BRAKING NEWS

কর্ণাটকের ঘটনায় কংগ্রেস সহ বিরোধীরা পেল অক্সিজেন, সুপ্রিম রায়ে নতুন ইতিহাস, শক্তি পরীক্ষায় না গিয়ে ইস্তফা ইয়েদুরাপ্পার

বেঙ্গালুরু, ১৯ মে৷৷ দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যে একক গরিষ্ট দল বিজেপি রাজ্যপালের ডাকে সরকার গঠন করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি৷ শেষ হাসি

শনিবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ এবং পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়৷ ছবি নিজস্ব৷

হাসলেন কংগ্রেস ও জেডিএস বিধায়করাই৷ তাঁরাই সরকার গড়ছে৷ ভারতের শীর্ষ আদালতের বিচার কর্ণাটকের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যে পরিস্থিতি দেখা দিল তা ইতিহাস হয়ে থাকছে৷ একটি রাজ্যের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আবেদনে শীর্ষ আদালতে মাঝ রাতে শুনানি গ্রহণের ঘটনাও ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছে৷ নবনিযুক্ত বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পাকে আস্থা ভোটের জন্য রাজ্যপালের ১৫ দিন সময় দেওয়াকে সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করে দেয়৷ শনিবারই আস্থা ভোটের দিন ধার্য্য করে শীর্ষ আদালত৷ সেই মতো কর্ণাটক বিধানসভায় এদিন বিধায়করা শপথ গ্রহণ করেন৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিয়ে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন৷ তিনি আর আস্থা ভোটের সামনে দাঁড়ালেন না৷ তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, কংগ্রেস-জেডিএসের ঐক্যবদ্ধ শক্তি এই মুহুর্তে ভাঙ্গানো অসম্ভব৷ বিজেপির এই পরাজয় জাতীয় রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিক মহলে ধারনা৷ সম্ভবত বুধবার মুখ্যমন্ত্রী পদে এইচ ডি কুমারস্বামী শপথ গ্রহণ করতে চলেছেন৷ কারণ, সোমবার শপথ গ্রহণের দিন নির্ধারিত হলেও সেদিন রাজীব গান্ধীর মৃত্যু বার্ষিকী হওয়ায় শপথ অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷

বিধানসভা নির্বাচনে কর্ণাটকে ফলাফল ত্রিশঙ্কু হয়৷ বিজেপি   ১০৪টি আসন পেয়ে একক বৃহত্তম দল হয়৷ কিন্তু, সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে পারেনি৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস ৭৮ এবং জেডিএস ৩৮টি আসন জোটের ঘোষণা দেয়৷ ফলাফল ঘোষণার দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় নাটক৷ বিজেপি এবং কংগ্রেস-জেডিএস উভয়েই সরকার গঠনের দাবি জানায় রাজ্যপালের কাছে৷ কিন্তু, রাজ্যপাল ভাজুভাই বালা বিজেপি ১৫ দিনের সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আমন্ত্রণ জানান৷ সাথে মুখ্যমন্ত্রী পদে বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে শপথ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান৷ রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় কংগ্রেস-জেডিএম সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়৷ নজীরবিহীনভাবে রাত ২টা ১২ মিনিটে কংগ্রেসের আবেদনে সুপ্রীম কোর্টে শুনানি শুরু হয়৷ কংগ্রেস কর্ণাটকে মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ স্থগিত রাখার পাশাপাশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ১৫ দিন সময় থেকে কমিয়ে দেওয়ার আবেদন জানায় সুপ্রীম কোর্টে৷

দীর্ঘক্ষণ শুনানির পর সর্বোচ্চ আদালত রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়ে দেয়৷ মুখ্যমন্ত্রী পদে বি এস ইয়েদুরাপ্পার শপথ গ্রহণে কোন স্থগিতাদেশও জারি করেনি আদালত৷ কিন্তু, ১৫ দিনের বদলে ২৮ ঘন্টার মধ্যে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমান করতে হবে বলে রায় দেয়৷ কংগ্রেসের ধারণা ছিল, সরকার গড়তে বিজেপি সমস্ত মাত্রা অতিক্রম করতে পারে৷ ফলে, ঘোড়াকেনাবেচার প্রবল আশংকায় ভুগছিল কংগ্রেস৷

দল ভাঙ্গিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশংকায় কংগ্রেস-জেডিএস তাদের বিধায়কদের বাসে করে হায়দরাবাদে নিয়ে যায়৷ দুই দলের সমস্ত বিধায়কদের হায়দারাবাদে একটি হোটেল রাখা হয়৷ শুরু থেকেই বিজেপিকে জয়ের ব্যাপারে অতি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে৷ ইয়েদুরাপ্পা থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কর্ণাটকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের ১০০ শতাংশ নিশ্চিয়তা দেন৷ তাঁদের এই আত্মবিশ্বাস কংগ্রেস ও জেডিএসকে মানসিকভাবে দূর্বল করে দেয়৷ তবে, ঘঁুটি সাজাতে কোন ঘাটতি রাখেনি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব৷ বিধায়কদের কড়া নজরদারীতে রাখার পাশাপাশি কোন মতেই যাতে তাঁদের অনাস্থা জোটের উপর না হয়, সেই খেয়ালও রেখেছেন৷

এদিকে, কর্ণাটকে সরকার গঠনে প্রোটেম স্পিকারের নিযুক্তি নিয়েও কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ সংসদীয় অভিজ্ঞতা কম, তাই কে জি বোপাইয়ার প্রোটেম স্পিকার করার রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় কংগ্রেস৷ কিন্তু, কংগ্রেসের এই আবেদন খারিজ করে দেয়৷ ফলে, নির্ধারিত সময়ের সামান্য দেরিতে কর্ণাটক বিধানসভায় নব নির্বাচিতদের বিধায়ক পদে শপথ গ্রহণ শুরু হয়৷ কিন্তু, কংগ্রেসের দুই এবং জেডিএসের একজন বিধানসভায় তখন অনুপস্থিত ছিলেন৷ ফলে, কংগ্রেস এবং জেডিএস শিবির ভিষণ চিন্তায় পড়ে যায়৷ কিন্তু, শপথ গ্রহণের অন্তিম মুহুর্তে তাঁরা বিধানসভায় হাজির হয়ে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেন৷

ইয়েদুরাপ্পাও বুঝে যান, আস্থা ভোটের সামনে না দাঁড়ানোই শ্রেয়৷  তবে, বিধানসভায় আস্থা প্রস্তাব পেশ করলেও ভোটাভুটিতে যাননি তিনি৷ প্রোটেম স্পিকারের কাছে আস্থা প্রস্তাব পেশ করে ইয়েদুরাপ্পা ভাষণ দেন৷ আবেগী ভাষণে ইয়েদুরাপ্পা কংগ্রেস-জেডিএস জোটকে সমালোচনা করে আগামী নির্বাচনে বিজেপি সরকার গঠন করবেই বলে দাবি করেন৷ এরপরই তিনি জানান, আজই রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন৷

মুখ্যমন্ত্রী পদে ইয়েদুরাপ্পার ইস্তফার ঘোষণার সাথে সাথেই উল্লাসে মেতে উঠে কংগ্রেস-জেডিএস শিবির৷ সরকার গঠনে পথ খুলে গেছে দেখে বিধানসভায় হাতে হাত মিলিয়ে জয়োল্লাস মেতে উঠেন দুই দলের বিধায়করা৷

এদিকে,  কর্ণাটকে তিনদিনের বিজেপি সরকারের পতনের পর ট্যুইটে তৃণমূল নেত্রী অভিনন্দ জানান জেডি (এস) সভাপতি দেবগৌড়া, কুমারস্বামী, কংগ্রেসকেও৷ তিনি বলেন, এটা আঞ্চলিক ফ্রন্টের জয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *