BRAKING NEWS

ঘাটতিহীন বাজেট নয়া সরকারের, ১৬,৩৮৭ কোটি টাকায় ভারসাম্যের চেষ্টা অর্থমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ জুন৷৷ বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার প্রথম বাজেটেই চমক দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করেছে৷ ২০১৮-১৯ অর্থ

মঙ্গলবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মা বাজেট ভাষন দেন৷ ছবি নিজস্ব৷

বছরের ঘাটতিহীন বাজেট এদিন বিধানসভায় পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা৷ স্মরণকালের মধ্যে এই বারই ঘাটতিহীন বাজেট পেশ হয়েছে৷ ফলে, নতুন সরকারের সাফল্যের প্রথম ধাঁপ মনে করা যেতেই পারে৷ এদিন অর্থ তথা উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বিধানসভায় ২০১৮-১৯ সালের জন্য ১৬৩৮৭.২১ কোটি টাকার ঘাটতিহীন বাজেট পেশ করেছেন৷ এই বরাদ্দ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ১৪.৬২ শতাংশ বেশী৷

এবারের বাজেট প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিভাশালী পুরস্কার, চীফ মিনিষ্টার্স সিভিল সার্ভিস এওয়ার্ড এর মত একাধিক নতুন পুরস্কার চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ এছাড়াও অর্থমন্ত্রী বাজেটে ভারসাম্য রক্ষা করারও যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন৷ সার্বিক কর কাঠামো অপরিবর্তীত রাখলেও পেট্রোপণ্যে বৃদ্ধি করার হয়েছে কর৷ পাশাপাশি অটোকে ছাণ দিয়ে অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে বেড়েছে রোড ট্যাক্স৷ তবে, দুর্গম উপজাতি এলাকার জনসাধারণ যাতে অনাহারে না থাকেন সেই দিকটিও নজরে রাখা হয়েছে বাজেটে৷ ডিসট্রেস পাড়া হিসেবে চিহ্ণিত করে তাদের জন্য বিনামূল্য রেশন প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে জোড়  দেওয়া হয়েছে বাজেটে৷

এবারের বাজেট আগের বাজেটগুলি থেকে হিসাব পদ্ধতির থেকে অন্যরকম৷ এবার কেন্দ্রীয় সরকারের মত ব্যয়ের ক্ষেত্রে রাজস্ব ও মূলধলনী শ্রেণীবিভাগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ ২০১৮-১৯ এর বাজেট বরাদ্দে রাজ্যের নিজস্ব কর বাবদ রাজস্ব সংগ্রহ ধরা হয়েছে৷ ২০১৮-১৯ এর বাজেট বরাদ্দে রাজ্যর নিজস্ব কর বাবদ রাজস্ব সংগ্রহ ধরা হয়েছে ১৭০৯.০০ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ ২০১৭০-১৮ অর্থ বছরের বাজেট বরাদ্দে কর বহির্ভূত নিজস্ব সংগ্রহ ধরা হয়েছে ২৮১.৩৬ কোটি টাকা৷ এই অর্থ ২০১৭-১৮ কেন্দ্রীয় করের ভাগীদারী প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫৭৪৭.০০ কোটি টাকা৷ এই অর্থ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় ৩৬.৮৩ শতাংশ বেশী৷ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ত ঘাটতি গ্রান্ট হিসাবে রাজ্য ১৭৪২.০০ কোটি টাকা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ২০১৮-১৯এর বাজেট বরাদ্দে ওপেনিং ব্যালেন্সকে বাদ দিয়ে সার্বিকভাবে মোট প্রাপ্তি হবে ১৬০০৮.২১ কোটি টাকা৷ বাজেট বরাদ্দে মোট ঋনের পরিমান ধরা হয়েছে ১৯৯৩.০০ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে খোলা বাজার থেকে নেয়া হতে পারে ১৩৯০.০০ কোটি টাকার ঋণ এবং বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা থেকে দরের বোঝাপড়ার মাধ্যমে ১৫০.০০ কোটি টাকার ঋণ৷ এবার ব্যয় বরাদ্দের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ১৩১০৮.৯৭ কোটি টাকা হচ্ছে রাজস্ব বাবাদ ব্যয় এবং ৩২৭৮.২৮ কোটি টাকা হচ্ছে মূলধনী ব্যয়৷

এবারের বাজেট প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের জন্য৷ ৩৬৮৪৯৯ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ২২.৫৪ শতাংশ রাখা হয়েছে এই দপ্তরের জন্য৷ অর্থ দপ্তরের জন্য রাখা হয়েছে ৩৫৫৪.৯৯ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ২১.৭৪ শতাংশ৷ স্বরাষ্ট্র দপ্তরের জন্য ৯.৮১ শতাংশ, পূর্ত দপ্তরের জন্য ৯.৫১ শতাংশ, গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দপ্তরের জন্য ৭৮২ শতাংশ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের জন্য ৬.১২ শতাংশ, কৃষি দপ্তরের জন্য ৫.১৫ শতাংশ, উপজাতি কল্যাণ এবং আদিম জাতি কল্যাণ দপ্তরের জন্য ২.৭৮ শতাংশ, রাজস্ব দপ্তরের জন্য ২.২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷

এবারের বাজেট প্রস্তাবে শিক্ষা, খেলাধুলা এবং সংসৃকতি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতিভাবান যুবক – যুবতীদের উৎসাহিত করতে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিভাশালী পুরস্কার চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ দক্ষ সরকারী আধিকারিকদের স্বীকৃতি দেবার জন্য এখন থেকে প্রতি বছর চীফ মিনিষ্টার্স সিভিল সার্ভিস এওয়ার্ড দেবার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ বড় মাপের পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেবার জন্য বেসরাকীর ক্ষেত্র থেকে টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা ইনফ্রাষ্ট্রাকচার ও ইনভেষ্টমেন্ট ফান্ড বোর্ড সৃষ্টি করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ কমবয়সী ছেলে মেয়েদের ডিজিট্যাল ওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত করার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ত্রিপুরার কলেজগুলিতে পাঠরত ছেলে মেয়েদের বিনামূল্যে স্মার্টফোন দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ভারত নেট ইনেসিয়েটিভ এর আওতায় সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, ভিলেজ কাউন্সিলগুলিতে ৩১ মার্চ ২০১৯ এর মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে৷ কৃষকদের কারিগরী ক্ষেত্রে জ্ঞান বাড়ানোর লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ৩৬টি কিষাণ বন্ধু কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷ মানুষের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ৩৬টি কিষাণ বন্দু কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷ মানুষের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এ বছর এমজিএনরেগা প্রকল্পের আওতায় ১০,০০০ একর এলাকায় বাঁশ ও অন্যান্য বাগিচার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে৷ এস সি এস টি ছাত্র ছাত্রীদের বোর্ডিং হাউজ স্টাইপেন্ড প্রতিদিন ৫৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে৷

এবারের বাজেটে নয়া পেনশন স্কীম চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷ মূলত, পেনশন খাতে রাজ্য সরকারের বোঝা ক্রমশ বাড়ছে৷ তাই, এই বোঝা কমাতে কেন্দ্রের দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ ১জুলাই থেকে নতুন নিয়োগে এনপিএসের আওতায় আনা হবে সরকারী কর্মচারীদের৷ এদিকে ৭ম বেতন কমিশন দেওয়া হবে বলেও ঘোষনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷

এ বছরের বাজেট প্রস্তাবকে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা প্রগতিশীল বাজেট হিসাবে অভিহিত করেছেন৷ বিধানসভায় বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বাজেট হচ্ছে উন্নয়নমুখী৷ মানুষের কল্যাণে এই বাজেটে নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *