মৎস্য দপ্তরের নতুন ভাবনা

সায়ন্তক চৌধুরী
ঋতু চক্রের হিসাবে বর্তমানে চলছে ঘোর বর্ষাকাল৷ এ সময় মৎস্য চাষিদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়৷ সেই সাথে মৎস্য দপ্তরেরও কর্মতৎপরতা বেড়ে যাবার কথা৷ কিন্তু, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, রাজ্যের মৎস্য দপ্তর চলছে গদাই লস্করি চালে৷ ফলে মৎস্য চাষিরা পড়েছেন মহা বিপাকে৷ এ সময়ে যদি পুকুরে মাছের পোনা ফেলা সম্ভব না হয় তাহলে মাছ উৎপাদনে ঘাটতির মুখে পড়বে মাছ চাষিরা৷ অথচ মৎস্য দপ্তরের হালচালে মনে হচ্ছে যেন, রাজ্যে মৎস্য চাষ তেমন ব্যাপার নয়৷ ফলে মৎস্য দপ্তর এখনো মাছের পোনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পোনা কিনবার কাজে মাঠে নামে নাই৷
বামফ্রন্টের আমলে টেন্ডারের মাধ্যমে পোনা ক্রয় করা হত৷ বিভিন্ন পোনা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাছের পোনার দাম উল্লেখ করে টেন্ডার বাক্সে দরপত্র জমা দিত৷ সেই সময়ে ডি কলের মাধ্যমে পোনা ব্যবসায়ীরা দরপত্র জমা দিত৷ বর্তমানে আর ডি কল কোনও কাজে আসছে না৷ কেননা, সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে টেন্ডারেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হল৷ মাছের পোনা সরবরাহের ক্ষেত্রে বর্তমানে মৎস্য দপ্তরও বিপাকে পড়েছে৷ এখনো পর্যন্ত বৃহৎ অংশের বেনিফিসিয়ারিরা মাছের পোনা পাচ্ছে না৷ কেননা, মৎস্য দপ্তর একের পর এক ফরমান জারি করছে৷ ফলশ্রুতিতে পোনা ব্যবসায়ীরা টেন্ডার জমা দিতে হিমসিম খাচ্ছে৷ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে, এবার আর টেন্ডার ফর্ম জমা দিতে ডি কল কাজে আসবে না৷ এখন পোনা ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে টেন্ডার জমা দিতে পারবে৷
প্রশ্ণ হল, এ নির্দেশ কি পূর্ব পরিকল্পিত? টেন্ডার আহ্বানের সময় নতুন নির্দেশনামাটি উল্লেখ করলে পোনা ব্যবসায়ীরা কোন ঝামেলায় পড়তো না৷ মৎস্য দপ্তর টেন্ডার আহ্বান করার সাথে সাথে অনেক পোনা ব্যবসায়ী ডি-কলের মাধ্যমে টেন্ডার জমা দিয়েছে৷ পরে মৎস্য দপ্তর ওইসব টেন্ডার বাতিল বলে ঘোষণা করল৷ বিপাকে পড়লো পোনা ব্যবসায়ীরা৷ কেননা, এবার তাদেরকে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে টেন্ডার জমা দিতে হবে৷ দপ্তরের এমন ঝুট ঝামেলায় পোনা ব্যবসায়ীরা যেমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন তেমনই মৎস্য চাষি তথা বেনিফিসিয়ারিরাও দুর্ভোগের মুখে পড়েছে৷ কেননা, বর্ষার এ সময়টা হল বিভিন্ন পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার উত্তম সময়৷ কেননা, পোনা ছাড়ার পরও কিছু কাজ থেকে যায়৷ তা হল মাছের খাদ্য সঠিকভাবে সঠিক সময়ে বিতরণ, পুকুরের জলে সার ও ওষুধ প্রয়োগ৷ সব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় থাকে৷ আর সেই সময় পেরিয়ে গেলে মৎস্য চাষিরা লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখে দেখে৷ বিগত বাম সরকারের আমলেও মৎস্য চাষিদের নিয়ে এমন খেলা দেখা গিয়াছে৷ এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না৷ অন্ততঃ পক্ষে মৎস্য চাষিদের ধারণা এমনই৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *