নানা স্থানে মন্ডল নেতাদের দাপট

সায়ন্তক চৌধুরী
রাজ্য জুড়ে মন্ডল নেতাদের দাপট যেন ধীরে ধীরে বাড়ছে৷ এ সব নেতা প্রশাসনের কাজেও হস্তক্ষেপ করছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ মোটের উপর পাত্র পাল্টাইলেও পাত্রের বস্তুর হেরফের হয়নি৷ দীর্ঘ বাম আমলে রাজ্যবাসী যা দেখেছে রাম আমলেও তাই দেখছে৷ এ নিয়ে রাজ্য জুড়ে চলছে চাপা গুঞ্জন৷ অনেককে আক্ষেপ করে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, সরকার পরিবর্তন করে কী লাভ হল৷ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে কর্মচারী সংঘ আর মহাসংঘের চলছে দড়ি টানাটানি৷ এক পক্ষের দাবি তারা হল বিজেপির পেয়ারের সংঘ৷ আর মহাসংঘের দাবি হল- আমরা নিখাদ সোনার মত৷ এ নিয়ে চলছে কর্মচারীদের মাঝে আতংক৷ এ আতঙ্ক হল বদলির আতংক৷ বাম আমলেও সরকারী কর্মচারীরা বদলির আতঙ্কে ভুগছেন৷ এ বদলির ভয় দেখিয়ে হগব নেতারা তাদেরকে শোষণ করেছে৷ তাদের নাকে দড়ি বেঁধে ঘুরিয়েছেন৷ সেই সময়ে কর্মচারীরা মানসিকভাবে যেমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তেমনই আর্থিকভাবেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ বামের অবসানে সরকারী কর্মচারীরা ভেবেছিল এবার বোধ হয় বদলির ভয় আর থাকবে না৷ কিন্তু, বর্তমানেও সেই ভয় তাদেরকে তাড়া করছে৷ তারা বুঝতে পারছে না কোন্ দলকে তারা সমর্থন করবে৷ আর দুটো সংঘেরইবা কি প্রয়োজন? তাই স্বস্তিতে নেই সরকারী কর্মচারীরা৷
তেমনই বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতেও বইছে অশান্তির বাতাবরণ৷ কেননা, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত বর্তমানে দিশাহীন অবস্থায় রয়েছে৷ রাজ্যের এই পট পরিবর্তনের ফলে পঞ্চায়েতে কাজের গতি স্তব্ধ হয়ে পড়ে৷ তার উপর বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বিজেপির মন্ডল কমিটির নেতা গিয়ে মাতববরী করছে৷ অনেক পঞ্চায়েতে অবৈধভাবে কমিটি গঠন করে তাদের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করছে৷ যদিওবা এসব কমিটি স্বীকৃত নয়৷ কিন্তু, মন্ডল নেতাদের দাপট রয়ে গেছে সেই আগের মত৷ কেননা, বাম আমলে তারাই ছিল দাপুটে স্থানীয় নেতা৷ জামা পাল্টিয়ে রাম আমলেও দাপট দেখাতে চাইছে৷ মোটামুটি তাদের দাপটে এমন পর্য্যায়ে গেছে যে, মুখ দেখে মুগের ডাল দেবার মত অবস্থা হয়েছে৷ সামান্য বাজার ইজারার ক্ষেত্রেও মন্ডলের নেতারা হস্তক্ষেপ করছে৷ পঞ্চায়েতের নিয়ম তারা মানতে চাইছে না৷ গ্রাম সংসদ সভাতেও মন্ডল নেতাদের দাপট দেখা যাচ্ছে৷ সভায় উপস্থিত গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সভায় প্রস্তাব পাশের ক্ষেত্রে সাদা কাগজে সই নিতে হচ্ছে৷ এ নিয়ে মন্ডল নেতাদের সাথে গ্রামবাসীরা বিতর্কেও জড়িয়ে পড়ছে৷ মন্ডল নেতার একটাই কথা বাজার ইজারার ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্ত মানতে হবে৷ এ নিয়ে অশান্তিও দেখা দিয়েছে৷ ওই মন্ডল নেতার দাপটে অতিষ্ঠ স্থানীয় গ্রামবাসী৷
অথচ রাজ্যের নতুন বিজেপির সরকার স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা বলছে৷ বলছে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার কথা৷ বলছে স্বজন পোষণের দিন শেষ৷ ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য হিসাবে তুলে ধরবে বিজেপি সরকার৷ কিন্তু, মন্ডল নেতাদের আচরণে মডেল রাজ্যের ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না৷ বরং সর্বত্র দুর্নীতি ও স্বজন পোষণের ছায়া দেখা যাচ্ছে৷ সামান্য একটি বাজার ইজারা নিয়ে মন্ডল নেতাদের আস্ফালন কিন্তু মডেল রাজ্যের পরিপন্থী নয়৷ স্বজন পোষণের পথকে প্রশস্ত করার ইঙ্গিত৷ তবে কি বিজেপি নেতৃত্বরা মুখে যা বলছে কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে না? সরকার পরিবর্তনের সুফল কি দুঃস্বপ্ণে পরিণত হচ্ছে? রাজ্যবাসী কিন্তু বড় আশা করে বিজেপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে৷ বাম শাসনের বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজ্যবাসী ভোট দিয়েছে৷ ভেবেছে কেন্দ্রে যে দল সেই দল ক্ষমতায় এলে সোনায় সোহাগা হবে৷ কিন্তু, সকলি যেন গরল ভেন৷ তবে কী যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ? রাজ্যবাসী কিন্তু রাবণ চাইছে না চাইছে সুশাসন৷ এ সুশাসন রামের সুশাসনের মত না হলেও জনগণের প্রত্যাশার কাছাকাছি হোক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *