BRAKING NEWS

কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
বাম আমলে রাজ্য জুড়ে বইছিল উন্নয়নের জোয়ার৷ বর্তমানে বিজেপি আমলে কি বইছে? এর সহজ সরল উত্তর হল সংঘের জোয়ার৷ এমন সংঘের জোয়ার কিন্তু কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ঘিরে নয়৷ এমন সংঘ আবর্তিত হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলকে ঘিরে৷ কেননা, ওই দলের অঙ্গ সংগঠনের নামের শেষে সংঘ থাকে৷ বলা যেতে পারে তারা সবাই ওই দলের সংঘ পরিবার৷ তবে এ সংঘের সাথে জাতীয় একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের মিল রয়েছে৷ ওই সংগঠনের নামের শেষেও সংঘ শব্দটি রয়েছে৷ আর সেই সংগঠন হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ৷ সংক্ষেপে আরএসএস৷ তবে কি আরএসএসের প্রভাব রয়েছে ওই রাজনৈতিক দলের উপর? স্বীকার করতেই হবে যে, বিজেপি সেই প্রভাব মুক্ত নয়৷ ফলে সংঘের ছোঁয়া অঙ্গ সংগঠনগুলির নামের শেষে রয়েছে৷
১৮ এর রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের আগেও এমন সংঘের হুড়োহুড়ি ছিল না৷ ছিল না বিজেপির অঙ্গ সংগঠনগুলির তেমন আহামরি ররমা৷ কিন্তু, ১৮ এর নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বিজেপি যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেল৷ ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়া সিপিএম যেন বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে পড়লো৷ সিপিএমের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন অস্তিত্বের সংকটে পড়লো৷ এমন কি সারা রাজ্যের বিভিন্ন ক্লাবগুলি যেন সংঘ দরদি হয়ে উঠলো৷ অমুক ক্লাব হয়ে গেল অমুক সংঘ৷ এ যেন প্রতিযোগিতার বাজার৷ তাই বিভিন্ন ব্যবসায়ীও সংঘ পরিবারে ঢুকতে শুরু করল৷ ফুলেফেঁপে উঠতে লাগল বিভিন্ন সংগঠন৷ কিন্তু, এমন ফুলেফেঁপে উঠা মানেই কি স্বাভাবিক পরিস্থিতি এমন কি ভাবা যায়? বেশি ফুলানো ভাব অনেক সময় বদহজমেরও লক্ষণ হতে পারে৷ বিজেপি সহ তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনেও দেখা দিয়েছে তেমনই এক অবস্থা৷ হঠাৎই সংঘের বাড়বাড়ন্ত খুব একটা স্বস্তিদায়ক বলে মনে হচ্ছে না৷ এর পেছনে যে একটা উদ্দেশ্য রয়েছে তা বলাই বাহুল্য৷ এখনো পর্যন্ত বিজেপির বুথ ভিত্তিক শক্তপোক্ত সংগঠন গড়ে উঠেনি৷ ইতিমধ্যে দলে ঠাঁই নেয়া অনেকে কিন্তু হম্বিতম্বি করতে শুরু করেছে৷ দুঃসময়ের বিজেপি সমর্থকরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে৷ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে দেখা যাচ্ছে সেই পুরনো মুখ৷ শুধু পাত্র পাল্টেছে৷ তরল ঠিকই আছে৷ তারা যে বিজেপির আদর্শ মেনে দলের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছে তা কিন্তু নয়৷ এরা হল শাখের করাত৷ আসতেও কাটবে আবার যেতেও কাটবে৷ অর্থাৎ যখনই যা তখনই তা সাজতে ওস্তাদ তারা৷ তারা দীর্ঘ বছর সিপিএমে থেকে স্বার্থ উদ্ধারে মেতেছিল৷ সিপিএমের মধু ফুরিয়ে যাবায় এখন ভিড়ছে বিজেপিতে৷ দু’দিন আগেও যারা বিজেপিকে গালমন্দ করেছিলো এখন তারা বিজেপির গুন কীর্তনে ব্যস্ত৷ তাইতো তাদের স্বভাব অনেকটা ঝোঁকের মত৷ রক্ত চোষা তাদের কাজ৷ এবং এই কাজটি করার জন্য তারা ঠিকই বেছে নিতে পারে তাদের সঠিক পথ৷ তাইতো বর্তমানে চারিদিকে সংঘের জোয়ার বইছে৷ এ জোয়ারে বিজেপি যে সমৃদ্ধ হবে তা নয়৷ এমন জোয়ারে ছড়িয়ে আছে জলজ পোকা মাকাড়৷ ছড়িয়ে আছে রক্ত চোষা ঝোঁক৷ সংঘ তাদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় স্থল৷ আর উদ্দেশ্য হল সেই পুরনো অভ্যাস ঝালিয়ে নেওয়া৷ বিষয়টি বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রামমাধব অনুধাবন করতে পরেছিলেন৷ তাই তিনি বলেছিলেন- রাজ্যে বিজেপিতে অনেক ধান্দাবাজ ঢুকছে৷ তাদেরকে চিহ্ণিত করতে হবে৷ কিন্তু, এমন চিহ্ণিত করা কি এতই সহজ? রাজনীতিতে সাচ্চা এবং স্বচ্ছতার যে বড়ই অভাব৷ এ সত্যটা সাধারণ মানুষের চেয়ে নেতারা ভাল বোঝেন৷ তারপরেও বোঝা ও কাজের মধ্যে যে ফারাক থেকে যায়৷ তবুও রাজ্য জুড়ে বইছে সংঘের জোয়ার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *