দক্ষিণ জেলা সভাধিপতির গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের লাঠিচার্জ, জেলা সুপার ও পুলিশকর্মী সহ আহত ৪২, বিজেপি কর্মীদের উৎশৃঙ্খলতায় রণক্ষেত্র বিলোনীয়া, আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিনিধি, বিলোনীয়া, ১৫ নভেম্বর৷৷ বিজেপি সমর্থকদের উৎশৃঙ্খলতায় বিলোনীয়ায় রণক্ষেত্র রূপ ধারণ করে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ

ইটের আঘাতে দক্ষিণ জেলা সভাধিপতি হিমাংশু রায়ের গাড়ির কাঁচ ভেঙে গেছে৷ ছবি- নিজস্ব৷

রুদ্ররূপ ধারণ করলে লাঠির আঘাতে বিজেপি সমর্থক ও পথচারী এবং দোকানদার মিলে ৩১ জন আহত হয়েছেন৷ পাল্টা হামলায় দক্ষিণ জেলা পুলিশ সুপার সহ আরও ১০ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন৷ এই ঘটনায় বিলোনীয়া শহর জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ জেলার জেলা শাসক কার্যালয়ে জেলা পরিষদের এক বৈঠকের আহ্বান করা হয়৷ জেলা পরিষদের পাঁচ জন সিপিএম সদস্য পদত্যাগ করায় উপনির্বাচনে বিজেপি ওই পাঁচটি আসন দখল করে৷ জেলা পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৭৷ এদিনের বৈঠকে বিলোনীয়ার বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক জেলা পরিষদের পাঁচ বিজেপি সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হন৷ এদিকে, দক্ষিণ জেলা সভাধিপতি হিমাংশু রায়ও সিপিএমের ছয় জন সদস্যদের নিয়ে জেলা শাসক কার্যালয়ের দিকে রওনা হন৷ অভিযোগে জানা গেছে, বুধবার রাতে দক্ষিণ জেলার সভাধিপতির বাড়িতে দুষৃকতি হামলা ও প্রাণ নাশের হুমকির কারণে এদিন পুলিশ তাদের এসকর্ট করে জেলা শাসকের অফিসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল৷ এসি অফিসের কাছেই বিজেপি সমর্থকরা বিশাল মাত্রায় জড়ো হন৷ পুলিশের কাছে এই খবর আগেই এসেছিল তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল৷

জানা গেছে, জেলা সভাধিপতির গড়ির এসপি অফিস অতিক্রম করে যাওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত বিজেপি সমর্থকরা তাদের পথ আটকায়৷ কোনও ভাবেই তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ৷ তখন পুলিশ বিজেপি সমর্থকদের পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো সত্বেও জেলা সভাধিপতির গাড়ি সেখান থেকে যেতে দেওয়া হচ্ছিলনা৷ অভিযোগে জানা গেছে, ওই সময় ভিড়ের মধ্য থেকে হঠাৎ জেলা সভাধিপতির গাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে শুরু হয়৷ তাতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গিয়ে দক্ষিণ জেলা সভাধিপতি ও সিপিএমের ছয় সদস্যকে কর্ডন করে এসপি অফিসে নিরাপদে নিয়ে যান৷ কিন্তু তখন সেখানে উপস্থিত বিজেপি সমর্থকরা আরোও উত্তপ্ত হয়ে উঠেন৷ এক সময় তারা মারমুখি হয়ে উঠেন বলে দাবি পুলিশের৷ উত্তেজিত বিজেপি সমর্থকদের সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য পুলিশ বারবার অনুরোধ জানায়৷ কিন্তু, পুলিশের অনুরোধে তারা সায় দেয় নি বরং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন৷ তাতে দক্ষিণ জেলা পুলিশ সুপার জৈল সিং মিনা সহ আরও ১০ জন পুলিশ কর্মী আহত হন৷ এই পরিস্থিতিতে পুলিশ উত্তেজিত বিজেপি সমর্থকদের ছত্রখান করতে লাঠি চার্জ শুরু করেন৷ সাথে কাদানো গ্যাসও ছোঁরা হয়৷ উত্তেজিত বিজেপি সমর্থকদের ছত্রখান করতে গিয়ে লাঠি চার্জে পথচারী ও স্থানিয় দোকানদার আহত হন৷ কারণ, তারা ওই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেঁসে যান৷ জানা গেছে, বিজেপি কর্মী, পথচারী ও স্থানীয় দোকানদার মিলে মোট ৩১ জন আহত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ২৮ জনকে বিলোনীয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ বাকি তিন জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের গোমতী জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ এই তিন জনের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন৷ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক রকি পাল আহত হন৷

এদিকে এই ঘটনায় দক্ষিণ জেলা সভাধিপতি ও সিপিএমের ছয় সদস্য দক্ষিণ জেলা শাসকের অফিসে যেতে  পারেননি৷ ফলে, ওই সভা এদিন বাতিল করা হয়৷ এদিকে, এই ঘটনায় বিজেপির দক্ষিণ জেলা কমিটির পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ বিলোনীয়ার বিধায়ক, মন্ডল সভাপতি এবং বিজেপির দক্ষিণ জেলা সভাপতি সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, বাম মার্গিয় পুলিশ অফিসারদের কারণেই আজকে এই অনভিপ্রেত ঘটনাটি ঘটেছে৷ সিপিএম দক্ষিণ জেলা কমিটি এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘটনা গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ বলে তীব্র বিষোদগার করেছে৷ সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমন্ডলী এক বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি নূ্যনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে শাসক দল বিজেপি’র নেতৃত্ব তাদের দলের দুসৃকতিকারীদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর বার বার এই ধরনের প্রাণঘাতি বেপরোয়া হামলা সংগঠিত করা থেকে নিবৃত করত৷ এদিনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিএম৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *