BRAKING NEWS

ফের বন্যার কবলে রাজ্য, মৃত্যু দুই, ৫৯ টি শিবিরে আশয় নিল ৩০৮১ পরিবার, নদীগুলির জল বিপদসীমার উপরে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ মে৷৷ ফের বন্যার কবলে পড়েছে রাজ্য৷ বহু এলাকা প্লাবিত৷ রাজধানী আগরতলায় বন্যার্তদের উদ্ধারে এনডিআরএফ জওয়ানদের নামানো হয়েছে৷ হাওড়া নদীর জল বাড়ছে৷ দুদিন বিরামের পর পুনরায় বন্যায় রাজ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ রাজধানীর ও তার পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় টানা চার ঘন্টার বর্ষণে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা৷ আগরতলা শহর-সহ বহু নতুন এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে৷ দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়৷ জলমগ্ণ এলাকাগুলি থেকে দুর্গতদের সরিয়ে আনা হয়৷ এদিকে, পৃথক স্থানে ধস পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে৷ আহত হয়েছেন আরও দুইজন৷ রাজ্যে মোট ৫৯ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৩০৮১টি পরিবারের ১৩৭৭৫ জন লোক আশ্রয় নিয়েছেন৷ সরকারী তথ্য মোতাবেক যেসব মহকুমায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলি হচ্ছে, অমরপুর মহকুমায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে চারটি৷ আশ্রয় নিয়েছে ১৩১টি পরিবার৷ এই মহকুমাতে বিভিন্ন সড়ক স্তব্ধ হয়ে পড়েছে ধসের কারণে৷ এই মহকুমাতেই একজনের মৃত্যু হয়েছে৷ অন্যদিকে খোয়াই মহকুমার পদ্মবিল ব্লকে দুটি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৩৮টি পরিবার৷ খোয়াই ব্লকে ৫টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১৫৬ পরিবার৷ তেলিয়ামুড়া ব্লকে ৬টি ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ২৭৬ পরিবার৷ জম্পুইজলা ব্লকে ২টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে ১২ পরিবার এবং সোনামুড়া ব্লকে আটটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে একটি বাড়ি পুরোপুরি এবং সাতটি বাড়ি আংশিক৷ অন্যদিকে সদর মহকুমার এমসি এবং পুরান আগরতলা এলাকায় ১২টি ত্রাণ শিবিরে ৫০২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে৷ দশটি এলাকার জনগণ মারাত্মকভাবে বন্য কবলিত হয়েছে৷ জিরানীয়া ব্লকের ৭ ত্রাণ শিবিরে ১৬৫ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে৷ হেজামারা ব্লকে ৮টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৩০৭ টি পরিবার৷ লেফুঙ্গা এবং বামুটিয়া ব্লকে মোট ১৩টি ত্রাণ শিবিরে ১৪৯৪ পরিবারের ৬৪৯২জন আশ্রয় নিয়েছেন৷
রবিবার ভোর তিনটা থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ সকাল ছয়টা থেকে ৬৩০ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল৷ কিন্তু দুপুরের পর রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতেক জলস্ফীতির খবর আসে৷ রাজ্যের অন্যান্য এলাকায়ও অনুরূপ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ ফলে বহু এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে৷ রাজধানী আগরতলায় দুপুরের পর জনজীবন স্বাভাবিক হয়৷ যান চলাচল শুরু হয়৷ বহু এলাকা জলমগ্ণ থাকলেও স্থিতাবস্থা বজায় ছিল৷ কিন্তু পাহাড়ে বৃষ্টির ফলে দুপুর থেকে নদীর জল বাড়তে থাকে৷ নদীর পার উপচে জল পাশ্বপর্তী জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ঢুকে পরে৷ ফলে বহু পরিবার নতুন করে জলমগ্ণ হয়ে পড়ে৷ রাজধানী আগরতলায় দুর্গতদের উদ্ধারে এনডিআরএফ-এর জওয়ানদের নামানো হয়েছে৷ রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধারের কাজে সেনা জওয়ান নামানো হতে পারে৷ রাজধানীর উঁচু এলাকায় প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে দুর্গতদের জন্য৷ রাজ্যের ইতিহাস স্মৃতিবিজড়িত তীর্থক্ষেত্র চতুর্দশ দেবতার মন্দির সম্পূর্ণভাবে জলগম্ন হয়ে পড়েছে৷ বহু পুরনো, বনেদি পরিবারের বাড়ি এখন জলের তলায়৷ দুর্গতদের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসনের৷ মাত্র দুদিনের ব্যবধানে পুনরায় বন্যায় রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ত্রাণ ও পুনবার্সন দফতর সূত্রে জানা গেছে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বর্তমানে নেডা-র বৈঠকে যোগ দিতে গুয়াহাটিতে রয়েছেন৷ ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী রতনলাল নাথ বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শনে বেরিয়েছেন৷ তিনি এলাকাগুলোয় দাঁড়িয়ে থেকে ত্রাণকার্য পরিচালনা করছেন৷ হাওড়া নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে৷ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নদীতে জলের মাত্রা আরও বাড়ছে৷
প্রবল বর্ষণ এবং ভূমিধসে গোমতী জেলার অমরপুর তৈদু থানাধীন এলাকায় পুনরায় ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীর৷ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দু-জন৷ নিহত ছাত্রীর নাম মেরি কাইপেং৷ মেয়েটির বাবা ও মা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন৷ আহত বাবা সাবরেলিয়ান কাইপেং (৪৫) এবং মা পুরিহাই কাইপেং (৩০)-এর বর্তমানে চিকিৎসা চলছে৷ ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, রবিবার ভোর প্রায় তিনটে থেকে শুরু হয় টানা বর্ষণ৷ বর্ষণের প্রভাবে সাবরেলিয়ান কাইপেং এর পরিবার মাটিধসে চাপা পড়ে৷ রবিবার সকালে বিষয়টি সকলের গোচরে আসে৷ তখনই খবর দেওয়া হয় অগ্ণিনির্বাপক ও এসডিআরএফ দফতরকে৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অগ্ণিনির্বাপক বাহিনীর জওয়ানরা৷ তাঁদের সঙ্গে বিএসএফ ও সিআরপিএফ এর জওয়ানরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন৷ সকলের প্রচেষ্টার মাটির তলা থেকে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷ কিন্তু সাবরেলিয়ান কাইপেংকে বাঁচানো যায়নি৷ মেয়েটির বাবা ও মাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ধবসে পড়ায় জিরানীয়া মহকুমার বেলবাড়ি ব্লকের চাম্পাবাড়ি এডিসি ভিলেজে আজ সকালে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে৷ ভিলেজের নাইরেঙ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে৷ মৃতার নাম বিশুহাম রুপিনী (৬০)৷ বসত বাড়িতে পাহাড়ের মাটি ধবসে পড়ায় এই ঘটনা ঘটে৷ এই ঘটনায় বিশুহাম রুপিনীর স্বামী ভক্ত নারায়ন রূপিনী (৬৫) গুরুতর আহত হন৷ ঘটনার খবর পেয়ে জিরানীয়ায় মহকুমার মহকুমা শাসক সুভাষ চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রতিনিধিরা সকালে চাম্পাবাড়ি ভিলেজের নাইরেঙ বাড়ির নিহতের বাড়িতে যান এবং নিহত মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করেন ও তার আহত স্বামীকে জিবি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্ত্তি করানো হয়৷ নিহত মহিলা বিশুহাম রুপিনীর মৃত দেহ জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়না তদন্তের জন্য৷ জিরানীয়ার মহকুমা প্রশাসন থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা মৃতের পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হয়৷ পরে মৃতের বাড়িতে যান পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ড সন্দিপ এন মহাত্মে৷
আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ আজ বিকেলে সদর মহকুমার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শন কালে তিনি চন্দ্রপুর বিপনী বিতান, স্বামী দয়ালানন্দ দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, রামঠাকুর বালিকা বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরগুলি ঘুরে দেখেন এবং আশ্রয় গ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি প্রশাসনের আধিকারিকদের খাদ্য, পরিস্রুত পানীয় জল, শিশুদের জন্য দুধ এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে নির্দেস দেন৷ প্রতিটি স্থানে মেডিক্যাল টীমের ব্যবস্থা রাখতেও তিনি নির্দেস দেন৷
এছাড়া মুখ্য সচিব সঞ্জিব রঞ্জন, পুলিশের মহানির্দেশক এ কে শুক্লা, পূর্ত সচিব এবং জেলা শাসকও বন্য কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন৷ পরিদর্শনকালে মুখ্য সচিব জল সম্পদ দপ্তরের আধিকারিকদের হাওড়া নদীর বাঁধ দ্রুত বালির বস্তা দিয়ে মজবুত করার নির্দেশ দেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *