BRAKING NEWS

দেবতার অবগাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হল সাত দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ জুলাই৷৷ নদীতে চৌদ্দ দেবতার অবগাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হল সাত দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব। চৌদ্দ দেবতাকে শোভাযাত্রা করে গোমতী নদীর পুণ্য সলিলে অবগাহনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার ভোরে শুরু হয়েছে এই উৎসব। চলবে আগামী ২৬ জুলাই পর্যন্ত।

শুক্রবার সাতদিন ব্যাপী এই উৎসবের প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শুভ সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মা, টিটিএডিসির চেয়ারম্যান ড. রণজিৎ দেববর্মা, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র ড. প্রফুল্লজিৎ সিনহা, বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী, বিধায়ক বীরেন্দ্র দেববর্মা। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ড. সন্দীপ মাহাত্নে, সদর মহকুমাশাসক তপনকুমার দাস, জিরানিয়ার মহকুমাশাসক সুভাষচন্দ্র সাহা এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি।

বাইরের আবরণে কিছুটা পরিবর্তন এলেও মূল মন্দির রয়েছে আগের মোড়কে। রাজন্য যুগের গুরুত্ব বহনকারী এই মন্দিরে আজও পূজা চলে আসছে সেই রাজন্য আমলের রীতি-নীতি মেনেই। সাবেকিয়ানায় পরিবর্তন ঘটেনি এখনও।

প্রতিবছরের মতো এবারও লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে সাতদিনের এই ধর্মীয় উৎসবে। খার্চি পূজার পুরোহিতকে বলা হয় চন্তাই। জনজাতিদের মধ্য থেকে বংশ পরম্পরায় নির্বাচিত হন একজন চন্তাই। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই ১৪ দেবতাকে পূজা করার মন্ত্র জানেন। এই মন্ত্রের কোনও লিখিত রূপ নেই। চন্তাইয়ের স্মরণে থাকে মন্ত্র। তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাঁর বংশের একজনকে নির্বাচন করা হয় চন্তাই হিসেবে। চন্তাই নির্বাচনের সময় দেখা হয় কে মন্ত্র সঠিকভাবে মনে রাখতে পারেন এবং সঠিকভাবে পূজার কাজ করতে পারবেন।

ত্রিপুরা সরকার চন্তাই-সহ রাজ্য সরকারের অধিকৃত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সব খরচের পাশাপাশি পূজার কাজে যুক্তদের সাম্মানিক ভাতা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক রতন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, চতুর্দশ দেবতা মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে রাজ্য আমলের দালান ও পুকুর। রাজ্য সরকারের তরফে এগুলি সংস্কার করা হয়। তিনি বলেন, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের অবহেলার কারণে এখানে অনেক ত্রুতিবিচ্যুতি দেখা দিয়েছে। সেই রাজন্য আমলের দালানকে সংস্কার করে জাদুঘর তৈরি করা হলেও এখন জীর্ণ রূপ নিয়েছে। জাদুঘরটি ঘুরলে ত্রিপুরার রাজ-আমলের শাসনব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থা, বিভিন্ন জাতির সামাজিক রীতি-নীতির ইতিহাস জানা যায়। কিন্তু অনেক কিছুই অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে ১৭শ শতকের তৈরি চতুর্দশ দেবতার মন্দিরটি আজও অক্ষত। মূল মন্দিরের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেজন্য বাইরে নতুন করে আরও একটি মন্দির তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি মুক্তমঞ্চও। উৎসবের সময় সাতদিন ধরে দিনরাত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

তিনি বলেন, সাধারণত পূজায় দিনের চেয়ে রাতে লোকসমাগম বেশি হয়। বিশেষ করে যুবকরা বেশি আসেন। তাঁরা সারাদিন কাজ শেষে বা সপ্তাহের শেষে শনিবার দেখে চলে আসেন এবং সারারাত উৎসব ও মেলা ঘুরে সকালে বাড়ি চলে যান। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার পাশপাশি বহিঃরাজ্য এবং বাংলাদেশ থেকেও খার্চি পূজার মেলা ও উৎসবে শামিল হন পুণ্যার্থিরা।

এবারের মেলায় বেসরকারি ব্যবসায়ীদের জন্য স্টল খোলা হয়েছে ৮০৬টি এবং সরকারি দফতরের প্রদর্শনী স্টল রয়েছে ১৫টি। এদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে সাতদিন যাতে কোনওপ্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে মেলার বিভিন্ন প্রান্তেও রাস্তায় সিসি টিভি লাগানো হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও খার্চি উৎসব ও মেলা উপলক্ষে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এবং মেলা কমিটির যৌথ উদ্যোগে মেলার সাতদিন কৃষ্ণমালা মঞ্চে সকাল ১১টা থেকে সারা রাজ্যের শিল্পীদের নিয়ে আয়োজিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিকাল তিনটা থেকে হাবেলি পার্ক মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হবে শিশু উৎসব। এছাড়া খার্চি উৎসবের তৃতীয় দিন ২২ জুলাই সকাল ৯টা থেকে হাবেলি পার্ক মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হবে শিশুদের মধ্যে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *