চুড়াইবাড়ির তরুণীকে নিয়ে কলকাতায় পাড়ি দেওয়া হয়নি, হাজতে ভিনধর্মী যুবক

পাথারকান্দি , ১৯ মে (হিঃস)৷৷ করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি মহকুমার সীমান্তবর্তী ত্রিপুরার চোরাইবাড়ি এলাকার এক হিন্দু তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল ভিনধর্মী গ্যারান্টি মাস্টর বলে পরিচিত এক যুবক৷ বহিঃরাজ্য কলকাতায় গেলে ভালো চাকরি পাওয়া যায় বলে মেয়েটিকে প্রলোভন দিয়েছিল৷ তাছাড়া চাকরি হয়ে গেলে সেখানেই বাড়ির লোকজনের অগোচরে তাকে বিয়ে করার টোপ দিয়ে প্রমের ফাঁদে ফেলে৷ অবশেষে পরিকল্পনামাফিক কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে পুলিশের জালে আটক হয়ে গেছে প্রেমিক যুবক৷ ঘটনার পিছনে লাভ জিহাদের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে৷ খবরে প্রকাশ, অসম সীমান্তবর্তী উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা থানার তারকপুর এলাকার রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা জনৈক সত্তার আলির বছর ৩৪-এর ছেলে নুর আহমেদ পেশায় প্রাইভেট টিউটর৷ গত কয়েক বছর ধরে সে চোরাইবাড়ি এলাকার বিভিন্ন হাইসুকল পড়ুয়া ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহশিক্ষকের বেশে তাদের পড়াত৷ মজাদার বিষয়, সে কোনও ছাত্রকে পড়াতো না, যত পড়ুয়া সবই ছাত্রী৷ সে দাবি করত, যে বা যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়বে, তারা অবশ্যই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে৷ তাই স্থানীয়রা তার নাম দিয়েছেন গ্যারান্টি মাস্টর৷

গত দু-বছর ধরে চোরাইবাড়ি রেলস্টেশনে সংলগ্ণ বাসিন্দা তথা মাধ্যমিকের সুন্দরী ছাত্রী ময়ুরী সাহাকে (ছদ্মনাম) তার বাড়িতে গিয়ে পড়াচ্ছিল৷ কিন্তু মাস্টরের আচারব্যবহারে প্রথম থেকেই সন্দিহান ছিলেন মেয়েটির পরিবারের পাশাপাশি এলাকার মানুষ৷ এরই মধ্যে ময়ুরীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় পালানোর জন্য বৃহস্পতিবার দুটি ট্রেনের টিকিট বুক করে নুর আহমেদ৷ খবরটি পৌঁছে যায় বজরং দল ও বিশ্বহিন্দু পরিষদের চোরাইবাড়ি প্রখণ্ডের কর্মকর্তাদের কানে৷ গতকাল, শুক্রবার সন্ধ্যায় অন্যান্যদিনের মতো গ্যারোন্টি মাস্টার নু আহমেদ প্রাইভেট পড়াতে ময়ুরীদের বাড়িতে যায়৷ তখন সুযোগ বুঝে স্থানীয় মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে হানা দেন ভিএইচপি ও বজরঙের প্রায় ডজনখানেক কর্মী৷ তাঁরা নুরকে পাকড়াও করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে চোরাইবাড়ি থানায় সমঝে দেন৷ ভিএইচপি কর্মকর্তাদের বক্তব্য, মেয়েটি লাভ জিহাদের শিকার হয়েছে৷

এদিকে চোরাইবাড়ি থানার ওসি শিবুচন্দ্র দে ঘটনা সম্পর্কে জানান, ধৃত যুবকটি তার যাবতীয় দোষ কবুল করেছে৷ সে ময়ুরীকে কলকাতায় নিয়ে ভালো চাকরি পাইয়ে দেবে বলে নাকি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ তাছাড়া ময়ুরীকে বিয়ে করে সংসার বাঁধার রঙিন স্বপ্ণও সে দেখছিল বলে পুলিশের কাছে প্রদত্ত স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে নুর আহমেদ৷ প্রদত্ত জবানবন্দির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ২৯/২০১৮ নম্বরের ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৫৭/৩৬৩ ধারায় এক মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানান ওসি শিবুচন্দ্র দে৷ আজ নুর আহমেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ধর্মনগরের সিজেএম আদালতে তোলা হয়৷ শুনানি শেষে আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার প্রাইভেট শিক্ষক নুরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে৷ এদিকে, ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানা গেছে৷ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এর আগেও নাকি অভিযুক্ত নুর আহমেদ বেশ কয়েকটি ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রেমের জালে ফেলে হেনস্তা করেছে৷ কিন্তু প্রাভেট টিউটারের অভাবে বাধ্য হয়ে এলাকার অভিভাবকরা নুরের শরণাপন্ন হন, জানিয়েছেন বাসিন্দারা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *