BRAKING NEWS

রাজ্যে পালাবদলের সাথে সাথে দূর্গ ভাঙছে সিপিএমের, গণহারে ইস্তফা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/চড়িলাম/খোয়াই/কৈলাসহর,২২ মার্চ৷৷ রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে সিপিএমের দূর্গ একের পর এক ভাঙছে৷

চড়িলামের বিডিও’র কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বিশ্রামগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের নির্বাচিত আটজন জনপ্রতিনিধি৷ নিজস্ব ছবি৷

টানা পঁচিশ বছরের শাসনে গ্রাম পাহাড়ে বামেদের যে ভিত তৈরী হয়েছিল তা ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে৷ একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বামেদের৷ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রতিনিধিরা গণহারে ইস্তফা দিচ্ছেন৷  কৈলাসহর থেকে শুরু করে খোয়াই, বিশ্রামগঞ্জ দিকে দিকে পঞ্চায়েতগুলিতে গণহারে ইস্তফা দিচ্ছেন নির্বাচিত প্রধান, উপপ্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্য সদস্যারা৷ গ্রাম যে সিপিএমের সাংগঠনিক ভিত ছিল তা আজ রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথেই লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে৷

রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর পঞ্চায়েত গুলিতে চলছে পদত্যাগের হিড়িক৷ কেউ শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে, কেউ পারিবারিক সমস্যার কথা বলে কিংবা অন্য কোন কারণ দেখিয়ে পঞ্চায়েতগুলি থেকে পদত্যাগ করছেন৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্রামগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের বামফ্রন্ট সমর্থিত ১২ জন সদস্য সদস্যার মধ্যে ৮ জন সদস্য সদস্যা পদত্যাগ করেন৷ যার ফলে বিশ্রামগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হল বামেদের৷ এই ৮ জন সদস্য সদস্যা পদত্যাগ পত্র তুলে দেন চড়িলামের বিডিও বিকি সাহার কাছে৷ যারা বিডিও’র হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন তারা হলেন বিশ্রামগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমীর রঞ্জন দত্ত, উপ-প্রধান রানী বালা দেববর্মা৷ সেই সাথে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন পঞ্চায়েত সদস্য স্বর্ণকমল দে, রুহেল আলম, কৃষ্ণ দেবনাথ, নীলিমা দত্ত সদস্যা, স্বপ্ণা সরকার এবং সবিতা দত্ত৷ এরা সবাই ব্যক্তিগত সমস্যার কথা তুলে পদত্যাগ পত্র দেন৷ যার ফলে এখন থেকে বিশ্রামগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতটি বামেদের হাতছাড়া হয়েছে৷ তবে চড়িলাম ব্লকের মধ্যে আরও ১০টি ভিলেজ কমিটি এবং ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে৷ এখন দেখার বিষয় ঐ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কি পদক্ষেপ নেয়৷ সেই প্রশ্ণই আজ ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা চড়িলাম এলাকায়৷ এলাকাবাসীর বক্তব্য হল নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে আসছেন না৷ তাহলে উন্নয়ন মূলক কাজ কি করে হবে? অথচ ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন সরকার সময়ের কাজ সময়ে শেষ করা ও একটি স্বচ্ছ প্রশাসন জনগণকে উপহার দেওয়ার জন্য নানা কর্মসূচী গ্রহনের পথে হাটছে৷

দীর্ঘ ২৫ বছর বাদে রাজ্যে পালাবদল হয়েছে৷ বামফ্রন্টকে পরাস্ত করে বিজেপি তার জোট সঙ্গী আইপিএফটিকে নিয়ে রাজ্যের মসনদ দখল করেছে৷ ৩রা মার্চ এর পর থেকেই রাজ্যের তৎকালীন ক্ষমতাসীন সিপিআই(এম) এর দলীয় অফিস থেকে ইউনিয়ন অফিস অধিকাংশই দখল করে নিয়েছে বিজেপি-আইপিএফটি কর্মী-সমর্থকরা৷ পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন পঞ্চায়েত, এডিসি ভিলেজ কমিটি, পঞ্চায়েত সমিতি, জিলা পরিষদ ও পুর পরিষদ এর সদস্য-সদস্যাদের গণহারে পদত্যাগের পালা শুরু হয়েছে৷ নানান অজুহাতে গ্রাম ও শহরের সিপিআই(এম) পরিচালিত পঞ্চায়েত ও পুর পরিষদের সদস্য-সদস্যারা পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন৷

গত ১৭ ই মার্চ থেকে খোয়াই ব্লকের অধীন ২৫ টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৮টি পঞ্চায়েতের ১৪৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য-সদস্যা, প্রধান, উপপ্রধানরা পদত্যাগ করেছেন বলে জানালেন খোয়াই ব্লক সমিষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক পৃথ্বিরাজ দেবনাথ৷ বিডিওর কাছেই পদত্যাগ পত্র তুলে দেন তারা৷ এরমধ্যে পদত্যাগ করেছেন বাগান পঞ্চায়েতের ৮ জন, বারবিল ৭ জন, দক্ষিণ সিঙ্গিছড়া ৯ জন, ধলাবিল ৮ জন, গৌরনগর ৭ জন, জাম্বুরা ৫ জন, মধ্য গণকী ১০ জন, মধ্য সিঙ্গিছড়া ১ জন, পহরমুড়া ৯ জন, পশ্চিম গণকী ৯ জন, পশ্চিম সিঙ্গিছড়া ৯ জন, পশ্চিম সোনাতলা ১১ জন, সমতল পদ্মবিল ৯ জন, সিপাইহাওড় ৭ জন, সোনাতলা ৯ জন, উত্তর সিঙ্গিছড়া ৮ জন সহ মোট ১৪৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য-সদস্যা ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন৷ এছাড়া খোয়াই পুর পরিষদের ১, ৩ ও ১৩ নং আসনের কাউন্সিলাররাও পদত্যাগ করেছেন৷ পুর পরিষদের সিইও অভিজিৎ রিয়াংয়ের নিকট তারা পদত্যাগ পত্র তুলে দেন৷ এছাড়া খোয়াই পঞ্চায়েত সমিতির ৪ জন ও জিলা পরিষদের ১ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে জানালেন খোয়াইরে বিডিও পৃথ্বিরাজ দেবনাথ৷

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারিবারিক সমস্যাকে সামনে রেখে এই পদত্যাগ অব্যহত রয়েছে৷ যদিও কেউ কেউ বলছেন আগামী দিনে রাজ্যের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পঞ্চায়েত, এডিসি ভিলেজ কমিটিগুলির প্রধান, উপ-প্রধানরা এবং পঞ্চায়েত সমিতি, জিলা পরিষদ ও পুর পরিষদের সদস্য ও কাউন্সিলাররা পদত্যাগ করছেন বলে জানাচ্ছেন৷ তবে কাগজে – পত্রে পারিবারিক সমস্যাকেই তুলে ধরে পদত্যাগ করছেন তারা৷

কৈলাসহর মহকুমার চন্ডিপুর ব্লকের ডিসি নগর গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিআইএম দলের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা৷ পঞ্চায়েতের বিজেপি দলের তিন সদস্য ও সিপিআইএম দলের পাঁচজন সদস্য একত্রিত ভাবে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন৷ মোট বার সদস্য বিশিষ্ট বিসি নগর গ্রাম পঞ্চায়েত এখন হাতছাড়া হয়ে যাবে তা মাত্র সময়ের অপেক্ষা৷ আট জন সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে জেলা পঞ্চায়েত অধিকারীকের নিকট সাক্ষরকৃত অনাস্থা পত্র জমা দেওয়া হয়৷ আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ রাজ্যে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআইএম দলের সদস্যের দলত্যাগ ও পদত্যাগের যে হিড়িক পড়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্বেই বর্তমান শাসক দলের অনুকূলে অনেক পঞ্চায়েত চলে আসবে৷ চন্ডিপুর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও গ্রাম পঞ্চায়েতের আরও অনেক সদস্য পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে৷ প্রয়াত সিপিএম নেতা  বৈদ্যনাথ মজুমদারের গড়া এই ব্লক এলাকাটিতে কংগ্রেস কোনদিন সম্মান জনক পরাজয় হাসিল করতে পারেনি৷ কিন্তু আজ পালাবদল হতেই শুরু হল একের পর এক পদত্যাগের হিড়িক৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *