BRAKING NEWS

মা, জন্মভূমি ও মাতৃভাষাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বললেন উপরাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ মে ৷৷ দেশের মূল ঐতিহ্য এবং সংসৃকতিকে অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উপরাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি আজ ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, বিবিধতার মধ্যে একতা হচ্ছে ভারতের মূল শক্তি৷ কাশ্মীর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, তামিলনাড়ুর কোনও সমস্যা হলে তা সবার ভাবনা হওয়া উচিত৷ কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাবনায় তা আটকে থাকা উচিত নয়৷ যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মা, জন্মভূমি এবং মাতৃভাষাকে বিশেষভাবে মর্যাদা দিতে হবে৷ ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে এই তিনটি শব্দ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে৷ তিনি বলেন, জীবনের প্রথম অধ্যায়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়লেও লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়৷ ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড এ পি জে আব্দুল কালাম এবং দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ৷ তিনি বলেন, আমরা যতোই আধুনিক হই, গুগল কখনওই গুরুর বিকল্প হতে পারে না৷ এক সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে ছাত্ররা পড়তে আসতো৷ এখনকার তরুণ সমাজকে এই বিষয়টি মনে রেখেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে৷

উপরাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও দেশের সামনে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে৷ দেশের ২০ থেকে ২২ শতাংশ মানুষ এখনও নিরক্ষর৷ একটা অংসের মানুষ এখনও দারিদ্র্য সীমারেখার নীচে রয়ে গেছেন৷ সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচেছন এমন খবরও এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে৷ এই সমস্যাগুলি সমাধানে সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে৷ কেন্দ্র-রাজ্যকে একসঙ্গে মিলে কাজ করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ উপরাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতে মহিলাদের একটা আলাদা মর্যাদা সব সময় রয়েছে৷ পুরাণেও সরস্বতীকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে৷ মহিলাদের শিক্ষিত করা গেলে পুরো পরিবারকেই শিক্ষার আলোকে আলোকিত করা যায়৷ মহিলাদের ক্ষমতায়ণের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা না গেলে সমাজ থেকে বৈষম্যও দুর হবে না৷ শ্রী নাইডু বলেন, অনেকেই পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে যান৷ চিকিৎসার জন্যও অনেকে বাইরে যেতেন৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে৷ অন্য দেশ থেকে মানুষ এখন চিকিৎসার জন্য হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালুর, চেন্নাই, দিল্লী ইত্যাদি শহরে ছুটে আসেন৷

দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হলে উন্নয়নমূলক কাজেও গতি আশে৷ ২০০৩ এবং ২০১১-এর মধ্যে প্র বৃদ্ধির হার ছিলো ৮৩ শতাংশ৷ ২০২২ -এর মধ্যে ই হার ৯ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশের বৃহৎ মানব সম্পদকে কাজে লাগানো৷ যেখানে মানব সম্পদের ৬৫ শতাংশই হচ্ছে ৩৫ বছরের নীচে৷ এরূপ বিকাশশীল অর্থনীতির নিরিখে এখন দরকার হচ্ছে বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা৷ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে স্থানীয় শিল্পের সাথে টাই-আপ করতে হবে৷ যাতে ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদান করা যায়৷ তা শুধুমাত্র শিক্ষার পাঠক্রম উপযোগী করে তুলবে না, ছাত্রছাত্রীদেরকেও চাকরি পেতে বা উদ্যোগী হতে সাহায্য করবে৷

উপরাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এজন্য এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে পূর্ব দিকের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির আর্থিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে৷ এক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ সবাই একসাথে মিলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে গেলে দেশও এগিয়ে যাবে বলে শ্রী নাইডু মনে করেন৷

তিনি বলেন, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮৭ সালের ২ অক্টোবর স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই উৎকর্ষের সন্ধানে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে আসছে৷ এই যাত্রায় উন্নত উদ্বাবনী শক্তিই ছিলো মূল পাথেয়৷ তিনি বলেন, এটা মনে করা ভুল হবে যে, একজন ব্যক্তির শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভের সাথে৷ উপরাষ্ট্রপতি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে আপনাদের জীবনে এক নতুন আধ্যায়ের সূচনা করবে৷ প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের এই গন্ডি থেকে বেরিয়ে কেউ আবার পড়াশুনায় রত হবেন৷ আবার কেউ কর্মসংস্থানের সাথে জুড়ে যাবেন৷ এই পথ হয়তো মসৃণ হবে না, পরিকল্পিত রূপরেখা ধরে চলবে না৷ এসব বাধা বিপত্তিতে মুষড়ে পড়লে চলবে না৷ যার যার লক্ষ্যে আত্মনিয়োগ করতে হবে৷ নেলসন ম্যান্ডেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী অস্ত্র যার দ্বারা পৃথিবীকে বদলে দেওয়া যায়৷ অর্থাৎ শিক্ষা হচ্ছে সচেতন নাগরিকদের জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের চাবিকার্ঠি৷

তিনি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সুযোগ কুড়িয়ে নিতে পরামর্শ দেন এবং উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল হতে উৎসাহিত করেন৷ জীবনে ঝঁুকি নিতে পিছপা না হতে পরামর্শ দিয়ে তিনি সর্বদা ইতিবাচক হয়ে এগিয়ে যেতে বলেন৷ তিনি বলেন, আমরা এক দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে বাস করছি৷ প্রযুক্তিগত পরিবর্তন শিক্ষা ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক করে দিয়েছে৷ এখন ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা বলে কিছু নেই৷ ভারতের কোনও প্রত্যন্ত এলাকাতে বাস করেও এখন বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে শিক্ষালাভ করা যায়৷ তাই তিনি এসব যাবতীয় সুযোগ সুবধাকে কাজে লাগাতে পরামর্শ দেন৷

সর্বশেষে তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরাই হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ৷ ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে এবং অসংখ্য সুযোগ সুবিধার পথও খুলে যাচ্ছে৷ এই ইন্টার কানেক্টেড বিশ্বে জ্ঞান অর্জনের কোনও সীমানা নেই৷ এই জ্ঞানকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে বলেন তিনি৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *