BRAKING NEWS

রাত পোহালেই লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি, প্রস্তুত উভয় পক্ষ

নয়াদিল্লি, ১৯ জুলাই (হি.স.) রাত পোহালেই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হবে লোকসভায়। ১৫ বছর পর ফের অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি বিজেপি নেতৃত্ব এনডিএ সরকার। তার আগে চূড়ান্ত তৎপরতা দেখা গেল দুই তরফের মধ্যে। কোন দল কার দিকে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জোর জল্পনা। লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে বিরোধীদের হয়ে ভোটাভুটি করবে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি, বামফ্রন্ট, ডিএমকে প্রভৃতি রাজনৈতিক দল| তবে, শিবসেনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে, অর্থাত্ মোদী সরকারের পক্ষেই ভোটাভুটি করবে| রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সম্ভবত ভোটদান থেকে বিরত থাকতে পারে এআইএডিএমকে| আস্থা ভোটে জিতে এনডিএ দরকার ২৭২ জন সাংসদের ভোট। সেখানে বিজেপির একাই রয়েছে ২৭৩ সাংসদ। এনডিএ-র শরিক দলগুলির আসন যোগ করলে তা হবে ৩০৮টি আসন। ২০০৩ সালে তৎকালীন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে কংগ্রেস। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিল অটলবিহারী বাজপেয়ী। তখন এনডিএ সরকারকে সরাতে ব্যর্থ হয় কংগ্রেস।

অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে হুইপ জারি করে কংগ্রেস। এআইএডিএমকে জানিয়েছে তারা এই অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন জানাবে না। ডিএমকে নিজেদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। পাশাপাশি অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে আম আদমি পার্টি। অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেবে বিজেপির জোটসঙ্গী শিবসেনা। শিবসেনা ভোট নিয়ে তৈরি হয়েছিল নানান জল্পনা। সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শিবসেনার তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল তার অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। বুধবার অনাস্থা প্রস্তাবে জেতার ব্যাপারে বলেছিলেন তাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে বিধলেন অনন্ত কুমার। অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির দিন বিজেডি কার পক্ষ নেবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। দলের সমস্ত সাংসদদের ভোটাভুটির দিন উপস্থিত থাকার জন্য হুইপ জারি করল বিজেডি।

অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক এবং ভোটাভুটিতে শুক্রবার লোকসভায় উপস্থিত থাকার জন্য দলীয় সাংসদদের উদ্দেশ্যে হুইপ জারি করল কংগ্রেস।
তিন লাইনের এই হুইপে স্পষ্ট বলা হয়েছে শুক্রবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় বিতর্ক এবং ভোটাভুটি হবে। ওইদিন উপস্থিত থাকার জন্য দলের সমস্ত সাংসদদের উদ্দেশ্যে হুইপ জারি করা হল। কংগ্রেসের মতো আম আদমি পার্টিও তাদের সাংসদদের উদ্দেশ্যে হুইপ জারি করেছে। অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য দলের সাংসদদের বলেছে আম আদমি পার্টি।

১৭ জুলাই কংগ্রেস মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছিলেন, বাদল অধিবেশনে সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ব্যাপারে বিরোধী দলগুলি সম্মত হয়েছে। সেই অনু্যায়ী ১৮ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে তেলুগু দেশম। সেই প্রস্তাবকে গৃহীত করে অধ্যক্ষা সুমিত্রা মহাজন।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তেলুগু দেশমের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে তামিলনাডুতে এআইএডিএমকে এবং ডিএমকে আলাদে মেরুতে অবস্থান করছে।

বৃহস্পতিবার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এআইএডিএমকে নেতা এবং তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এডাপ্পাডি কে পালানিস্বামী জানিয়ে দিয়েছেন অনাস্থা প্রস্তবকে তারা কোনও সমর্থন জানাবে না। তামিলনাডুর কাবেরি নদী ইস্যুতে কোন রাজনৈতিক দল এআইএডিএমকে সমর্থন জানায়নি। তার জেরে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তারা। প্রসঙ্গত, লোকসভায় এআইএডিএমকে-র ৩৭ জন সাংসদ রয়েছে। সংসদে বিগত অধিবেশনগুলিতে ২২দিন ধরে কাবেরি ইস্যুতে সরব হয়েছিল এআইএডিএমকে। তখন কোনও দল তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। তাই তাদের এই সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে তেলুগু দেশমের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে ডিএমকে। লোকসভায় ডিএমকের কোনও সাংসদ না থাকার জন্য তারা নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে।

কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে আনা তেলুগু দেশমের অনাস্থা প্রস্তাবকে এবার সমর্থন জানাল আম আদমি পার্টি।
অনাস্থা প্রস্তাবে আম আদমি পার্টি সমর্থন চাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবনে আসেন তেলুগু দেশম পার্টির প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাংসদ কে নারায়ণ, মালইয়াদ্রি শ্রীরাম, নিম্মালা ক্রিসটাপ্পা এবং টি জি ভেঙ্কেটেশ। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হাতে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু লেখা একটি চিঠি তুলে দেয় ওই প্রতিনিধি দল। সেই চিঠিতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য কেজরিওয়ালের কাছে আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। এই প্রসঙ্গে আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং বলেন, কেন্দ্রে বিজেপির স্বৈরাচারী শাসন চলছে। হিটলারশাহীর সরকার চলছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্যের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই সরকার বলেছিল অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ মর্যাদা দেবে। কিন্তু তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

তেলেগু দেশম নেতা ওয়াই এস চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজ্যের অধিকারকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হচ্ছে। রাজ্যগুলির কাজকর্মের উপর হস্তক্ষেপ করেছে।

অনাস্থার বিরুদ্ধেই ভোট দেবে শিবসেনা | বৃহস্পতিবার দলীয় এমপিদের উদ্দেশ্যে হুইপ জারি করে জানিয়ে দিলেন শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকর | ঠাকরের জানিয়েছেন অনাস্থায় ভোটাভুটিতে মোদী সরকারের পক্ষেই ভোট দেবে দলীয় এমপিরা |

জানা গেছে এর আগে আজ বিজেপির সরব ভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ জোটশরিক শিবসেনার সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ।দল সরকারের পাশে আছে বলে আশ্বাস দেন উদ্ধব |

এদিকে, এদিন সকালে খবর ছড়িয়ে পরে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি বয়কট করছে শিবসেনা | নিয়ে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত জানান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় সভাপতি উদ্ধব ঠাকরে। তবে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবস্থান স্পষ্ট করলেন শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরে । তার আগে অনাস্থা প্রস্তাব প্রসঙ্গে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের বক্তব্য, ‘গণতন্ত্রে, বিরোধীদের কণ্ঠস্বর অবশ্যই শুনতে হবে| প্রয়োজন হলে ভোটিংয়ের সময়, এমনকি আমরাও (শিবসেনা) বক্তব্য রাখব| ঊদ্ধব ঠাকরে যা নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা তাই করবো|’

লোকসভায় বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় আত্মবিশ্বাসী স্বরে ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী বলেছিলেন, ‘কে বলেছে আমাদের পক্ষে সংখ্যা নেই?’ সোনিয়া গান্ধীর এই মন্তব্যকেই কটাক্ষ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার| বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কটাক্ষের সুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেছেন, ‘সোনিয়া জির-অঙ্ক খুবই দুর্বল| ১৯৯৬ সালেও একইভাবে গণনা করেছিলেন তাঁরা| আমরা জানি সেই সময় কি হয়েছিল| তাঁদের গণনা আবারও ভুল হল|’

অনন্ত কুমারের বিশ্বাস লোকসভায় এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সরকাই জয়লাভ করবে| কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘সংসদের ভিতরে এবং সংসদের বাইরেও মোদী সরকারেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে| অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধেই ভোট দেবে এনডিএ|’

লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে বিরত থাকতে পারে বিজু জনতা দল (বিজেডি)| রাজনৈতিক মহলে এমনই গুঞ্জন চলছিল| যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে দিল বিজেডি| কিন্তু, লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে বিজেডি সাংসদরা যাতে উপস্থিত থাকেন, এমনই হুইপ জারি করল বিজু জনতা দল (বজেডি)| মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় বিরোধী দলগুলির আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হাজির থাকার জন্য সাংসদদের হুইপ জারি করল নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল (বিজেডি)|

রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সম্ভবত ভোটদান থেকে বিরত থাকতে পারে এআইএডিএমকে| বৃহস্পতিবার ডিএমকে-র কার্যকরী সভাপতি এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, ‘টিডিপি-র আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থণ করেছে ডিএমকে| এআইএডিএমকে-র প্রতি আমাদের অনুরোধ, এআইএডিএমকে সদস্যরাও যেন অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থণ করেন|’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *