BRAKING NEWS

কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
এক সময়ে মঙ্গলকাব্যের ঈশ্বরী পাটনী বলেছিলেন ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’৷ এখন আর ঈশ্বরী পাটনীর যুগ নেই৷ সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টে গেছে৷ সেই পাল্টানোর পথ ধরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ছিল জোয়ার৷ গ্রামে লক্ষ্মীর ধন উপচে পড়তো৷ ছিল মাঠ ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু৷ ছিল মাছে ভাতে বাঙালীর রমরমা অবস্থা৷ বাঙালী সাধারণত কব্জি ডুবিয়ে খেতে ভালবাসে৷ ছিল তেমনই এক সুবর্ণ সময়৷
ধীরে ধীরে পৃথিবী ছোট হতে লাগলো৷ বাড়তে লাগলো জীবনের গতিবেগ৷ আর হারিয়ে গেল আমাদের আবেক অনুভূতি আর চাওয়ার পাওয়ার এক্কা দোক্কার হিসাব৷ গ্রামীণ অর্থনীতিতেও থাবা বসালো মানুষের লোভ৷ এখন আর ‘কি আনন্দ জাগিছে বুকে, মারিবো মৎস্য খাইবো সুখে’- সেই দিন আর নেই৷ অথচ এক সময়ে ছোট রাজ্য ত্রিপুরাতেও বাজারে মাছের হাট বসতো৷ নদী ও পুুকুরে ছিল অফুরন্ত মাছ৷ মাছের দামও ছিল অতি নগন্য৷ কেননা, চাহিদার তুলনায় মাছের যোগান ছিল প্রচুর৷ বর্তমানে সেই মাছ মহার্ঘে পরিণত হল৷
রাজ্যের পুকুর নদীতে মাছ নেই৷ মাছ এখন আসছে বহিঃরাজ্য এবং বাংলাদেশ থেকে৷ অন্ধ্র, কলিকাতা এবং বাংলাদেশের মাছ রাজ্যবাসীর ভরসা৷ অথচ পূর্বতন বাম সরকার রাজ্যে মৎস্য উৎপাদনে বিপ্লবের কথা বলেছিলেন৷ বলেছিলেন রাজ্যে মৎস্য উৎপাদন সন্তোষ জনকভাবে বাড়ছে৷ মানুষ বর্তমানে আগের চেয়ে বেশি মাছ খাচ্ছে বলে চাহিদার তুলনায় যোগান একটু কম৷ কিন্তু, এরপরও মাছ আমদানি বন্ধ হয়নি৷ ঘটনাচক্রে কোন একদিন বহিঃরাজ্য কিংবা বাংলাদেশ থেকে মাছ না এলে মাছের বাজার মরুভূমিতে পরিণত হয়৷ স্থানীয় মাছ যা কিছু পাওয়া যায় তাও নাগালের বাইরে৷ সাধারণ মানুষের পক্ষে স্থানীয় মাছের দিকে হাত বাড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে৷ অথচ রাজ্যে রয়েছে মৎস্য দপ্তর৷ এ দপ্তরের কাজই হল মাছ উৎপাদনে রাজ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা৷ কিন্তু, মৎস্য দপ্তর এত বছর হেঁটেছে উল্টো পথে৷ প্রতি বর্ষায় রাজ্যের বেনিফিসিয়ারিদের পুকুরে মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে মাছ ছাড়া হত৷ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কি অনুপাতে ছাড়া হবে তার একটা হিসাব রয়েছে৷ কিন্তু, প্রতি বর্ষায় মৎস্য দপ্তর পুকুর ও নদীতে মাছ ছাড়ার ক্ষেত্রে যেমন লবিবাজি করেছে তেমনই করেছে দুর্নীতি৷ সেই সাথে মাছের খাবার ও সার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও ছিল দুনম্বরী মানসিকতা৷ বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমগুলিতে মৎস্য দপ্তরের ফিল্ড অফিসারদের দুর্নীতি প্রকাশ পেত৷ অথচ রাজ্যে মাছ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হবার জন্য কেন্দ্র হতে প্রতি আর্থিক বছরে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ হত৷ সেই অর্থের সিংহভাগ হরিরলুটের বাতাসায় চলে যেত৷ ফলে মাছের আকাল যেমন ছিল আজও তেমন রয়েছে৷ ফলশ্রুতি বিয়ে অনুষ্ঠান সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে ভরসা হচ্ছে অন্ধ্র কিংবা বাংলাদেশের মাছ৷ অনুষ্ঠানে স্থানীয় মাছের কথা কল্পনাও করা যায় না৷ তাইতো মাছের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছি৷ নিজস্ব মাছের ভান্ডার তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ তবে বর্তমানে নতুন বিজেপি সরকার রাজ্যবাসীকে স্বপ্ণ দেখাচ্ছেন৷ রাজ্যবাসীর আশা সেই স্বপ্ণের তালিকায় মাছও থাকবে৷ মাছে ভাতে বাঙালী এ ধারা আবার ফিরে আসবে- মৎস্যপ্রেমী বাঙালী হিসাবে বিজেপি সরকারের কাছে এমন আশা করা নিশ্চই অনুচিত হবে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *