BRAKING NEWS

সেই সখার পথে সিপিএম

সায়ন্তক চৌধুরী
একা পথ চলা কখনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷ কেননা, দীর্ঘ পথ যে মসৃন হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই৷ পথে চড়াই উতড়াই থাকবে৷ থাকবে খানা খন্দ৷ পথ চলতি হোঁচট খেয়ে পড়ারও শংকা থাকে৷ আবার পথের ধারে খাদ থাকলে সেই খাদেও পড়ার ঝঁুকি থাকে৷ তখন পাশে কেউ না থাকলে খাদ থেকে টেনে কে তুলবে? আর খানা খন্দে হোঁচট খেয়ে পড়লেতো কেউ না কেউকে এসে তো হাত ধরে তুলতে হবে৷ তাইতো একলা চলা কোনভাবে কারো জন্য আরাম দায়ক এবং প্রীতিকর নয়৷ আর সেই সুদীর্ঘ রাস্তায় যদি রাজনীতির কার্পেট বিছানো থাকে তাহলেতো কথাই নেই৷ কেননা, রাজনীতি বড়ই খতরনাক চিজ৷ কোনও রাজনৈতিক দল আজ রাজ প্রসাদেতো কাল আস্তাকুঁড়ে৷ কোনও নেতার গলায় আজ মালাতো কাল কাঁটার জ্বালা৷ এই পিচ্ছিল পথে একলা চলো নীতি নিলে কার্যসিদ্ধিতো দূরের কথা নিজেই যেন ধীরে ধীরে ব্যাকফুটে চলে যাবে৷ এই চিরন্তন সত্যতা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যতটা বুঝতে পেরেছিলেন ততটা যেন দূরে ছিলেন প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত৷ হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত ২২তম পার্টি কংগ্রেসের কার্যত ইয়েচুরির কাছে একলা চলো নীতিতে চলেছে৷ এ নিয়ে সিপিএম ছিল দ্বিধাবিভক্ত৷ একটা হল বেঙ্গল লবি৷ অন্যটা হল কেরল লবি৷ বেঙ্গল লবি বিরোধী দল বিশেষ করে কংগ্রেসের সাথে চলতে পক্ষপতি৷ কেরল লবি একলা চলো নীতিতে বিশ্বাসী৷
কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিপিএম একলা চললে আরও যে ‘একলা’ হয়ে পড়বে তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছেন সীতারাম৷ তিনি বামপন্থী না হলেও বিজেপি বিরোধী দলগুলির সাথে সমঝোতার পক্ষে৷ কেননা, সীতারাম বুঝতে পারছেন যে সিপিএম খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে৷ একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে সিপিএমকে৷ হামবড়া ভাব নিয়ে চলতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ হাতছাড়া হল৷ কেরলে চলছে মিলিঝুলি রাজত্ব৷ একমাত্র ত্রিপুরায় শিবরাত্রির সলতের মত টিম টিম করে জ্বলছিল সিপিএমের বাতি৷ সিপিএমের যত হম্বিতম্বি ছিল ত্রিপুরা রাজ্যকে ঘিরে৷ কিন্তু, বিজেপির ‘চলো পাল্টাই’ যে সিপিএমও পাল্টে গেল৷ ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়লো৷ ফলে একক আধিপত্যের রাজ্য বলতে কোনও রাজ্য আর সিপিএমের রইলো না৷ সিপিএম এখন যেন ছন্নছাড়া বাউন্ডেলে দলে পরিণত হল৷ জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে সিপিএমের পেছনের সারিতে বসার যোগ্যতা নেই৷ একদম লেজেগোবরে অবস্থা সিপিএমের৷ ঠিক এমন পরিস্থিতিতে হায়দ্রাবাদে ২২ তম সিপিএমের বৈঠক বসলো৷ বৈঠকে ছিল অনেক নাটকীতার মোড়৷ কারাত ইয়েচুরির স্নায়ুযুদ্ধ ছিল তুঙ্গে৷ কংগ্রেসের সাথে সমঝোতার প্রশ্ণে ভোটাভুটির বিষয়ও এসে পড়লো৷ শুক্রবার রাজনৈতিক খসড়া প্রস্তাবে কংগ্রেসের সাথে সমঝোতার প্রশ্ণে সীতারামের দিকে ঝুঁকলেন অধিকাংশ প্রতিনিধি৷ এ পরিস্থিতিতে কারাত অসহায় হয়ে পড়লেন৷ জয় হল ইয়েচুরির৷ জাতীয় রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে একটি জাতীয় দলকে সমর্থন করতে হবে সিপিএমকে৷ সেই হিসাবে তাকিয়ে আছে কংগ্রেস৷ বিগত দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কংগ্রেসের দোসর ছিল সিপিএম৷ উপা সরকারের আসলে পরমাণু চুক্তির ইস্যুতে এ বন্ধুত্বের ছেদ পড়ে৷ সেই ফাঁকে বাংলার মমতার উত্থান এবং সিপিএমের পতন৷ তবে বাংলার ১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম কংগ্রেসের সাথে জোট করে৷ কিন্তু বিরোধী আসনে বসে কংগ্রেস৷ তারপর থেকে কংগ্রেসের সাথে গাঁটছড়া বাঁধতে রাজি ছিলেন না প্রকাশ কারাত৷ কিন্তু, তাতেও কোনও পরিবর্তন দেখা গেল না৷ সুতরাং ইয়েচুরির লবি সরব হয়ে উঠলো৷ তারা বুঝতে পারলেন যে, পার্টি আজ খাদে পড়ে গেছে৷ খাদ থেকে উঠতে হলে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন৷ সীতারাম তাই ফিরে যেতে চাইলেন সেই বন্ধুর কাছে৷ বিগত দিনেও যেই বন্ধু তাদের পাশে ছিলেন৷ সেই বন্ধু বর্তমানে কংগ্রেসের সভাপতি৷ ব্যক্তি জীবনেও সীতারামের সাথে রাহুলের সম্পর্ক বন্ধুত্বের পর্যায়ে৷ ২২তম সিপিএম কংগ্রেসে সেই বন্ধুত্বের দিকে হাত বাড়ানোর উপর সীলমোহর পড়লো৷ তবে, জাতীয় রাজনীতিতে বন্ধুর অবস্থাও তেমন ভালো নেই৷ এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সাথে সিপিএমের সমঝোতা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা ১৯শে লোকসভা নির্বাচনে বোঝা যাবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *