BRAKING NEWS

অব্যবস্থায় বিধবস্ত জিবি হাসপাতাল দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী, এক মাসে হাল ফেরাতে নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ মার্চ৷৷ অব্যবস্থায় বিধবস্ত জিবি হাসপাতাল ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন৷

বৃহস্পতিবার আগরতলায় জি বি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন৷ ছবি নিজস্ব৷

পরিকাঠামো নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী একমাসের মধ্যে জিবি হাসপাতালের হাল ফেরাতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই নির্দেশ পালন করা না হলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা৷

রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরাতে হলে প্রথমেই জিবি হাসপাতালের অব্যবস্থা কাঁটিয়ে তুলতে হবে৷ এই উপলব্ধিতে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন সপার্ষদ জিবি হাসপাতাল ঘুরে দেখেছেন৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরম অব্যবস্থা ফঁুটে উঠেছে৷ পরিকাঠামো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী৷ জিবি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে প্রথমেই ইর্র্মজেন্সি ব্লকে জান মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ গত দুই বছরে কত সংখ্যক রোগ চিকিৎসার জন্য বহিঃরাজ্যে  রেফার করা হয়েছে এর তালিকা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ জেলা এবং মহকুমা স্তরের হাসপাতাল গুলি থেকে কত রোগী জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এর তালিকাও তাঁরা হাসপাতাল সুপারের কাছে চেয়েছেন৷ তাঁদের কথায়, সামান্য জটিলতা হলেই জেলা ও মহকুমাস্তরের হাসপাতাল থেকে জিবি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা৷ শুধু তাই নয়, জিবি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ব্লকেও রোগী আসা মাত্রই সঠিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই ভর্তি নেওয়া হচ্ছে৷ এই সমস্ত কারণে জিবি হাসপাতালের রোগীর চাপ মারাত্মক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে৷ এই পদ্ধতি শুধরাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী৷ কি কারণে সামান্য জটিলতা হলেই জেলা ও মহকুমাস্তরের হাসপাতাল গুলি থেকে রোগীদের জিবি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সামান্য অসুস্থ রোগীদের প্রয়োজন না হলে জিবি হাসপাতালে ভর্তি না করে তাদেরকে ইমার্জেন্সি ব্লকেই সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে চার থেকে পাচ ঘণ্টার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলে ছুটি দিয়ে দিতে পারলে হাসপাতালের রোগীদের ভীড় কিছুটা হলেও লাঘব হবে৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী শীঘ্রই ইমার্জেন্সি ব্লকে সিসি টিভি বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি জিবি হাসপাতাল সুপার ডাঃ সুব্রত বৈদ্যকে চিকিৎসকদের রোস্টার মেনে কাজ করা সুনিশ্চিত করতে বলেছেন৷

এরপর মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছেন৷ রোগীদের সাথে কথা বলেছেন৷ হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে রোগী ও তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে মতামত নিয়েছেন৷ সার্জিক্যাল ওয়ার্ড পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেডশিটের অভাবের জন্য অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ হাসপাতালের বেডে পরিষ্কার বেডশিট কেন নেই তার কারণ তাঁরা মেডিক্যাল সুপারের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন৷ জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন৷

এদিকে, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী হতবাক হয়ে যান৷ এই ইউনিটে বাতানুকূল যন্ত্রটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, এই ইউনিটের  দেওয়ালের পলেস্তার খসে পড়ছে৷ এই সমস্ত অব্যবস্থা দেখে মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একহাত নিয়েছেন৷ বার্ন ইউনিটটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য পূর্ত দফতর সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন৷ পাশাপাশি বার্ন ইউনিটটি অন্য কোথাও স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন৷ এরপর মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালের ক্যান্টিন ও রান্নাঘর পরিদর্শন করেছেন৷ সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রান্নাঘরে এদিন রাধুনিরা বিধিসম্মত পোষাক পরিধান করেই ছিলেন৷ কিন্তু এই ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে তা বুঝেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখেই কাজ করতে হবে৷ অব্যবস্থা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না৷

এরপর মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী মেডিসিন ব্লকের মেল মেডিসিন ওয়ার্ড সহ অন্যান্য ওয়ার্ডে যান৷ সেখানেও চরম অব্যবস্থা তাঁদের নজরে আসে৷ বিশেষ করে শৌচালয়গুলির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজার রাখার ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন৷ এছাড়াও  বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুশিয়ারি, একমাসের মধ্যে সমস্ত অব্যবস্থা কাঁটিয়ে তুলতে হবে৷ জিবির হাসপাতালের হাল একমাসের মধ্যেই ফেরাতে হবে৷ এই নির্দেশ পালন না করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আইসিইউ পরিদর্শন করেছেন এবং চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও রোগীদের পরিবার পরিজনদের সাথে কথা বলেছেন৷ সেখানে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় মুখ্যমন্ত্রী এই হাসপাতালের উন্নতিকল্পে আরও ভালো কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলেন যাতে করে জনগণকে সর্বোত্তম পরিষেবা প্রদান করা যায়৷ এক্ষেত্রে অর্থের কোনও অভাব হবে না৷

আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূদীপ রায় বর্মন স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিকল্পে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, বহিঃরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে করে এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার আরও উন্নতি হয়৷ তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বনেল, বিগত সাড়ে তিন বছরে শুধুমাত্র রেফার কেইস এ ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে৷ এরপর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের বিভিন্ন সবিধা অসুবিধার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন৷ তাদের অসুবিধাগুলি দ্রুত সুরাহার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকন নির্দেশ দেন৷ এরপর তিনি জিবি বাজারে গিয়ে কয়েকটি মেডিসিন দোকানে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ওষুধ প্রদানের বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ খবর নেন৷ এখানে তিনি এই কার্ডের মাধ্যমে সুবিধাভোগী ও দোকানী কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন যাতে করে এই কর্মসূচি রূপায়ণে কোনও অসুবিধা না হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *