/মদমত্ত শিক্ষকদের ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী

মদমত্ত শিক্ষকদের ধরলেন শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ জুলাই৷৷  রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় এসে ঠেকেছে তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ পাওয়া গেল জম্পুইজলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা সুকলে৷ সুকলের ভিতরে মদের বোতল৷ এতেই মন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন সুকলের পরিস্থিতি কী হতে পারে৷ পরিস্থিতির করুণ দশা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী৷ একই সঙ্গে সুকল চলাকালীন সময়েই শিক্ষকদের মদমত্ত অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ ধরেছেন বলে জানা গিয়েছে৷ এমনকি প্রধান শিক্ষক চঞ্চল কান্তি নাগও ছিলেন মদমত্ত অবস্থায়৷ সুকলের শিক্ষকদের এই অবস্থা দেখে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ দপ্তরের শীর্ষ আধিকারীককে নির্দেশ দিয়েছেন অবিলম্বে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার জন্য৷

শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে টানা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে যাচ্ছেন৷ শনিবার গিয়েছিলেন জম্পুইজলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা সুকলে৷ সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে তাঁর চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম৷ জম্পুইজলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা সুকল পরিদর্শন করতে গিয়ে মন্ত্রী দেখেন গোটা সুকলজুড়ে শুধু খালি মদের বোতল৷ এ সব দেখে তিনি ক্ষোভ উগরে দেন৷ এ সমস্ত দৃশ্য দেখে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ সুকলের ভিতরে কী করে মদের বোতল এল তার কারণ জানতে চান সুকল কর্তৃপক্ষের কাছে৷ কিন্তু সুকলের প্রাধানশিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষকরা কেউ এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি৷

উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলেও পরিকাঠামোর বিস্তর অভাব রয়েছে৷ বিদ্যালয়ে এই অবস্থা দেখে বেশ কয়েকজনকে তিনি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলেছেন সঙ্গী আধিকারিকদের৷ এই দৃশ্য দেখে সর্বসমক্ষে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ তিনি বলেন, বিগত ২৫ বছরে রাজ্যে শিক্ষার নামে কী হয়েছে তার দৃষ্টান্ত এই বিদ্যালয়৷ তিনি মনে করেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নেই৷ লজ্জায় মাথাকাটা যাবার অবস্থা৷ বলেন, সুকলের ভিতরে এ ধরনের পরিস্থিতি সরকার বরদাস্ত করবে না৷ তিনি আরও বলেন, যারা এ সব কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে৷

শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন, সুকলটি যেখানে রয়েছে তা অত্যন্ত মনোরম৷ প্রকৃতির কোলে গড়া একটি সুকল৷ চারিদিকে বনায়ন৷ সবুজে ঘেরা৷ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের মতো পরিবেশ৷ কিন্তু, এই সুকলের এই অব্যবস্থা রীতিমতো আঁতকে উঠার মতো৷ জানা গিয়েছে, এই সুকলের মোট শিক্ষক রয়েছে চৌদ্দ জন৷ এর মধ্যে নয়জন উপস্থিত ছিলেন এদিন৷ বাকিদের মধ্যে দুজন ছুটিতে রয়েছে৷ বাকি তিনজন বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ছিলেন৷ শিক্ষামন্ত্রী ঐ তিনজন শিক্ষককেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন৷ অবাক করার বিষয় হচ্ছে, সুকলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৯৭ জন কিন্তু উপস্থিত ছিল মাত্র ৬৭ জন৷

জম্পুইজলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা সুকলের ছাত্রী সুরভী দেববর্মার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল কিছুদিন পূর্বে৷ সুরভী স্থানীয় সুধীন্দ্র মেমোরিয়াল ছাত্রীনিবাসে থাকতো৷ এই ছাত্রীনিবাসে জম্পুইজলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৪৫ জন ছাত্রী থাকে৷ বাকি ছাত্রীরা সুধীন্দ্র মেমোরিয়াল বালিকা সুকলের৷ এদিন, শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ তাঁর সাথে যাওয়া পুলিশ আধিকারীকদের নির্দেশ দিয়েছেন এই ছাত্রীনিবাসের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য৷ পাশাপাশি সুকল শিক্ষা দপ্তরের আধিকারীকদের নির্দেশ দিয়েছেন অবিলেম্ব এই ছাত্রীনিবাসের পরিকাঠামো উন্নয়ন করার পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ হওয়ার জন্য৷  উল্লেখ্য, শনিবারে বেশ কয়েকটি সুকলে পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ প্রতিটি সুকল পরিদর্শনে প্রায় একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়৷

প্রসঙ্গত, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার যে নগ্ণ চিত্র এদিন জম্পুইজলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যলায়ে দেখা গিয়েছে তাতে জাতির মেরুদন্ড অবনত হয়েছে বলে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অভিমত৷ পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকার সুকলগুলিতে যে কিভাবে পঠন পাঠন হচ্ছে তারও বাস্তব চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার পরিকাঠামো এখনো সঠিক ভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি৷ বহু সুকলে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ৷ হাজারো সুকলে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার দরুন পঠন পাঠনে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে৷ তাছাড়া শিক্ষকের স্বল্পতা তো রয়েছেই৷ ১০৩২৩ এর শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত সুকলে যাচ্ছেন না৷ তাদের চাকুরীর নিশ্চয়তা নিয়ে যেহেতু প্রশ্ণ রয়েছে তাই তারা সুকলের প্রতি ততটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না৷ যদিও তাদের মাসান্তে মাইনে ঠিকই মিলছে৷ তারপরও বিভিন্ন সুকলে শিক্ষকের এবং ছাত্রের অনুপাতে শিক্ষক নেই৷ প্রচন্ড সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে প্রত্যন্ত এলাকার সুকলগুলি৷

অভিভাবকদের মতে শিক্ষকরা যদি সঠিক ভাবে সুকলে পঠন পাঠন করাতেন তাহলে মাধ্যমিকে এবছর পাশের হার কমতো না৷ শিক্ষকরা আন্তরিকতার সাথে সুকলে পঠন পাঠন দিচ্ছেন না বলেই এবছ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গণহারে ফেল করেছে ছাত্রছাত্রীরা৷ অবিলম্বে রাজ্যের শিক্ষার বেহাল অবস্থা দূর করার দাবী উঠেছে৷