী বিতাড়নের লক্ষ্যে আজ যাঁহারা রাজনীতির ফায়দা তুলিতে অগ্রসর তাহাদের সামনে এখন নতুন প্রশ্ণ তুলিয়া ধরা হইয়াছে৷ ত্রিপুরা রাজ্যের কতখানি আয়তন তাহার ব্যাখ্যা চাওয়া হইয়াছে৷ চাকলা রোশনাবাদ ত্রিপুরা রাজার রাজত্বের অঙ্গীভূত ছিল না এমন প্রমাণ নাই৷ এই ব্যাপারে জোর বিতর্ক উঠিয়াছে৷ দেরীতে হইলেও এই বিতর্কের বা প্রশ্ণের সারবত্তা নাই এমন বলা যাইবে না৷ ত্রিপুরার মহারাজার রাজত্ব পার্বত্য ত্রিপুরা ও সমতল ত্রিপুরা মিলাইয়াই, ইহা ঐতিহাসিক সত্যি ঘটনা৷ তাহার বিস্তর প্রমাণও উঠিয়া আসিয়াছে৷ যদি ইহাই সত্যি হয় তাহা হইলে চাকলা রোশনাবাদ কি করিয়া পাকিস্তান বা বাংলাদেশের অঙ্গীভূত হইল? যেহেতু ত্রিপুরার রিজেন্ট মহারাণী ভারতভুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়াছেন তখন তাহার রাজত্বের পূর্ণ অংশই ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার কথা৷ সেই হিসাবে চাকলা রোশনাবাদ পাকিস্তান বা অধুনা বাংলাদেশের অঙ্গীভূত হইল কিভাবে? স্বাধীনতার সাত দশকেরও বেশী সময় পরে এই বিষয়টি উঠিয়া আসিয়াছে৷ আজ নাগরিকত্ব নিয়া জোর প্রশ্ণ উঠিয়াছে৷ দেশ তোলপাড়৷ বাংলাদেশ হইতে প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশ ঘটিতেছে৷ শুধু বাঙালী অংশের মানুষই নহে উপজাতি অংশের মানুষও ভারতে পাড়ি দিয়া চালিয়াছে৷ উপজাতি দরদী নেতারাই স্বীকার করিতেছেন যে, উপজাতি অংশের মানুষ ভারতে অনুপ্রবেশ করিয়াছে বা করিতেছে৷ সুতরাং শুধু বাঙালী অংশের অনুপ্রবেশকারীদেরই টার্গেট করা হইতেছে কেন এই প্রশ্ণও দেখা দিয়াছে৷

সত্য সন্ধানে কোনও কোনও সামাজিক সংস্থাকে আজ অনেক বেশী অগ্রসর হইতে দেখা যাইতেছে৷ একটি সামাজিক সংস্থা চাকলা রোশনাবাদ নিয়া ইতিমধ্যে সরব হইয়াছে৷ তাহারা মূল ধরিয়া টান দিয়াছে৷ দাবী তুলিয়াছে প্রামাণ্য তথ্য আছে যে চাকলা রোশনাবাদ ত্রিপুরার রাজন্য শাসনের অধীন ছিল৷ রাজ প্রশাসন সেখানে রাজস্ব বা করও আদায় করিত৷ চাকলা রোশনাবাদ তাহা হইলে রাজত্বের অঙ্গীভূত ছিল তাহা তো অস্বীকারের পথ নাই৷ এতদিন কেন এই প্রশ্ণ জোর পাইল না? চাকলা রোশনাবাদ রাজার রাজত্বের অংশ হিসাবে দেখাইতে উৎসাহী হয় নাই কেন্দ্রীয় সরকার৷ কারণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঝুট ঝামেলা মুক্ত দেশ বিভাগই প্রাধান্য পাইয়াছে৷ কিন্তু, আজ সেই ইতিহাসের ডাক পড়িয়াছে৷ প্রমাণের দাবী উঠিয়াছে৷ তথ্য প্রমাণ তুলিয়া দেখানো হইতেছে চাকলা রোশনাবাদ সহ ছিল রাজন্য ত্রিপুরা৷ যদি তাহা সত্যি হয় তাহা হইলে ত্রিপুরায় তো বাঙালীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ উপজাতিরা সংখ্যালঘিষ্ট হইয়া গিয়াছেন এই দাবী তো প্রশ্ণের মুখে দাঁড়াইয়া গেল৷ আসলে, উপজাতি রাজনীতি করিতে গিয়া একশ্রেণীর রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা চাকলা রোশনাবাদের আওয়াজকে চাপা দিয়াই গিয়াছেন৷ উপজাতিদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও বেশী ভূমিকা নিবার দাবীর তো কেউ বিরোধীতা করে নাই৷ কিন্তু, ইতিহাসের সত্যিকে ঘুম পাড়াইয়া ত্রিপুরাকে উপজাতিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল তাহা মানিয়া নেওয়া যায় না৷ রাজ আমলে বাঙালীরা বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত ছিলেন৷ রাজভাষা ছিল বাংলা৷ রাজন্য পৃষ্ঠপোষণায় রচিত ও প্রকাশিত রাজমালাও লেখা হইয়াছে বাংলাতেই৷

ত্রিপুরায় এনআরসি চালুর দাবীতে জোর তৎপরতা চলিতেছে৷ একেবারে সুপ্রিম কোর্টে মামলা গড়াইয়াছে৷ এই যখন অবস্থা তখন কোনও সমাজ সচেতক মানুষ ত্রিপুরার সত্যিকারের ইতিহাস তুলিয়া তাহা প্রতিষ্ঠিত করিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়াছেন৷ চাকলা রোশনাবাদ প্রশ্ণ অনেক কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়াইবার সম্ভাবনাকে উড়াইয়া দেওয়া যায় না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *