পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টের শোচনীয় ফলে হতাশ বাম নেতারা

কলকাতা, ২০ মে (হি.স.) : সদ্য শেষ হওয়া রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩০ শতাংশ আসনে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ যদিও ওই ৩০ শতাংশ আসনেও শোচনীয় ফলাফল করেছে বামফ্রন্ট ৷ জেলা পরিষদের ৬২২ টির মধ্যে মাত্র একটি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী জিতেছেন ৷ তাও সিপিএম প্রাথী নয়, জিতেছেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রাথী ৷ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ১,৭০৯টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১২৯টি আসন পেয়েছে বামফ্রন্ট ৷ আর তাতেই হতাশ প্রবীন বামপন্থী নেতারা ৷
প্রবীণ সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বামফ্রন্টের ফলাফলকে ‘হতাশজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন ৷ তাঁর কথায়, ‘ওটা ভোট ছিল না ৷ তৃণমূল গুন্ডামি করেছে ৷ বিজেপি প্রচুর টাকা ছড়িয়েছে ৷ তবে যাই হোক, বামফ্রন্টের ফলাফল হতাশজনক’৷ গণনার কারচুপি হোক বা শাসকদলের বেনজির সন্ত্রাস, বামদলগুলির নজির বিহীন খারাপ ফলাফলে হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারেননি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ৷ প্রশ্ন উঠেছে, গণতন্ত্র যদি লুঠ হয়ে গিয়ে থাকে, লুঠেরাদের কেন আটকাতে পারলেন না বামকর্মী,সমর্থকরা ৷
উত্তর দিনাজপুরে জেলা পরিষদের একটি আসনে জিতেছে ফরওয়ার্ড ব্লক ৷ এই একটিই একমাত্র জেলা পরিষদের আসন, যেখানে বাম প্রার্থী জিতেছেন ৷ ফরওয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নরেন দের মতে, ‘এটা কোনও নির্বাচন ছিল না ৷ এখানে মানুষের মতামত প্রকাশিত হয়নি ৷ শুধুমাত্র শাসকের মতামত প্রকাশিত হয়েছে ৷ তবে এটা কোনও অজুহাত নয় ৷ বামফ্রন্টকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে ৷ একটা ব্যাপার মানুষকে বোঝাতে হবে, বই, খাতা, সাইকেল দেওয়াটাই উন্নয়ন নয়’৷ তিনি আরও বলেন, ‘মেনে নিতে হবে, তৃণমূলের আসল চেহারাটা মানুষকে আমরা বুঝিয়ে দিতে পারিনি ৷ মানুষ তাই বিজেপিকেই বেশি করে বেছে নিয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ৷ তবে মনে রাখবেন, বামফ্রন্ট ঘুরে দাঁড়াবেই ৷ ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে এ রাজ্যে উন্নয়নের সংজ্ঞা বদলেছিল বামফ্রন্ট ৷ বর্তমানে তৃণমূল যে উন্নয়ন দেখাচ্ছে, সেই সংজ্ঞাটাও বদলে যেতে বাধ্য’৷
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘গণনার কারচুপিই বিপর্যয়ের কারণ’৷ তাঁর কথায়,’দেখলাম বিরোধীরা যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা কেউ শংসাপত্র পেলেন না ৷ তার বদলে বেধড়ক মার হজম করতে হল ৷ কিছু জায়গায় গণনা কর্মীরাই ব্যালট পেপার নষ্ট করতে লাগলেন ৷ পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের গণনা তো অনেক জায়গায় হলই না ৷ তৃনমূল যা চেয়েছে তাই হয়েছে’৷ সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘কেউ ভাবতে পারেন, সারা রাজ্যে জেলা পরিষদে মাত্র একটি আসন পেয়েছে বামফ্রন্ট ৷ গণনার শুরু থেকেই শুনে আসছিলাম উত্তর ২৪ পরগণা এবং নদিয়ার জেলা পরিষদে এগিয়ে আছে বামফ্রন্ট ৷ কিন্তু গণনা কেন্দ্রে এমন কী হল, যে শেষ মুহূর্তে হেরে গেলেন আমাদের প্রার্থী ৷ রাজ্য জুড়ে গণনা কেন্দ্রগুলিতে যা হয়েছে তা সকলেই জানেন ৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী শূন্য করতে চেয়েছিলেন ৷ তা হয়নি ৷ ৩০ শতাংশ আসনে তৃণমূল হেরেছে’৷ কিন্তু এই ৩০ শতাংশ আসনে বামেদের ফল শোচনীয় কেন, সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে ৷ বিজেপির উত্থানই এর মূল কারন বলে প্রবীন বাম নেতারা মনে করছেন ৷
আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামীর মতে, ‘এই হতাশা থেকে বামদলগুলিকে বেরিয়ে আসতে হবে ৷ টাকার থলি হাতে বসে আছে বিজেপি ৷ আরএসএস মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করছে, একমাত্র হিন্দুদের স্বার্থ তারাই রক্ষা করতে পারে ৷ ধর্মীয় মেরুকরণই তাদের অস্ত্র’৷ ক্ষিতি গোস্বামীর স্বীকারক্তি, ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস, কমিশনের মেরুদণ্ডহীনতা, ভোট গণনায় কারচুপি সত্ত্বেও আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনোর দরকার ৷ মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে হবে’৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *