BRAKING NEWS

নাগরিক সংশোধনী বিল : মানুষকে বিপথে পরিচালিত করা হচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে বলেছে বিজেপি

গুয়াহাটি, ১৪ নভেম্বর, (হি.স) : অসমের বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করতে না পারলে সে দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হবেন বদরউদ্দিন আজমল। আজ বুধবার গুয়াহাটিতে বিজেপির প্রদেশ সদর দফতর অটলবিহারী বাজপেয়ী ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে এভাবেই বক্তব্য পেশ করেছেন দলের অন্যতম প্রবক্তা তথা অসম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের অধ্যক্ষ জয়ন্তমল্ল বরুয়া।

তিনি বলেন, হিন্দু বাংলাদেশি ইছ্যু নিয়ে অসমকে অস্থির করার ষড়যন্ত্ৰ রচনা করেছেন কংগ্ৰেসের জনৈক প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী। সময়মতো প্ৰাক্তন এই মন্ত্ৰীর নাম খোলসা করবেন বলেও জানান জয়ন্তমল্ল। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপি কখনও অসমকে কাশ্মীর হতে দেবে না, দ্বিতীয় ত্রিপুরাও নয়। তাঁর অভিযোগ, বদরউদ্দিন অজমলের এআইইউডিএফ এবং কংগ্ৰেস গাঁটছড়া বেঁধে অসমে দ্বিতীয় কাশ্মীর তৈরি করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। তাই রাজ্যের মানুষকে অপপ্রচারকারী গ্যাঙের অন্তর্নিহিত অ্যাজেন্ডাগুলো এখনই বুঝতে হবে, নইলে সমূহ বিপদ। আবেগে ভেসে অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খপ্পরে পড়লে খুব শিগগির অসমের মুখ্যমন্ত্রী হবেন আজমল। এর পর রাজ্যের পরিস্থিতি কী হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, বলেছেন বিজেপি প্রবক্তা জয়ন্তমল্ল বরুয়া।

ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, অসমের জনবিন্যাস দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। ইতিমধ্যে মুসলমানের জনসংখ্যা ৩৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, অসমকে কারা দ্বিতীয় কাশ্মীর বানাতে ষড়যন্ত্ৰ করছে তা রাজ্যের মানুষকে বুঝতে হবে।

জয়ন্ত বলেন, কংগ্ৰেসের কালো টাকায় অসমে বহু সংগঠনের জন্ম হয়েছে। অসম আন্দোলনের বিরোধিতা যারা করেছিল, সেই আমসু (সারা অসম মুসলিম ছাত্র সংস্থা) কী করে জাতীয় সংগঠন হয়? প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির প্রদেশ মুখপাত্ৰ জয়ন্তমল্ল বরুয়া।

বলেন, নাগরিক সংশোধনী বিল পাশ হলে অসমে ১ কোটি ৯০ লক্ষ বাংলাদেশি আসবে বলে অপপ্রচার চালিয়েছে একাংশ সংগঠন। রাজ্যের জনসাধারণকে বিপথে পরিচালিত করছে এই সব সংগঠন। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি হল খোদ বাংলাদেশেই হিন্দুর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ। তা হলে এত সংখ্যার হিন্দু অসমে চলে আসবেন বলে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে তার বদউদ্দেশ্য কী তা বুঝতে হবে রাজ্যের জনসাধারণকে। বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অসমের সীমা মাত্র ২৬২ কিলোমিটার। অথচ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ২,২৭০ কিলোমিটার, ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৫ কিলোমিটার, মেঘালয়ের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। তাই ১.৯০ কোটি হিন্দু বাংলাদেশ থেকে অসমে চলে আসবেন বলে আজব তথ্য তুলে ধরার অন্তরালে রহস্যজনক অ্যাজেন্ডা লুকিয়ে আছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে না গিয়ে রাজপথে কেন আন্দোলন করা হচ্ছে? এর পিছনেও রহস্য রয়েছে বলে মনে করেন জয়ন্তমল্ল বরুয়া।

তিনি বলেন, কোনও হিন্দু বিপদে পড়লে তাঁকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা সংবিধানেই বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা মানে সংবিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা। কেননা এই আইন ১৯৫৫-এর আইন। বিলের মাধ্যমে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনের বছর ১১ থেকে ৬ বছর করতে চাইছে।

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মানুষকে ঐতিহাসিক তথ্যও ভুললে চলবে না বলে স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, দেশ যেহেতু ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয়েছে, তাই ভারতবর্ষকে হিন্দুদের আশ্রয় এবং সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে সংবিধানের গণ্ডিতে এনেছেন তদানীন্তন কংগ্রেসি নেতারা। তদানীন্তন কংগ্রেস নেতৃবর্গ কর্তৃক প্রণীত ভারতীয় সংবিধানে এ ধরনের বহু দফা লিপিবদ্ধ রয়েছে। যার উদাহরণ ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন। অতএব, এ দেশে হিন্দুদের আশ্রয় এবং সুরক্ষা দেওয়া ভারতের নৈতিক দায়িত্ব।

জয়ন্তমল্ল বরুয়া বলেন, অসমের জনবিন্যাস বিজেপি বোঝে। রামধেনুসদৃশ মিত্রতা করে খিলঞ্জিয়া (ভূমিপুত্র)-দের স্বার্থে রাজ্যে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে খিলঞ্জিয়াদের অস্তিত্ব রক্ষায় কায়োমনোবাক্যে কাজ করছে সরকার। আবেগের বশে কখনও দেশের উন্নতি হয় না। তাই ১৯৮৫ সালের মতো আবেগে ভাসলে চলবে না। বাস্তব পরিস্থিতি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে, বলেছেন বিজেপি-র প্রদেশ প্রবক্তা জয়ন্তমল্ল বরুয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *