রাজ্য সরকারের নিয়োগ বোর্ড গঠিত হচ্ছে, লিখিত পরীক্ষাই পাচ্ছে প্রাধান্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ মে৷৷ পুরনো নিয়োগ পদ্ধতি বাতিল করল রাজ্য সরকার৷ তার বদলে নতুন নিয়োগ পদ্ধতিতে সীলমোহর দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা৷ ফলে, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই এখন থেকে মিলবে সরকারি চাকুরি৷ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও মৌখিক পরীক্ষার বদলে

শনিবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়৷ ছবি নিজস্ব৷

লিখিত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে যেমন ড্রাইভার, ইলেকট্রিশিয়ান, স্টেনোগ্রাফারদের জন্য লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি স্কিল টেস্ট নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে৷  নয়া নিয়োগ পদ্ধতির ফলে রাজ্য সরকার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পৃথক বোর্ড গঠন করতে চলেছে৷ শনিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এই খবর জানান আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ৷

আইনমন্ত্রীর কথায়, সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখাই রাজ্য সরকারের একমাত্র লক্ষ্য৷ তাই পুরনো নীতি বাতিল করে নতুন নিয়োগ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে৷ এদিন মন্ত্রিসভায় নতুন নিয়োগ পদ্ধতিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর বক্তব্য, চাকুরির ক্ষেত্রে কোন রকম দলবাজির বদলে যোগ্য প্রত্যাশীদের নিয়োগ করতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ কারণ, রাজ্য সরকারের লক্ষ্য যোগ্য ব্যক্তিরাই সরকারী চাকুরীতে আসুক৷ তাই, রাজ্য সরকারের সমস্ত চাকুরিতে নিয়োগ এখন থেকে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে দেওয়া হবে৷ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই মিলবে সরকারি চাকুরি৷ তাঁর কথায়, নতুন নিয়োগ পদ্ধতি চালু হওয়ার সাথে সাথেই পুরনো সমস্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে পুরনো নিয়োগ নীতি অনুযায়ী যারা ইন্টারভিউ দিয়েছেন তাদেরকেও নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে৷ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ আইনমন্ত্রীর  বক্তব্য, কোন কোন ক্ষেত্রে যেমন ড্রাইভার, ইলেকট্রিশিয়া, স্টেনোগ্রাফারদের জন্য লিখিত  পরীক্ষার পাশাপাশি স্কিল টেস্ট নেওয়া হবে৷ তবে, দশ শতাংশ মৌখিক ইন্টারভিউয়ের জন্যও রাখা হয়েছে৷ মৌখিক ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে ভিডিওগ্রাফি পদ্ধতি চালু করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে৷

এদিকে, সেক্রেটারিয়েট সার্ভিসে কর্মী নিয়োগে পুনরায় টিপিএসসি চালু করা হচ্ছে৷ ইতিপূর্বে টিপিএসসি’র মাধ্যমেও সেক্রেটারিয়েট সার্ভিসে কর্মী নিয়োগ করা হত৷ কিন্তু পূর্বতন সরকারের আমলে সে প্রথা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল৷ নতুন নিয়োগ পদ্ধতি অনুসারে পুনরায় সে প্রথা চালু করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে টিপিএসসি’র কাজের পরিসর  বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক বোর্ড গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ওই বোর্ড সমস্ত রকমের পরীক্ষার আয়োজন করবে৷ এদিকে, রাজ্যে পুলিশ, অগ্ণিনির্বাপণ এবং কারা দপ্তরের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও লিখিত  পরীক্ষার পাশাপাশি শারীরিক এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী৷

এদিন তিনি আরো জানান, রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন স্তরে দশ শতাংশ পদ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় গৃহীত হয়েছে৷  রাজ্যে প্রথমবার এই সংরক্ষণের নীতি চালু হচ্ছে৷ আইনমন্ত্রীর কথায়, এতদিন রাজ্যে পুলিশে মহিলাদের জন্য কোন সংরক্ষণ ছিল না৷ নির্ভয়া কান্ডের পর আইপিসি এবং সিআরপিসি সংশোধন হয়েছে৷ সুপ্রিমকোর্টও বলেছে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিয়োগ বাড়ানো উচিত৷ বিশেষ করে আরক্ষা প্রশাসনে মহিলাদের নিয়োগ বাড়ানো খুবই জরুরি৷ তাই রাজ্য সরকার রাজ্য পুলিশে মহিলাদের জন্য দশ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বর্তমানে রাজ্যে ২৬  হাজার পুলিশ কর্মী রয়েছেন৷ কিন্তু মহিলা পুলিশের সংখ্যা মাত্র ১২০০৷ তাই আগামীদিনে পুলিশে সংরক্ষণের হার আরো বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করবে রাজ্য সরকার৷

এদিকে, রাজ্যে বিচারবিভাগীয় আধিকারিকদের বেতনক্রম দ্বিতীয় ন্যাশনাল জুডিশিয়াল পে কমিশনে অন্তবর্তী রিপোর্টে সুপারিশ মেনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী জানান, শীর্ষ আদালত এবং জুডিশিয়াল পে কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক ১ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে নয়া বেতনক্রম কার্যকর করা হবে৷ এজন্য ব্যয় হবে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ২১ হাজার ২৪৮ টাকা৷ আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিচারবিভাগীয় আধিকারিকদের নয়া বেতনক্রম চালু করতে প্রতিমাসে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৯ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৮৬ টাকা৷

এদিন আইনমন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, ফ্যামিলি পেনশনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে মন্ত্রিসভায়৷ তাঁর কথায়, এতাদিন যাবৎ সরকারী পদে কর্মরত স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ফ্যামিলি পেনশন পেতেন৷ আজ মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়, ফ্যামিলি পেনশন-প্রাপক স্ত্রী যদি পুণরায় বিবাহ করেন কিংবা তাঁর মৃত্যু হয়, তাহলে ফ্যামিলি পেনশন ওই মৃত সরকারী কর্মচারীর বাবা কিংবা মা-কে দেওয়া হবে৷ এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইন রাজ্যে কার্যকর করা হচ্ছে৷ এদিন এই সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও পরিবহণ দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়ও উপস্থিত ছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *