BRAKING NEWS

স্পাইস জেটের পর ইন্ডিগো পরিষেবা গুটিয়ে নিতে চলেছে, টানা তিনদিন টিকিট নেই, অসহায় রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর৷৷ ভীষণ অসহায় অবস্থা রাজ্যের৷ স্পাইসজেটের পর ইন্ডিগোও বিমান পরিষেবা গুটিয়ে নিতে চলেছে৷ দূর্গোৎসবের আগে থেকেই আকাশপথে বিমান টিকিটের আকাশছোঁয়া মূল্যের ছ্যাকা রাজ্যবাসীকে সহ্য করতে হচ্ছে৷ আগামী তিন দিন কলকাতা যাওয়ার সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিরও মোকাবিলা করছেন রাজ্যবাসী৷ কিন্তু, ইন্ডিগো পরিষেবা গুটিয়ে নিলে রাজ্য এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, তা এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে৷ অথচ, রাজ্য সরকারের অসহায়ভাবে দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া কোন উপায় দেখা যাচ্ছে না৷ কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে বিমানের সংখ্যা বাড়ানোর আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না৷

রাজ্যে বর্তমানে প্রতিদিন ১০টি বিমান ওঠা-নামা করছে৷ ইন্ডিগোর ৮টি এবং এয়ার ইন্ডিয়ার ২টি বিমান৷ কিন্তু, আগে ১৪টি বিমান প্রতিদিন ওঠা-নামা করত৷ গত এপ্রিলে ‘উড়ান’ প্রকল্পের অধীন এয়ার ডেকান ৭ দিন রাজ্যে পরিষেবা দিয়েছিল৷ কলকাতা থেকে আগরতলা হয়ে শিলং ও ডিমাপুর৷ কিন্তু, ৭ দিন পর বিনা নোটিশে তারা পরিষেবা বন্ধ করে দেয়৷ অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক গত অক্টোবরে পুণরায় এয়ার ডেকানকে পরিষেবা দিতে নির্দেশ দিলেও তারা এগিয়ে আসেনি৷ সংস্থার দাবি, শিলং ও ডিমাপুর রুটে যাত্রী নেই, তাই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়৷

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ইন্ডিগো ২টি বিমান প্রত্যাহার করার আগে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানায়নি৷ সূত্রের দাবি, ইন্ডিগো আরও দুটি বিমান বাড়াবে বলেছিল৷ তার বদলে দুটি বিমান প্রত্যাহার করে নেয়৷ তাতে, রাজ্যে বিমানের টিকিটের ভীষণ সংকট দেখা দিয়েছিল৷ সেই সঙ্কট এখনও স্বাভাবিক হয়নি৷ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অতিরিক্ত বিমান চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন৷ কিন্তু, ওই চিঠির এখনো উত্তর আসেনি৷ সূত্রের আরো খবর, রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীকে এবং পরিবহন সচিব অসামরিক বিমান পরিবহন সচিবকে অতিরিক্ত বিমান চেয়ে চিঠি দিয়েছেন৷ কিন্তু, এখনো পর্যন্ত চিঠির কোন উত্তর মিলেনি বলে সূত্রের দাবি৷

বিমান পরিষেবা নিয়ে এই পরিস্থিতি রাজ্যের জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনছে বলেই মনে হচ্ছে৷ সমালোচকদের মতে, ইন্ডিগো পরিষেবা গুটিয়ে নিলে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই৷ এর পেছনে যুক্তি, পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরায় বিমানের জ্বালানি তেলের মূল্য অনেক বেশি৷ কারণ, এরাজ্যে জ্বালানি তেলে কর পূর্বোত্তরের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি৷ তথ্য অনুসারে, জ্বালানি তেলে অসমে ভ্যাট ৫ শতাংশ, মিজোরামেও ৫ শতাংশ৷ সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, বাগডোগরায় বিকেল তিনটার পর বিমানের জ্বালানি তেলে ভ্যাট মাত্র ১ শতাংশ৷ অথচ, ত্রিপুরাতে বিমানের জ্বালানি তেলে ভ্যাট ১৮ শতাংশ এবং সেস ২ শতাংশ সংগ্রহ করছে সরকার৷ একের পর এক বিমান সংস্থা পরিষেবা গুটিয়ে নেওয়ার পেছনে এই কারণ অন্যতম বলে মনে করা হচ্ছে৷

তাছাড়া, অসামরিক বিমান পরিবহন সংক্রান্ত নীতিও রাজ্যে বিমান পরিষেবা গুটিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কারণ হতে পারে৷ সূত্রের খবর, ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন পলিসি ১৯৯৪ অনুসারে প্রত্যেক বিমান পরিবহন সংস্থাকে ন্যুনতম ১০ শতাংশ পরিষেবা পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিকে দেওয়ার নিয়ম ছিল৷ তাতে, পূর্বোত্তরের ৮টি রাজ্যের সাথে পোর্ট ব্লেয়ারকেও যুক্ত করা হয়েছিল৷ কিন্তু, ২০১৬ সালে সেই নীতি সংশোধন করে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সে মোতাবেক ১০ শতাংশ বাধ্যতামূলক পরিষেবা দেওয়ার নিয়ম শিথিল করে ৬ শতাংশ করা হয়৷ সাথে কেরালা, উত্তরাখন্ড এবং হিমাচল প্রদেশকে যুক্ত করা হয়েছে৷ ফলে, বিমান পরিবহন সংস্থাগুলি তাদের পরিষেবার পরিধি কমিয়ে দেয় বিনা নোটিশে এবং এর মাশুল দিতে হচ্ছে ত্রিপুরাকে, এমনটাই মনে হচ্ছে৷

সংবাদ লেখার সময়ে ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা গেছে, আগামী তিনদিন বিমানের কোন টিকিট নেই৷ কলকাতা যাওয়ার জন্য ১৮ নভেম্বর ইন্ডিগোর দুটি বিমানে মাত্র একটি করে এবং এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি বিমানে ৪টি করে টিকিট অবশিষ্ট রয়েছে৷ ১৯ নভেম্বর থেকে টানা দুইদিন বিমানে সীমিত আসন অবশিষ্ট রয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে বর্হিরাজ্যে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়৷ অথচ, রাজ্য সরকারের অসহায়ভাবে দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *