১৯-এর নির্বাচনে উত্তরপূর্বে ২৫-এর মধ্যে ২১-এর বেশি আসনে জয়ী হবে বিজেপি, প্রত্যয়ী অমিত

গুয়াহাটি, ২৪ মার্চ, (হি.স.) : আগামী লোকসভা নির্বাচনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২৫-এর মধ্যে ২১টি আসনে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হবেন। আজকের বুথ সভাপতি সম্মেলনে ভিড়ে ঠাসা সমাবেশ দেখে এই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। অসমের ২৫,৮৪৯টি বুথের সভাপতি, ৩০৩টি মণ্ডলের সভাপতি এবং ৩৮ জন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি-সহ প্রায় ৫০ হাজার বিজেপি কার্যকর্তার উপস্থিতিতে আজ শনিবার বিশাল সম্মেলনে উদাত্ত ভাষণ দিচ্ছিলেন অমিত শাহ।
দলীয় কার্যকর্তাদের তাতাতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, তিনি নিজেও রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে ১৯৩ নম্বর বুথের সভাপতি ছিলেন। একজন বুথ সভাপতি যে রাষ্ট্রীয় সভাপতি হতে পারেন এই দৃষ্টান্ত কেবল ভারতীয় জনতা পার্টিতে রয়েছে। সাধারণ কার্যকর্তাও হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গক্রমে তিনি কংগ্রেসের দৃষ্টান্তও টেনে এনে রাহুল গান্ধীকে ঠুকেছেন। এর পরই তিনি চলে যান কংগ্রেসের দশ বছরের শাসন এবং নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের প্রসঙ্গে। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিঙের নাম না-ধরে বলেন, অসম থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ টানা দশ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, ওই দশ বছরে অসমের উন্নয়নের নামে ৭৯ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রের গদিতে যেদিন বসেছেন, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র চার বছরে এক লক্ষ ২৯১ কোটি টাকা অসমের উন্নয়নের জন্য রিলিজ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বচ্ছ ভারত অভিযান, পরিবহণ, পর্যটন, অটল অমৃত যোজনা, স্বাস্থ্য, সড়ক যোগাযোগ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ইত্যাদি ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া নয় লক্ষ গরিব মহিলাকে উজ্বলা যোজনায় রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার, ২,৭৩২টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে রাজ্যের ৭০ শতাংশ জনসাধারণ মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন শাহ। বলেন, দেশের ক্ষমতায় এলে অসম-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিকাশে আত্মনিয়োগ করবেন বলে ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে এই অঞ্চলে এসে যে প্রতিশ্রুতি নরেন্দ্র মোদী দিয়েছিলেন তা তিনি রক্ষা করছেন। সত্যিই মোদী তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন কি না তা উপস্থিত কার্যকর্তাদের কাছে জানতে চান অমিত।
কেবল তা-ই নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মারাও নতুন নতুন প্রকল্প রূপায়ণ করে চলেছেন। বলেন, বিজেপি সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাস করে। সব-কা সাথ সব-কা বিকাশ মন্ত্র শিরোধার্য করে এগিয়ে চলেছে। এখানেই কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির পার্থক্য। কংগ্রেসের ওপর হামলা করতে ছাড়েননি তিনি। বলেন, কংগ্রেসের নীতি হল ভোগ করো রাজ করো। এঁদের স্বভাব নষ্ট, ‘নিয়ত গলত’। সিদ্ধান্তও গোলমেলে। তাই তো দেশের আজ এই হাল।
বলেন, গোপীনাথ বরদলৈ কিংবা মহাত্মা গান্ধীর মতো নেতা না-থাকলে অসমকে টুকরো করে দিতেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তিনিই বলেছিলেন ‘বাই বাই আসাম’। এটা কি একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোভা পায়? এরা দেশমাতৃকাকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। এরা বিভাজন নীতিতে বিশ্বাস করে এবং এখানেই বিজেপি-র সঙ্গে সংঘাত কংগ্রেসের। এ প্রসঙ্গে ডোকলামের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের বিষয় টেনে এনেছেন তিনি।
বিজেপি-র আদর্শতত্ত্বও উপস্থিত কার্যকর্তাদের শুনিয়েছেন অমিত শাহ। বলেন, অন্য দলগুলি ভোগসর্বস্ব দল। বিজেপি-র সঙ্গে পার্থক্য এখানেই। বিজেপির এক পৃথক বিচারধারা রয়েছে। এই দল কেবল রাজনীতিই করে না। রাজনীতির পাশাপাশি নীতি আদর্শ বজায় রেখে মানুষের অন্তরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এই দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী বা ক্ষমতা লাভের জন্য লালায়িত নন। বিজেপি-র প্রতিটি কার্যকর্তা নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও দশের কল্যাণে আত্মিয়োগ করেন। এর ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি একটি মিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
বিজেপি সভাপতি বলেন, ক্ষমতালিপ্সু কংগ্রেস দুর্নীতি আর ভ্রষ্টাচারে ডুবে গিয়ে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অমিত বলেন, মোদী যেমন সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের রোপণ করা দুর্নীতি ভ্রষ্টাচার নির্মূল করতে জিরো টলারেন্স স্থিতি গ্রহণ করেছেন তদ্রুপ অসমেও সর্বানন্দ সনোয়ালের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে বিগত সরকারের আমলে নিমজ্জিত দুর্নীতি উৎখাত হচ্ছে।
চলমান লোকসভা অধিবেশন রাহুল গান্ধীরা ইচ্ছে করেই চলতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি শাহ। বলেন, এঁরা এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চাইছে। অথচ বিজেপি তথা এনডিএ সরকার অনাস্থার জন্য প্রস্তুত, এ কথা বার বার বলা সত্ত্বেও এঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবে লোকসভার কার্যক্রমে বাধা দিয়ে চলেছে। লোকসভার একদিনের অধিবেশন বানচাল হওয়া মানে এই একদিনে কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে, তা জেনেও কংগ্রেসিরা এই পথে হাঁটতে দ্বিধা বোধ করছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিজেপি সংসদের বাইরে জনতার দরবারে নিয়ে যাবে বলে কংগ্রেসকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
শেষে ২৫,৮৪৯টি বুথের সভাপতি, ৩০৩টি মণ্ডলের সভাপতি এবং ৩৮ জন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি-সহ প্রায় ৩০ হাজার বিজেপি কার্যকর্তাকে উদ্দীপ্ত করে আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোসসভা নির্বাচনের জন্য জনতার দোরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অমিত শাহ। বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি-র আদর্শ ও কর্মকাণ্ডের বিবরণ নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর, শহরের মানুষের কাছে যেতে হবে। ঘরে ঘরে বিজেপির ঝাণ্ডা উড়াতে হবে। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে অসমের ১৪-সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২৫টি আসনের মধ্যে ২১-এর বেশি আসনে বিজেপি প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তিনি উপস্থিতদের সংকল্প গ্রহণ করিয়েছেন।
গুয়াহাটির খানাপাড়া পশু চিকিৎসা বিজ্ঞান ময়দানে অনুষ্ঠিত বুথ সভাপতি সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক রামলাল, রাম মাধব, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, দলের প্রদেশ সভাপতি রঞ্জিতকুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক দিলীপ শইকিয়া। বিশিষ্টদের মধ্যে ছিলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাংগঠনিক সম্পাদক অজয় জামুয়াল, দলের জাতীয় সম্পাদক তথা মঙ্গলদৈয়ের সাংসদ রমন ডেকা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা নগাঁওয়ের সাংসদ রাজেন গোহাঁই, নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (নেডা)-এর আহ্বায়ক তথা অসমের মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা, গুয়াহাটির সাংসদ বিজয়া চক্রবর্তী, মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, নবকুমার দলে প্রমুখ দলের সব সাংসদ-বিধায়ক এবং সর্বস্তরের কার্যকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *