সূচনা হল ষষ্ঠ উত্তর পূর্বাঞ্চল যুব উৎসবের, সাফল্য নিয়ে সংশয়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ নভেম্বর৷৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বৈচিত্র্যময়, সাংসৃকতিক ঐতিহ্যের এক ঝলক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে আজ থেকে আগরতলায় শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী ষষ্ঠ উত্তর পূর্বাঞ্চল যুব উৎসব৷ কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই জৌলুস অনেকটাই ছিল না৷ আয়োজনে ত্রুটি না হলেও এদিন মাঠে তার প্রতিফলন দেখা গেল না৷ ফলে, এই যুব উৎসবের সাফল্য নিয়ে উদ্বোধনী দিনেই প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ এদিন এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব শক্তিশালী উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা দেশ গঠন করার জন্য যুবক যুবতীদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান৷

এই উৎসব ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে৷ এই অঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের যুবক যুবতীরা এই উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য এখানে পৌছে গেছেন৷ দুপুরে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে প্রতিযোগী প্রতিযোগিনীদের নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি উমাকান্ত মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে৷ এই বণাঢ্য র্যালি শহরবাসীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়৷ এত কিছু সত্বেও এই উৎসবের সাফল্য নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ এদিন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দর্শক আসন অনেকটাই ফাঁকা ছিল৷ ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিযোগীরা আসেননি বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, আয়োজকদের কাছ থেকে কতজন প্রতিযোগী এসেছেন তার হিসেব পাওয়া যায়নি৷ ফলে, বর্ণময় উৎসবের সাফল্য অর্জন করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে৷

এদিন যুব উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এই উৎসব আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোরকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই হচ্ছে যুব সম্প্রদায়ভুক্ত৷ এরা দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি৷ কোনও দেশে যদি এই সংখ্যায় যুব শক্তি থাকে তবে সেই দেশ সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে বাধ্য৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, উত্তর পূর্বের আট রাজ্যের প্রতিনিধিরাই এই উৎসবে সামিল হয়েছেন৷ এই অঞ্চলের প্রত্যেকের পৃথক পৃথক ভাষা, সংসৃকতি থাকলেও তাদের আচার আচরণ, চিন্তা ভাবনা একই রকম৷ এটাই হচ্ছে ভারতবর্ষ৷ এই অঞ্চলের প্রতিটি রাজ্যই প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতবর্ষকে সবদিক দিয়েই সেরা দেসে পরিণত করার স্বপ্ণ দেখছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই দেশকে এক নম্বর জায়গায় থাকতে হবে৷ কোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলে চলবে না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর পূর্বাঞ্চলকে উন্নয়নের চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যেতে চাইছেন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর লুক ইস্ট পলিসিকে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসিতে রূপান্তরিত করেছেন৷ তিনি বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যুবকদের আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে৷ খেলাধুলা, শিক্ষা, সংসৃকতি সব ক্ষেত্রেই এই অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে৷ মনে রাখতে হবে এই অঞ্চল থেকেই মেরি কম, দীপা কর্মকার, নিষ্ঠা চক্রবর্তীরা বেড়িয়ে এসেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, সংসৃকতির অঙ্গনে উত্তর পূর্বাঞ্চল খুবই সমৃদ্ধ৷ এই সংসৃকতি সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে৷ এই উৎসব শেষ হয়ে যাওয়ার পর ২২ নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যটন উৎসব এখানে শুরু হচ্ছে৷ একের পর এক উৎসব এই অঞ্চলে হচ্ছে যা আগে কখনও হয়নি৷

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব বলেন, আমাদের রাজ্যের ইতিহাস গর্ব করার মতো৷ আতিথেয়তা এখানকার প্রধান ধর্ম৷ সমস্ত কিছুতে মুগ্দ হয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে সাতবার এসেছেন৷  লোকগান, লোকনৃত্য এখানকার সংসৃকতির অঙ্গ৷ এই সংসৃকতি যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ তিনি বলেন, সংসৃকতির প্রসারে রাজ্যের বর্তমান সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে৷ নেশার কবলে পড়ে যুব সমাজ যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান৷

কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রকের সচিব অমরেন্দ্র কুমার দুবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ভুয়সী প্রশংসা করে এই উৎসব থেকে সবাই সুখকর স্মৃতি নিয়ে বাড়ি যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন৷ রাজ্যের মুখ্যসচিব এল কে গুপ্তা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, সংসৃকতির ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চল খুবই সমৃদ্ধ৷ প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব একটা সংসৃকতি রয়েছে৷ রাজ্য পুলিশের ডিজি এ কে শুক্লা বলেন, সংসৃকতি এই রাজ্যের মানুষের রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব সমরজিৎ ভৌমিক৷ এই উৎসবকে সফল করে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুভেচ্ছা বার্র্ত পাঠিয়েছেন৷ ক্রীড়া দপ্তরের সচিব সমরজিৎ ভৌমিক এই বার্তা পাঠ করে শোনান৷ বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এই উৎসবের সাফল্য কামনা করে উত্তর পূর্বাঞ্চলকে আরও এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান, বিশেষ করে ক্রীড়াক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ইতিমধ্যেই সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই অঞ্চলের সাংসৃকতিক ঐতিহ্য সংগীত এবং নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী  যীষ্ণু দেববর্মা, রাজস্বমন্ত্রী এন সি দেববর্মা, শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ, বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া প্রমুখ৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী ফুড হ্যান্ডিক্র্যাফট স্টলের উদ্বোধন করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী সহ বিশিষ্ট অতিথিবর্গ এই স্টলগুলি ঘুরে দেখেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *