BRAKING NEWS

দাও ফিরিয়ে সেই অরণ্য, লহো এ নগর

সায়ন্তক চৌধুরী
দাও ফিরিয়ে সেই অরণ্য/ লহো এ নগর৷ আজি হতে শতবর্ষ আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নগরের অভিশাপ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছিলেন৷ মানব সভ্যতার সৃষ্টি লগ্ণ থেকে অরণ্যের উপর মানুষের দৃষ্টি পড়েছিল৷ এর প্রধান কারণ হল দুটি৷ একটি হলো বাসযোগ্য জমি তৈরী করা এবং অন্যটি হল আগুনের জন্য কাঠ সংগ্রহ করা৷ এই দুটি চাহিদা মানুষের মৌলিক চাহিদা বলা যেতে পারে৷ ফলে, অরণ্য ধীরে ধীরে ধবংস হচ্ছে৷ সেই সাথে যুক্ত হয়েছে কাঠ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য৷ অরণ্যের প্রতি এমন অভিঘাত এ রাজ্যেও এসে পড়েছে৷ তাই বলা যেতে পারে বনভূমি আজ মরুভূমিতে পরিণত৷ বন বনানী ঘেরা ত্রিপুরা যেন রিক্ত নিঃস্ব এক হতশ্রী ত্রিপুরাতে পরিণত হচ্ছে৷ ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে৷ বনের পশু পাখিরা হারাচ্ছে তাদের নিশ্চিত আবাস৷ ফলে ‘বন্যেরা বনে সুন্দর/শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ এ বিখ্যাত উক্তি আজ অন্তঃসারশূণ্য বলে মনে হচ্ছে৷ ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরার গর্ব ছিল বনজ সম্পদ৷ গর্ব ছিল বনের পশু পাখি৷ কিন্তু, আজ সব যেন স্মৃতি৷ বনদস্যুদের কবলে পড়ে বন আজ বিরানভূমিতে পরিণত৷ বনে দেখা দিল পশু পাখিদের তীব্র খাদ্য সংকট৷ বনের অভাবে অনেক পশু পাখি বিলুপ্ত প্রায়৷ আবার অনেক পশু পাখি বন ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে এসে আশ্রয় নিচ্ছে৷
অথচ রাজ্যে প্রতি বছর বনমহোৎসব ঘটা করে পালন করা হয়৷ বন দপ্তর এমন উৎসব পালনে অতি উৎসাহী৷ বিগত বছরগুলিতে দেখা গেছে বনমহোৎসব ঘিরে রাজ্যে দেদার টাকা উড়েছে৷ রাজ্যের নানা স্থানে গাছের চারা ঘটা করে রোপন করা হচ্ছে৷ চারা ক্রয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছে দুর্নীতি৷ হরির লুটের বাতাসার মত যেন টাকা উড়ছে৷ কিন্তু, বনের কোনও গতি হয়নি৷ বন ফিরে পায়নি তার রূপ যৌবন৷ বরং যেটুকু বনের গরিমা রয়েছে তাও নিঃশেষ হতে চলেছে৷ বনে লেগেছে যেন ত্র্যহস্পর্শ৷ একদিকে বসবাসের জন্য কাটা হচ্ছে গাছ৷ আর একদিকে আগুনের জন্য প্রয়োজন পড়ছে কাঠ৷ অন্যদিকে বন জুড়ে চলছে বনদস্যুদের দাপট৷ এমন দাপটের জন্য দায়ী বন দপ্তরের একাংশ ছোট বড় কর্মচারী৷ বন রক্ষার জন্য বন দপ্তর সৃষ্টি হলেও এ দপ্তরের সংশ্লিষ্ট বাবুরা নৈতিক দায়িত্বের চেয়ে অনৈতিক কাজে বেশি আগ্রহী৷ তাই নামে বন থাকলেও কাজে রয়েছে রুগ্ণ পাহাড়৷
এবারও বনমহোৎসব হবে৷ তবে এবার আয়োজনে থাকবে নতুন বিজেপি সরকার৷ নতুন সরকার হারিয়ে যাওয়া বনের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনবে বলে অনেকে আশাবাদী৷ আবার অনেকের মতে সরকার পাল্টালে কি হবে৷ লোকগুলিতো বাম জমানার৷ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে বনকে ছারখার করার কাজে ব্যস্ত ছিল৷ ফলে দীর্ঘ বছরের দুর্নীতির শেকড় এত সহসা কি উপড়ে ফেলা সম্ভব? কয়লা ধুলেও যেমন ময়লা যায় না তেমনই অনেকের স্বভাবেরও পরিবর্তন হয় না৷ তাইতো এদের জন্য প্রয়োজন কড়া ব্যবস্থার৷ নতুন সরকার পর্যটনের উপর জোর দিয়েছেন৷ এরাজ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে রয়েছে শুধুমাত্র বন বনানী৷ কিন্তু তাও হতশ্রী৷ রাজ্যের বিজেপি সরকার এমন হতশ্রী অবস্থা থেকে রূপশ্রীতে বনকে ফিরিয়ে আনতে পারলে পর্যটন আক্ষরিক অর্থে যে শিল্পের মর্যাদা পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *