BRAKING NEWS

কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
‘আমার সবেমাত্র বর্ত (ব্রত) হয়েছে৷ এখনো অন্নপ্রাশন হয়নি’৷ কথা শুনে হলভর্তি লোক হেসে উঠলো৷ হাসিতে ছড়িয়ে পড়ল আন্তরিকতার ছোঁয়া৷ বক্তাও মনভুলানো হাসি হেসে আবার বলতে শুরু করলেন- ‘আগে আমি কথা বলতে শিখি৷ তারপর আপনারা আমার কাজ নিয়ে কথা বলুন’৷ বক্তার কথা শুনে হল জুড়ে ফের হাসির রোল উঠলো৷ হলভর্তি লোক৷ মঞ্চে ডায়াসের সামনে সুদর্শন বক্তা৷ মুখে তার আন্তরিক হাসি৷ হলে চলে গুঞ্জন৷ তিনি তারিয়ে তারিয়ে তা উপভোগ করছেন৷ কিন্তু, সেই বর্ত (ব্রত) হওয়া সেই তিনি যে অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তাঁর ভাষণে তিনি সবেমাত্র আঁতুড় ঘর থেকে বের হয়েছেন৷ কিন্তু, এরই মাঝে তিনি তার জাত চিনিয়ে দিলেন৷ সেই তিনি হলেন রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ ১৮ এপ্রিল রাজ্যের একটি ইংরেজী পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল টাউন হলে৷ এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যেন বুঝিয়ে দিলেন যে, তিনি কতবর রেসের ঘোড়া৷ ভাষণের এক পর্য্যায়ে তিনি বলেন আজ (১৮ এপ্রিল) সকালে আমার এক সাংবাদিক বন্ধু আমাকে ফোন করেছিলেন৷ কেন ফোন করেছিলেন তা সবার সামনে বলা ঠিক হবে না৷ সেই সাংবাদিক বন্ধু দর্শকের সামনের সারিতে বসে আছে৷ ফোনে তিনি যা জানতে চেয়েছিলেন তার উত্তরে তাকে বলা হয়, ‘দেখুন আমি সংবিধান ছুঁয়ে শপথ করেছি৷ ৩৭ লক্ষ মানুষের আমি প্রতিনিধি৷ আমাকে তাদের জন্য কাজ করতে হবে৷ আমার কাজ আমাকে করতে দিন৷ অপনাদের কাজ আপনারা করুন৷ তবে তার অর্থ এ নয় যে, আপনার সাথে আমার বন্ধুত্ব নষ্ট হবে’৷
ইংরেজী পত্রিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সেই সাংবাদিক বন্ধুর কথা কেন টেনে আনলেন তা বোধগম্য হলো না৷ তবে তিনি যা বললেন তার রেশ ধরে বলা যেতে পারে যে, তিনি ওই সাংবাদিককে একটু যেন সমঝে চলেন৷ যেন বুঝিয়ে দিলেন বন্ধুত্ব কিংবা জানাশোনা এক আর কাজ আর এক৷ এ দুইটি বিষয় গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না৷ সেই সাথে মুখ্যমন্ত্রী যেন সেই সাংবাদিক বন্ধুর মাধ্যমে রাজ্যের এক শ্রেণির সাংবাদিককে কড়া বার্তা দিতেও ভুললেন না৷ কেননা, তিনি জানেন, মিডিয়ার গুরুত্ব কম নয়৷ তাইতো সাংবাদিকদের তিনি বারবার বলছেন যেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা এবং সরকারের ভুল হলে তাও ধরিয়ে দিতে বলেছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী শাসনভার হাতে নিয়েছেন মাত্র একমাস কয়েকদিন হল৷ এরই মাঝে তিনি যেন রাজ্যের একাংশ সাংবাদিককে বুঝিয়ে দিলে যে, তিনি অন্য ধাতুতে গড়া৷ তার আন্তরিক স্বভাবকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল ভাবা হবে৷ তবে মিডিয়া জগতের পোড় খাওয়া সাংবাদিকরা দেখছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীকে মুঠোয় আনার জন্য রাজ্যের একাংশ সুবিধাবাদী সাংবাদিক চেষ্টা করছেন৷ যখন রাজ্যের বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিলেন তখনও সেই সুবিধাবাদী সাংবাদিকরা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের গুণকীর্তনে সদা ব্যস্ত থাকতেন৷ প্রেস ক্লাবের কোনও অনুষ্ঠানে সেই সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিকবাবু এলে দেখা যেত যে, ওই সাংবাদিকদের গুরু দৌড়ে গিয়ে মানিক বাবুর গাড়ির দরজা খুলে নত হয়ে তাকে গাড়ি থেকে নামার জন্য আহ্বান করতেন৷ সেই মেরুদন্ড ভাঙা সাংবাদিক নাকি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব বাবুরও ঘাড়ে চাপতে চেয়েছিলেন৷ হয়তোবা তাই সবেমাত্র বর্ত হওয়া মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন যে, তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া৷ তার চলার গতি সোজা৷ পথের মাঝখানে যেন কেউ এসে বিঘ্ন সৃষ্টি না করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী আকারে ইঙ্গিতে যার উদ্দেশ্যে কথাগুলি বললেন তিনি ততক্ষণে দর্শকাসন ছেড়ে হলঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *