ক্ষোভের আগুন নিয়ে গেলেন উপরাষ্ট্রপতিও, রাজ্যপালও একহাত নিলেন উপাচার্য্যকে, সমাবর্তনে কলংকিত ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, অপমানে শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষোভের আগুন অনুষ্ঠান চত্বরেই

নিজস্ব প্রতিনিধি৷৷ আগরতলা, ২৩ মে৷৷ চরম অব্যবস্থায় অতিথিদের ক্ষোভের আগুনে কার্য্যত ভস্মীভুত হয়ে গেল ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের

বুধবার ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান চত্বরেই উপাচার্য ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ নিজস্ব ছবি৷

সমাবর্তন উৎসব৷ মঞ্চে বসেই রাজ্যপাল তথাগত রায় চরম অব্যবস্থার জন্য উপাচার্য্য অঞ্জন কুমার ঘোষকে একহাত নিতে দেখা গেছে৷ অনুষ্ঠান চত্বরে ক্ষোভের আগুনে ফেটে পড়েছেন সমাবর্তনে মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি রতন লাল নাথ৷ তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আমাকে ডেকে এনে অপমান করা হয়েছে৷ অপমান করা হয়েছে রাজ্য সরকারকে৷ এটা গভীর ষড়যন্ত্র৷ পাড়াগাঁয়ে বাচ্চা ছেলেদের গ্রাম্য অনুষ্ঠানকে যেন হার মানালো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠান৷ জাগরণ এর আজকের সংখ্যায় প্রথম পাতাতেই  সংবাদে চরম অব্যবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছিল এবং সেই আশংকাই সত্যে পরিণত হল৷ কেন্দ্রীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ে যারা ছড়ি ঘুরাচ্ছে তাঁরা যে সর্বনাশা খেলায় মত্ত প্রকাশিত সংবাদে তারও উল্লেখ ছিল৷ সমাবর্তন উৎসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে একেবারে ল্যাজেগোবরে তা জাগরণ বুধবারের সংখ্যায় প্রথম পাতাতেই তুলে ধরেছিল৷

কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অতিথিদের বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলা হয়েছে৷ উপরাষ্ট্রপতি মঞ্চে আসার পর তার চেয়ার নিয়ে টানা হ্যাচরা করতে দেখা গেছে৷ একই অবস্থা হয়েছে রাজ্যপালের ক্ষেত্রেও৷ একজন অতিথিকে অনুনয় বিনয় করে উঠিয়ে অন্যান্য অতিথিদের সাথে বসানো হয় রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী এনসি দেববর্মাকে৷ সঞ্চালক একবারও তাঁর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি৷ মঞ্চের আসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আধিকারীককেও অতিথিদের পাশে বসতে দেখা গেছে যা রীতিনীতি অনুমোদন দেয় কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷

[vsw id=”O7k21KQeAZA” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অতিথিদের বরণ করা, আপ্যায়ন ইত্যাদির তেমন কোনও বালাই ছিল না৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিতির হারও ছিল নগন্য৷ দেখা গেছে, অনুষ্ঠানস্থলে চেয়ারে নাম লেখা অতিথি আসনগুলির অধিকাংশই ছিল ফাঁকা৷ তাঁরা নাকি উপাচার্য্যের স্বৈরাচারী নীতির প্রতিবাদে অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জরুরী কর্মসূচীতে রাজ্যন্তরীত হন৷ তাঁর বা রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে উপস্থিত হন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ তাঁকে ভাষণ দেওয়ার সময় ভাষণ দীর্ঘায়িত না করার জন্য চিরকুট ধরিয়ে দেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বিশ্বদ্যিালয়ের হিন্দী বিভাগের অধ্যাপক জয় কুশল৷ শিক্ষামন্ত্রীও নমঃ নমঃ করে বত্তৃণতা শেষ করে অনুষ্ঠান চত্বরে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ার ঘটনা বিশ্বদ্যিালয়ে নজীরবিহীন৷ উপাচার্য্যকে তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন এমন ঘটনা কি করে হল? প্রধান অতিথির বত্তৃণতার পর কিভাবে আমাকে বত্তৃণতা দিতে বলা হল৷ তাও চিরকুট ধরিয়ে ভাষণ ছোট করতে বলা হল৷ এই অপমানের কি হবে? উপাচার্য্য বলেন, তদন্ত করে দেখবো৷ তখন আরও এক ডিগ্রী রেগে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী সুর চড়িয়ে বলেন আমার ২৫ বছরের সংসদীয় রাজনীতি এবং ৪০ বছরের রাজনীতির অভিজ্ঞতা আছে৷ কোনটা তদন্ত করাতে হবে তা আমাকে শেখাতে হবে না৷ এক সময় এক আধিকারিক কিছু একটা বলতে গেলে শিক্ষামন্ত্রীকে চেচিয়ে বলতে শোনা গেছে ‘চুপ’! আর একটা কথা বলবেন না৷ কোত্থেকে এসেছেন৷ উপাচার্য্য অঞ্জন কুমার ঘোষকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন৷ এজন্যই কেউ আপনাদের এখানে আসতে চায় না৷ আমিও আসতে চাইছিলাম না৷ এসে অপমানিত হলাম৷ যখন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ উপাচার্য্যকে তুলোধুনো করছেন তখন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার শানিত দেবরায় এবং জনসংযোগ আধিকারিক মানস পাল৷

ইতিমধ্যেই অবশ্য কাকুতি মিনতির পর্ব শুরু হয়ে গেছে৷ উপরাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল যেভাবে ক্ষোভে ফঁুসে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেছেন তার চেয়েও কয়েক ডিগ্রী উপরে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠান চত্বর থেকে বেরিয়ে আসেন৷ এই ঘটনা চাউর হতেই রাজ্যের শিক্ষানুরাগী মহল ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া আছড়ে পড়ে৷ চরম সুবিধাবাদীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়৷ এর প্রমাণ তো মিলেছে আজকের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেই৷ চারবছর পর সমাবর্তন উৎসব করতে গিয়ে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ল্যাজে গোবরে অবস্থার পর রাজ্যের শিক্ষা মহলে গভীর হতাশা দেখা দিতে বাধ্য৷ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ বিষয়টি কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে নিশ্চই জানাবেন৷ এই সমাবর্তন উৎসবের বেহাল ও কলংকজনক ঘটনাই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল রূপ উন্মোচন করে দিল৷ কারা এই ঘটনার নাটের গুরু৷ কারা এই সর্বনাশা খেলার হুতা তা খঁুজে বের না করলে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চরম অন্ধকারে ডুবে যাবে৷ যে বিশ্ববিদ্যালয় আলো বিচ্ছুরণ করার কথা সেই বিশ্ববিদ্যালয় গাঢ় অন্ধকারকেই আমন্ত্রণ করছে৷ অন্তত এই সমাবর্তন উৎসব তা স্পষ্ট করে দিল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *