চলো পাল্টাই’র পরিণতিই সন্ত্রাসে বিধবস্ত রাজ্য, জানাল ক্ষুব্ধ সিপিএম

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ মার্চ৷৷ নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস নিয়ে ভিষণ ক্ষুব্ধ সিপিএম৷ তাই, দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর কটাক্ষ করে বলেন,

সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ ছবি নিজস্ব৷

চলো পাল্টাই’র পরিণতি কি হতে পারে এখন তা পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, রাজ্যে এখন এক অস্থির পরিস্থিতি কায়েম হয়ে রয়েছে৷ নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসে সাত শতাধিক সিপিএম কর্মী সমর্থক এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাই, বিজনবাবু এটাকে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণ আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বলেন, আজ দলের রাজ্য কমিটির বর্দ্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তাতে, মহকুমা কমিটিগুলির কাছ থেকে বিজেপি-আইপিএফটি’র আশ্রিত দুসৃকতিকারীদের দ্বারা হামলার তথ্য মিলেছে৷ বিজনবাবুর কথায়, নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা নেই৷ বিভিন্ন পার্টি অফিসগুলিতে লুটপাঠ, দখল, অগ্ণিসংযোগ এবং তালা লাগানো হচ্ছে৷ একইভাবে ট্রেড ইউনিয়নের অফিসগুলিতেও লুটপাঠ এবং দখল নেওয়া চলছে৷  সাথে যোগ করেন, মিথ্যা অভিযোগ এনে সিপিএম পার্টি অফিসে এবং ট্রেড ইউনিয়নের অফিসে পুলিশী অভিযান চালানো হচ্ছে৷ তিনি উদ্বেগের সুরে বলেন, দলের কর্মী, সমর্থকদের বাড়িঘরে লুটপাঠ এবং আগুন লাগানোর ঘটনায় তাঁরা ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ তাঁর দাবি, সিপিএম সমর্থকদের রাবার বাগান হয় পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, নয়তোবা দখল নিয়ে নিচ্ছে৷ পুকুর কিংবা লেকে বিষ ফেলা হচ্ছে৷ গরু, বাছুর চুরি করে নিচ্ছে৷ এমনকি, কৃষি জমির ফসলও দখল নিয়ে দিচ্ছে দুসৃকতিকারীরা৷

বিজনবাবু এদিন উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, পার্টি সমর্থকদের ব্যাপকহারে দৈহিক নির্যাতন করা হচ্ছে৷ অনেকের কাছ থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা জবরদস্তি আদায় করা হচ্ছে৷ তাঁর দাবি, বিজেপি-আইপিএফটি’র কর্মীরা নানা অজুহাতে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বলপূর্বক আদায় করছেন৷ সাথে যোগ করেন, বিভিন্ন বাগানে পাম্প অপারেটর, মিড-ডে-মিলের ওয়ার্কারদের কাজে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷ তাঁর কথায়, জোর জবরদস্তি তাঁদের বাড়ি পাঠানো হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, নগর পঞ্চায়েত সহ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর চাপ সৃষ্টি করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷

বিজনবাবুর মতে, রাজ্যে অস্থির পরিস্থিতি কায়েম হয়ে রয়েছে৷ তাঁর কথায়, প্রত্যান্ত এলাকায় বাজারে মানুষ যেতে পারছেন না৷ দোকানপাট বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ অটো শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে পারছেন না৷ সবদিক দিয়ে একপ্রকার অবরোধ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে৷ তিনি এই পরিস্থিতিকে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণ আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ তাঁর কটাক্ষ, চলো পাল্টাই’র পরিণতি কি হতে পারে এখন তা পরিলক্ষিত হচ্ছে৷

এদিকে, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করা সম্ভব হয়নি বলেন জানিয়েছেন বিজন ধর৷ অবশ্য এরজন্যও তিনি নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসকেই দায়ি করেছেন৷ তাঁর দাবি, সিপিএমের মহকুমা এবং লোক্যাল কমিটিগুলি নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনায় বসতেই পারছে না৷ কারণ, তাঁরা সন্ত্রাসে বিধবস্ত৷ তাঁর বক্তব্য, সন্ত্রাসের সমস্ত ঘটনায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না৷ কিছু মামলা হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু, অধিকতর ক্ষেত্রে পুলিশ শুধু অভিযোগ শুনছে, কোন মামলা নথিভুক্ত করছে না৷

বিজনবাবু এদিন আবারও বলেন, অশুভ শক্তির হাতে রাজ্যের ক্ষমতা গেলে পরিনাম কি হতে পারে তা মানুষ এখন বুঝতে পারছেন৷ তাঁর কথায়, নির্বাচনে জিতলেই অশুভ শুভ হয়ে যায় না৷ নাম না করে এদিন বিজন ধর যে বিজেপি-আইপিএফটিকেই বিঁধেছেন, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *