BRAKING NEWS

কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
‘নারে, আজ আর যামু না৷ কুটুর বাসায় যামু৷ ঠান্ডাও পড়তাছে৷ তার বাসায় আইজ পার্টি আছে৷ মোজফুর্তি করুম’৷ এই বলে বন্ধুর দিকে হাত ইশারা করে দেখিয়ে দিল ফুর্তির আসল ব্যাপারটা৷
অস্বীকার করা যাবে না যে এ রাজ্যে অধিকাংশ ফুর্তির অর্থ হল মদ আর মাংস৷ সন্ধ্যা হলে একাংশ যুবক যেন গুলি খাওয়া হরিণের মত ছুটে৷ বেছে নেয় গলির আনাচে কানাচে অন্ধকার স্থান৷ কিংবা কারো বাড়ির উঠোনের অন্ধকার কোন৷ আবার অনেক সময় কোনও বন্ধুর মা বাবা বাড়িতে না থাকলে সেই বন্ধুর বাড়িতে বসে বিপিন বাবুর কারণ সুধা- এর আসর৷
এমন আসরের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার তেমন অবকাশ নেই৷ এ রাজ্যের সংসৃকতির একটা অংশে মিশে আছে এমনই আসর৷ আর বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানেও চলে ফুর্তির বহর৷ শ্মশানে মৃতদেহ পোড়ানোর সময়ও এমন কারণ সুধা থাকবেই৷ রাজ্যের মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে এমন কারণ সুধার দোকান৷ সামাজিক ব্যধির বাড়বাড়ন্ত এমন কারণ সুধাকে কেন্দ্র করে৷ বেশিরভাগ ধর্ষণের ক্ষেত্রেও উঠে আসছে কারণ সুধার তত্ত্ব৷ নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, খুন সব বিষয়ে জড়িত রয়েছে এমন কারণ সুধা৷ সামাজিক অবক্ষয়ের সিংহভাগ জুড়ে আছে সুধার আকর্ষণ৷
এ সুধা নিয়ে রাজ্যের তরুণ মুখ্যমন্ত্রী জেহাদ ঘোষণা করলেন৷ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি মদ বিরোধী অভিযানের কথা বললেন৷ স্বাগত মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য৷ প্রশ্ণ হল কাদের নিয়ে অভিযান চালাবেন৷ সর্ষের ভেতর যে ভুত লুকিয়ে আছে তা কি তিনি জানেন না৷ যেখানে রাজ্যের আনাচে কানাচে মদের দোকান, যেখানে বিভিন্ন উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (একাংশ) মদের ফোয়ারা ছোটে সেখানে মদ বিরোধী অভিযান কতটুকু সফল হবে৷ পুলিশ তার গতানুগতিক ধারায় মদবিরোধী অভিযানে নামছে বটে৷ কিন্তু, তাতে সমস্যার ইতর বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না৷ মদ এনে রাখা হচ্ছে থানার স্টোরে৷ তার পরের কাহিনী কেউর অজানা হয়৷ তাইতো মদ বিরোধী অভিযানে নামার অর্থ কিন্তু মাদক মুক্ত রাজ্য নয়৷ অস্বীকার করা যাবে না যে, এই নেশা যত অনর্থের মূল৷ নেশার ঘোরে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ে৷ তখনই করে বসে আসামাজিক কাজ৷ হুঁশ এলে অনুতপ্ত হয়৷ তখন আর কিছু করার থাকে না৷ নেশা শুধু মদে সীমাবদ্ধ নেই৷ আছে বিভিন্ন নেশাজাতীয় টেবলেট, হিরোইন, চরস, গাঁজা ও ভাং সহ আর কত কি৷ অবৈধ নেশা জাতীয় সামগ্রী রাজ্যে ঢুকছে চোরা পথে৷ অথচ বিভিন্ন স্থানে থানা, পুলিশ ফাঁড়ির অভাব নেই৷ রয়েছে চুড়াইবাড়ি গেট৷ এত কিছুর পরও কি করে অবৈধ নেশা জাতীয় সামগ্রী রাজ্যে আসে? এ ক্ষেত্রে আরক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্ণবিদ্ধ হচ্ছে বইকি৷ এর পেছনে রয়েছে বিরাট একটি মাদক পাচারকারী চক্র৷ তাদের নেটওয়ার্ক অনেক দূর বিস্তৃত৷ এই নেটওয়ার্ক চক্রটা ভাঙতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রীর মাদক বিরোধী অভিযানও সফল হবে না৷
সেই সাথে মাদকের বৈধ ক্ষেত্রগুলি যতদিন থাকবে ততদিন তরতাজা নেশার আসরও থাকবে৷ একাংশ যুব সমাজ নষ্ট হবে৷ তাই বৈধ দোকানগুলি নিয়েও ভাবনা চিন্তা করা যেতে পারে৷ এক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে না কি? মদ বিরোধী অভিযানে রাজ্যের প্রমীলা বাহিনীও সামিল হচ্ছে৷ কিন্তু, কমছে কই? কমার নেই লক্ষণ৷ বরং নদীর বাণের মত হু হু করে বাড়ছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর এমন চিন্তা ধারা যেমন অভিনন্দন যোগ্য তেমনই তা বাস্তবায়নেও নিতে হবে কড়া পদক্ষেপ৷ তারপরেও কি নেশামুক্ত রাজ্য গড়ে উঠবে- এমন প্রশ্ণ কিন্তু থেকে যাচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *