BRAKING NEWS

বেতন কাঠামো হুবহু কেন্দ্রের ধাঁচেই ঃ সাংবাদিক সম্মেলনে দাবী, সপ্তমে ০.৩২ শতাংশ বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৯ অক্টোবর৷৷ রাজ্যের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনক্রম ০.৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, নতুন বেতনক্রমে

মঙ্গলবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে সপ্তম বেতন কমিশন ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সাথে আছেন উপমুখ্যমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন, রাজস্ব মন্ত্রী এন সি দেববর্মা এবং শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ ছবি নিজস্ব৷

গ্রুপ সি কর্মচারী শুরুতেই সর্বনিম্ন বেতন পাবেন প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মচারী পাবেন ১৬ হাজার টাকা৷ নয়া এই বেতনক্রম ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে৷ মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভার্মা কমিটির সুপারিশ মেনে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকরে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিলো রাজ্য সরকার৷ তবে, আপাতত কোনও ভাতা সংশোধন হচ্ছে না৷ তেমনিই, ১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে এই সুযোগ দেওয়া যায়নি৷ নয়া বেতনক্রম লাগু করতে রাজ্য সরকারের প্রতিমাসে অতিরিক্ত ৭৬ কোটি টাকা খরচ হবে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী সহ জোট মন্ত্রিসভার পাঁচ সদস্য সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, কেন্দ্রীয় বেতনক্রম হুবহু রাজ্যে লাগু করা হচ্ছে৷ সরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের পাশাপাশি পেনসনার্সরাও তাতে উপকৃত হবেন৷

নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুরণে সপ্তম বেতন কমিশন লাগু করা হচ্ছে বলে দাবি জোট মন্ত্রিসভার৷ সেই মোতাবেক রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতনক্রম দেওয়ার জন্য পিপি ভার্মার নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার রিপোর্ট রাজ্য সরকার কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে এই রিপোর্ট কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ এই সুপারিশ মোতাবেক কর্মচারীদের বেতনক্রমে হবে ত্রিপুরা স্টেট পে মেট্রিক্স ২০১৮ অনুযায়ী৷ তা ত্রিপুরা স্টেট পে মেট্রিক্স ২০১৭ এর স্থলাভিষিক্ত হবে৷ পে মেট্রিক্স ২০১৮ অনুযায়ী কর্মচারীদের বেতনক্রমের মাল্টিপ্লিকেশন ফ্যাক্টর ২২৫ এর পরিবর্তে ২৫৭ হবে৷ ফলে, একজন গ্রুপ ডি কর্মচারী যারা আগে শুরুতে ১৪০৪০ টাকা পেতেন তারা নয়া বেতনক্রম কার্যকর হলে ১৬ হাজার টাকা পাবেন৷ তেমনিই একজন গ্রুপ সি কর্মচারী যারা আগে শুরুতে ১৭৩৩০ টাকা পেতেন নয়া বেতনক্রম অনুসারে ১৮ হাজার টাকা পাবেন৷

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, রাজস্বমন্ত্রী এন সি দেববর্মা, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন ভার্মা কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ এবং এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য তুলে ধরেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের কথায়, নির্বাচনের আগেই বিজেপি আইপিএফটি জোট তাদের ভিশন ডকুমেন্টে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতনক্রম চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো৷ সে অনুযায়ী নতুন সরকার তাদের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই এই প্রতিশ্রুতি রূপায়ণের লক্ষ্যে আসামের প্রাক্তন মুখ্যসচিব পি পি ভার্মার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে৷ এই কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত থাকলেও তারা গত ৫ অক্টোবর তাদের রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেয়৷ রাজ্য সরকারও খুব দ্রুত এই রিপোর্ট গ্রহণ করে তা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী শারদোৎসবের প্রাক্কালে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্য এই ঘোষণা দিতে পারায় রাজ্য সরকাররে পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানান৷

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে তাতেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বোঝা নিয়ে নতুন সরকার তাদের কাজ শুরু করেছে৷ এরপরও ত্রিপুরাকে নানা দিক দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে ঘাটতিশূণ্য বাজেট পেশ করা হয়েছে৷ কয়েকদিন আগে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্য হ্রাস করার জন্য রাজ্য সরকারও কেন্দ্রের সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে তাদের অংশের কর থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সা হ্রাস করেছে৷ সব মিলিয়ে রাজ্যে পেট্রোল ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৫ টাকা হ্রাস পেয়েছে৷ এতে জনগণেরক উপর যে বোঝা চেপেছিলো তা অনেকটাই কমেছে৷ তাঁর কথায়, কর্মচারীদের জন্য পূজার অগ্রিম এবং অনুদান এবার বাড়ানো হয়েছে৷ সর্বশেষ আজ রাজ্য মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে সপ্তম পে কমিশনের আদলে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের কল্যাণে রাজ্য সরকার যে কাজ করে চলেছে এটাই হচ্ছে তার দৃষ্টান্ত৷ তিনি বলেন, পূজার প্রাক মুহূর্তে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করা হলো৷

এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন,  যে সমস্ত কর্মচারী সংগঠন ভার্মা কমিটির কাছে তাদের বক্তব্য পেশ করেছিলো তারা সবাই কর্মচারীদের বেতন গুণিতক হারে ২.২৫ এর পরিবর্তে ২.৫৭ করার দাবি জানিয়েছিলো৷ তাই মেনে নেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে তারা একজন গ্রুপ সি কর্মচারীর নূ্যনতম বেতন ১৮ হাজার টাকা করার এবং একজন গ্রুপ ডি এর নূ্যনতম বেতন ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছিলো৷ তাই মেনে নেওয়া হয়েছে৷ উপমুখ্যমন্ত্রীর কথায়, প্রতিকূল আর্থিক অবস্থার মধ্যে ভার্মা কমিটির রিপোর্ট কার্যকর করা হয়েছে৷ এই সরকার মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ সৎ ইচ্ছা এবং সাহস থাকলে যে অনেক কিছুই করার যায় তা আজ ফের প্রমাণিত হলো৷ তিনি জানান, এই রিপোর্ট কার্যকর করার পর কর্মচারীদের বেতনের ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য থাকলে এনামলি কমিটি গঠন করা হবে৷ রাজস্বমন্ত্রী এন সি দেববর্মা আনুপাতিক হারে বিভিন্ন রাজ্যে কর্মচারীদের যে সংখ্যা রয়েছে তার তথ্য তুলে ধরে বলেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার আজকের সিদ্ধান্তে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হলো৷

শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ পরিসংখ্যান দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, এই মুহূর্তে রাজ্যে এ, বি, সি এবং ডি এই চারটি গ্রুপে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৫২ জন কর্মচারী রয়েছেন৷ স্থির বেতনের ডি আর ডব্লিউ, এম আর ডব্লিউ এবং পার্ট টাইম ওয়ার্কার রয়েছে ৪৪ হাজার ৩৮৮ জন৷ পেনশন প্রাপকের সংখ্যা হচ্ছে ৬১ হাজার ২৩৪ জন৷ প্রতি পরিবার পিছু ৩ জন করে ধরে নিলে রাজ্যের ৬ লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষ এই সিদ্ধান্তের ফলে উপকৃত হবেন৷ তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রতি মাসে বেতন খাতে রাজ্য সরকারের ব্যয় হবে ৬৪৪ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ভার্মা কমিটির রিপোর্ট কার্যকর করতে গিয়ে প্রতি মাসে ব্যয় হবে অতিরিক্ত ৭৬ কোটি টাকা৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, ৫২টি কর্মচারী সংগঠন এবং ৭ জন পৃথকভাবে ভার্মা কমিটির কাছে তাদের বক্তব্য পেশ করে৷ তাই ভার্মা কমিটিকে প্রথমে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা তা পারেনি৷ পরবর্তী সময়ে এই কমিটির মেয়াদ আরও বাড়ানো হলেও তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের রিপোর্ট পেশ করে রাজ্য সরকারও খুব দ্রুত এই রিপোর্ট কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, নভেম্বরের মধ্যে নয়া বেতনক্রম কার্যকর সম্ভব না হলেও ডিসেম্বরে রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীরা নিশ্চয়ই এর সুযোগ পাবেন৷ তিনি জানান, কোনও ভাতা সংশোধন করা হয়নি৷ তেমনিই মহার্ঘ্যভাতাও দেওয়া হয়নি৷ তাছাড়া, ১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে এই নয়া বেতনক্রম লাগু করাও সম্ভব হয়নি৷ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণের বক্তব্য, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের সাথে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করেছে৷ কেন্দ্র-রাজ্য সমকাজে সমবেতন এই নীতিতে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে, নয়া বেতনক্রম ১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে লাগু করা গেলে খুবই খুশি হতাম৷ কিন্তু, আর্থিক অসঙ্গতির কারণে তা সম্ভব হয়নি৷

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ নয়া বেতনক্রম অনুসারে কর্মচারীদের বাড়তি পাওনার বিস্তারিত হিসাব দিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, একজন গ্রুপ ডি কর্মচারী নয়া বেতনক্রম অনুসারে শুরুতে গড়ে ১৯৬০টাকা বেশি পাবেন৷ তেমনিই ১০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ২০৮৮ টাকা, ২০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ২৪৮০ টাকা, ৩০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৩২৫৩ টাকা এবং ৪০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৪২৯৩ টাকা বেশি পাবেন৷ তেমনিই একজন গ্রুপ সি কর্মচারী নয়া বেতনক্রম অনুসারে শুরুতে গড়ে ৬৭০ টাকা বেশি পাবেন৷ তেমনিই ১০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৩৭৭৮ টাকা, ২০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৪১৯৮ টাকা, ৩০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৬৩৪৫ টাকা এবং ৪০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৮৫২৮ টাকা বেশি পাবেন৷ একই ভাবে একজন গ্রুপ ডি কর্মচারী নয়া বেতনক্রম অনুসারে শুরুতে গড়ে ৪৬৮০ টাকা বেশি পাবেন৷ তেমনিই ১০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৬৭৪৩ টাকা, ২০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ৯০৫৩ টাকা এবং ৩০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ১২১৫৩ বেশি পাবেন৷ তাছাড়া, একজন গ্রুপ এ কর্মচারী নয়া বেতনক্রম অনুসারে শুরুতে গড়ে ৬৭৫০ টাকা বেশি পাবেন৷ তেমনিই ১০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ১২৭৪৩ টাকা এবং ২০ বছর ধরে যারা চাকরি করছেন তাঁরা ১৬২৪৩ টাকা বেশি পাবেন৷

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন এদিন আরও জানান, পেনশনার্সদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে৷ সেই মোতাবেক তাদের পেনসনের নয়াক্রম নির্ধারণ করা হবে৷ তাঁর কথায়, কর্মচারীরা তাদের বেতনক্রমের মধ্যে যে সমস্ত ভাতা পেয়ে থাকেন সেগুলি বৃদ্ধি করার চিন্তা ভাবনাও সরকারের রয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *