গুয়াহাটি রেলস্টেশনে জিআরপি-র হাতে আটক ৩১ বাংলাদেশি নাগরিক

গুয়াহাটি, ১৫ অক্টোবর, (হি.স.) : গুয়াহাটি রেলস্টেশনে আজ সোমবার রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিক। এদিন সকাল প্রায় দশটা নাগাদ এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে রুটিন চেকিঙের সময় জিআরপি-র এক দল সন্দেহের বশে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জেরার সময় তাদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ নথিপত্র চাইলে কিছুই দেখাতে পারেনি তাঁরা। ফলে তাদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত হয়ে আটক করে থানায় নিয়ে যায় জিআরপি-র দল।
জিআরপি-র পদস্থ অফিসার ইফতিকার আলি জানান, থানায় নিয়ে আসার পর ধৃতরা স্বীকার করেছে তারা মূলত বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁদের জেরায় ধৃত জনৈক সুলেমান আলি সারোয়ার (৩৯) নাকি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তারা অবৈধভাবে ভারতে প্ৰবেশ করে বেঙ্গালুরু গিয়েছিল। সেখানে গত প্রায় বছর চারেক শ্ৰমিক হিসেবে কৰ্মরত ছিল। ধৃতরা জানিয়েছে, বাংলাদেশের জনৈক ফারুখ আলি নামের দালালের সহায়তায় তারা বেঙ্গালুরু থেকে ব্যাঙ্গালোর এক্সপ্ৰেসে চড়ে গুয়াহাটি এসেছে। আজ তাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্ৰেসে ত্ৰিপুরার রাজধানী আগরতলায় যাওয়ার কথা ছিল। আগরতলা থেকে ত্ৰিপুরার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। এদিকে গুয়াহাটি রেলস্টেশনে এই সব বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে দেখে দালাল ফারুখ ফেরার হয়ে গেছে বলে জানান জিআরপি অফিসার ইফতিকার আলি।
তিনি জানান, পুলিশি জেরায় সুলেমান আলি নাকি আরও জানিয়েছে, সে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার নাগরিক। শৈশবে মা-বাবার সঙ্গে অবৈধভাবে ভারতে প্ৰবেশ করে নয়াদিল্লি যায়। পরবর্তীতে মা ও বাবার মৃত্যুর পর গত ২২ বছর ধরে সে দিল্লির পাটোয়াড়িয়াশরাই এলাকায় বসবাস করতে থাকে। সেখানে থেকেই সে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ কয়েকটি নথিপত্ৰ তৈরি করিয়েছে। দিল্লিতে অবস্থানকালে সে ইতিমধ্যে তিন-তিনবার নির্বাচনে ভোটও দিয়েছে। জেরায় সুলেমান আরও জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালে সে ভারতীয় নাগরিকত্বের নথিপত্ৰ তৈরি করিয়েছিল। তাছাড়া ভারতের কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় তার অ্যাকাউন্ট এবং দিল্লিতে নিজের নামে একটি ফ্ল্যাটও আছে বলে জানিয়েছে ধৃত এই বাংলাদেশি নাগরিক সুলেমান আলি সারোয়ার।
ধৃত আরেক বাংলাদেশি নাগরিক মহম্মদ জাহাঙ্গির আলি (৩৮) তার স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, সে নাকি বাংলাদেশের ত্ৰিশপুর জেলার বাসিন্দা। গত প্রায় চার বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পার হয়ে সে ভারত ভূখণ্ডে প্ৰবেশ করেছিল। সীমান্ত অতিক্রম করার বিনিময়ে সে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় এক দালালকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল।
আরেক ধৃত মহম্মদ আলম খান (৩৬) নামে বাংলাদেশের বগারথ জেলার নাগরিক। সে পুলিশকে বলেছে, বাংলাদেশে তাদের অশেষ কষ্টে জীবনধারণ করতে হচ্ছিল। একদিন এক দালালের সঙ্গে তার দেখা হয়। ওই দালাল ভারতে তাকে কাজ দেওয়ার প্ৰলোভন দিয়ে অবৈধভাবে এই দেশে প্ৰবেশ করিয়েছিল। আলম খানও জানিয়েছে, দালালকে ৫,০০০ টাকা দিলে সে তাকে কাটাতারের বেড়ার নীচে দিয়ে ভারতে প্ৰবেশ করিয়েছিল।
এরা জানিয়েছে, এতদিন তাদের ভালোয় ভালোয়ই দিন কাটছিল। কিন্তু দেশে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে আরেক দালাল তাদের ত্ৰিপুরা সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠানোর সমস্ত প্ৰক্ৰিয়া সম্পন্ন করেছিল। সে বাংলাদেশের নাগরিক ফারুখ আলি। ফারুখ গুয়াহাটি রেলস্টেশনে এসেছিল আগরতলা পর্যন্ত তাদের নিয়ে যেতে। কিন্তু আজ সকালে ধরা পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সে গা ঢাকা দিয়েছে।
রেল পুলিশের পদস্থ অফিসার ইফতিকার আলি আরও জানিয়েছেন, দুর্গাপুজো উপলক্ষে স্টেশনে তালাশি অভিযান তীব্র করা হয়েছে। ওই অভিযানেই আজ এই সব বাংলাদেশি নাগরককে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, ধৃত বাংলাদেশিদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ৮ জন মহিলা এবং ১৩টি শিশু আছে। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অফিসার ইফতিকার আলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *