কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
কোনও চিন্তা কর না, আমিই তোমাকে বাঁচাবো – উকিল বাবুর কথা শোনে ফাঁসির আসামীর চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠে৷ অবিশ্বাস্য সুরে বলা কালা আমার ফাঁসি হবে৷ এখনো আপনি বলছেন, আমাকে বাঁচাবেন? তাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে৷ উকিল বাবু নির্লিপ্ত উত্তর – আরে বাবা, বাঁচাবো তো৷ এত টেনশন কেন? ফাঁসির আসামীর বিস্ফারিত চোখ৷ মনে মনে ভাবে, বলে কি উকিলবাবু৷ ভোরের দিকে তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হবে৷ আর উকিল বাবু এখনো বলছে সে মরবে না৷
তবে কি উকিল বাবু মিথ্যা সান্ত্বনা দিচ্ছে তার মৃত্যু পথযাত্রী মক্কেলকে? এমন ভাবে অপ্রাসঙ্গিক নয়৷ যেখানে আদালত রায় দিয়েছিল সেখানে কি করে এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটবে? হ্যাঁ, তাই ঘটেছে৷ ফাঁসির আসামী মরেনি৷ হাসতে হাসতে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছিলো উকিল বাবুর বিচক্ষনতার কারণে৷ ঘটনা ইংরেজ আমলের৷ আমার বাবার মুখে শোনা৷ আইনের ফাঁক তালে সেই আসামী বেঁচে গেল৷ কি ঘটেছিল, পরদিন সকালে? যার দৌলতে ফাঁসির আসামী বেঁচে গেল? বাবার মুখে শোনা ঘটনা এখানে তুলে ধরছি-
পরদিন সকালে উকিল বাবু জেলে হাজির হলেন৷ ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত৷ একপাশে জল্লাদ দাঁড়িয়ে৷ একজন ম্যাজিষ্ট্রেট এবং সরকারী আইনজীবীও যথা সময়ে এসে হাজির হল৷ আত্মীয় স্বজনদের সাথে ফাঁসির আসামীর শেষ দেখার পর্বও শেষ হল৷ চারিদিকে এক শোকের ছায়া৷ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষ করে আসামীকে আনা হল, ফাঁসির মঞ্চে৷ আসামীর মুখ ফ্যাকাসে৷ চোখে মুখে আতংক৷ আসামীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চের দিকে৷ আসামী এক ঝলক উকিল বাবুকে দেখলেন৷ উকিল বাবু হাত নেড়ে তাকে আশ্বস্ত করলেন৷ বললেন – ভয় নেই৷ মন খারাপ করো না৷ আসামী নিয়ে যাওয়া হল ফাঁসির মঞ্চে৷ কালো মুখোশ দিয়ে তার মুখ ঢেকে দেবার সময় সে উকিল বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন – উকিল বাবু, আপনি কি এরপরেও বলবেন, আমি বাঁচবো? উকিল বাবু হেসে বললেন আলবৎ বলবো৷ তুমি, ঝুলে পড়লেও বলবো, তুমি বাঁচবে৷ আসামীর মুখে আর কোনও কথা নেই৷ ম্যাজিষ্ট্রেটের সবুজ সংকেতের৷ ম্যাজিষ্ট্রেট ইশারা করলে জল্লাদ সুইচ টিপে দেবে৷ আসামীর পায়ের নিচে পাটাতন সরে যাবে আর আসামী ঝুলে পড়লে ফের পাতাটন যথাস্থানে এসে যাবে৷ রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি৷ চারিদিকে কেমন যেন হিম শীতল নিরবতা৷ উকিল বাবুর চোখে মুখে উৎকণ্ঠা৷ ম্যাজিস্ট্রেট ঘড়ি দেখে জল্লাদকে সংকেত দিলেন৷ জল্লাদ সুইচ টিপলো আসামীর পায়ের নিচের পাটাতন সরে গেল৷ ঝুলে পড়লেন আসামী৷ ঠিক তখুনি তৎপর হলেন উকিল বাবু৷ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে বললেন হুজুর তাড়াতাড়ি তাকে তুলুন৷ আমার একটি আর্জি আছে৷ উকিলের কথা শুনে ম্যাজিস্ট্রেট হতবাক৷ উকিলের পীড়াপীড়িতে তিনি জল্লাদকে ইশারা করলেন৷ জল্লাদ আবার সুইচ টিপে ফাঁসির আসামীক তুললো৷ উকিল চটজলদি গিয়ে তার ফাঁসির গিঁট খুলে দিলেন৷ ম্যাজিস্ট্রেট হতবাক৷ উকিল ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে বললেন – হুজুর আসামীর সাজা হয়ে গেছে৷ সে এখন মুক্ত৷ ম্যাজিস্ট্রেটের খাবি খাবার দশা৷ বললেন – কি করে? ফাঁসিতে তারতো মৃত্যু হয়নি৷ উকিল বাবু হেসে বললেন – আইনে তা লেখা নেই হুজুর৷ লেখা আছে – ইট উইল বি হ্যাঙ৷ সুতরাং তাকে ঝুললো হল৷ কিন্তু ঝুলানো অবস্থায় তার মৃত্যু হবে তাতে লেখা নেই হুজুর৷ ম্যাজিস্ট্রেট আইনের মার প্যাঁচে পড়ে গেলেন৷ আইনের ফাঁক জালে বেরিয়ে এলো ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামী৷
তারপর বাবার মুখে শুনেছি – ইংরেজ আমলে সেই আইন নাকি পরে সংশোধন করে লেখা হয়েছিল – ইট উইল বি হ্যাং টিল ডেথ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *